ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আবার ফুটবলে ফিরলেন সুইনু প্রু

প্রকাশিত: ০০:১৬, ১৯ জুন ২০২০

আবার ফুটবলে ফিরলেন সুইনু প্রু

রুমেল খান ॥ ‘সুইনু প্রু মারমামহিলা ফুটবল ও মহিলা ফুটবলারদের সঙ্গে কাজ করবে, এটা আমাদের জন্য অনেক ভাল হলো। সে নিজেও একসময় ভাল ফুটবলার ছিল, তার সেই অভিজ্ঞতা আমাদের ক্যাম্পের নারী ফুটবলারদের অনেক কাজে আসবে।’ জনকণ্ঠকে কথাগুলো জানান বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। হেড অব উইমেনস ফুটবল উইংস হিসেবে গত ১ এপ্রিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) চাকরি পেয়েছেন সাবেক জাতীয় নারী ফুটবলার সুইনু প্রু মারমা। বাফুফেতে যোগ দিয়েই অবশ্য কাজ করতে পারেননি তিনি। কারণ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। ফলে এখন গাজীপুরে স্বামী-সন্তান নিয়ে দিনাতিপাত করছেন বাংলাদেশ আনসারের এই মিডফিল্ডার। বাফুফের একটি সূত্রে জানা গেছে, আপাতত এক বছরের চুক্তিতে সুইনু কাজ করবেন। তবে পারফর্মেন্স ভাল হলে প্রতিবছরই চাকরির মেয়াদ এক বছর করে বাড়িয়ে দেবে বাফুফে। মূলত বাফুফের মহিলা ফুটবলের প্রশাসনমূলক কার্যকমগুলো পরিচালনা করবেন তিনি। যেমন : ট্রেনিং এ্যারেজমেন্ট, ট্রেনিং সিডিউল মেনটেন, সবকিছুর সমন্বয় ইত্যাদি। সুইনু বলেন, ‘একসময় জাতীয় দলে খেলেছি। এখন সেই দলের সঙ্গেই কাজ করব। তখন কাজ ছিল মাঠে, এখন মাঠের বাইরে। ফুটবলের জন্য কাজ করতে এবং ফুটবলের সঙ্গে থাকার ইচ্ছে থেকেই এ দায়িত্ব নিয়েছি। এটা আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। আশা করি, সবার সহযোগিতা নিয়ে নতুন এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারব।’ সুইনু পাহাড়ী কন্যা। হতে চেয়েছিলেন স্কুলশিক্ষিকা। হঠাৎই স্বপ্নটা পাল্টে যায় ২০০৪ সালে। বড় বোনের হাত ধরে ঢাকায় চলে আসা আনসারের একটি ক্যাম্পে। সেখানে বাছাইয়ের পর ফুটবলে মনোনীত হওয়া। অথচ ক্যাম্পে আসার আগে কোনদিন পায়ে বুট পরারই অভিজ্ঞতা ছিল না! ২৯ বছ বয়সী সুইনু বাফুফের তালিকাভুক্ত মহিলা ফুটবল কোচ হওয়ার প্রক্রিয়াতেও আছেন বেশ ভালভাবেই। ‘বি’ কোচিং ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন। এর আগে করেছেন ‘সি’ লাইসেন্স কোচিং কোর্স। যদিও এখনও খেলোয়াড় হিসেবে ফুটবল থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর নেননি। তবে ২০১৫ সাল থেকে ফুটবল খেলছেন না। কারণ তার কন্যা সন্তান হয়েছে (নাম আসফিয়া বিনতে সাজ্জাদ, স্বামী আরচারি কোচ সাজ্জাদ হোসেন)। ২০০৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এএফসির একটি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ অ-১৭ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে অভিষেক হয়েছিল সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার সুইনুর। বয়সভিত্তিক এবং সিনিয়র দল মিলে তার মোট আন্তর্জাতিক গোল ৪০টিরও বেশি। প্রিয় ও আদর্শ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তার অধীনে টানা সাত বছর (২০০৮-১৫) জাতীয় দলে খেলেছেন রাঙ্গামাটির প্রত্যন্ত গ্রাম কাউখালিতে ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নেয়া সুইনু। তিন বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে সুইনু মেজ। ছোট বোন মাইনু প্রু মারমাও জাতীয় ফুটবল দলে একসময় খেলেছেন। তিনিও এখন মা হয়ে যাওয়ায় ফুটবল থেকে আপাতত নির্বাসনে। সুইনুর আদর্শ ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো এবং মামুনুল ইসলাম। ক্লাব পর্যায়ে সুইনু খেলেছেন দুই খ্যাতনামা দল আবাহনী এবং মোহামেডানে। খেলেছেন আনসারেও। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক ক্যাম্পে অংশ নেয়ার পর সুইনু ফুটবলকেই বেছে নেন নিজের লক্ষ্য হিসেবে। জাতীয় সিনিয়র দলে ২০০৮-১১ পর্যন্ত সহ-অধিনায়কত্ব এবং ২০১২-১৫ পর্যন্ত অধিনায়কত্ব করেছেন সুইনু। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে তা¤্রপদকজয়ী বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। এখন দেখার বিষয়, নতুন ভূমিকায় কতটা সফল হন সুইনু। ২০০৫ থেকে টানা ৯ বছর নারী ফুটবল দলের মাঝমাঠের চালিকা শক্তি ছিলেন রাঙ্গামাটির কাউখালির সুইনু ও মাইনু। তাদের মধ্যে বড় সুইনু নতুন ভূমিকা নিয়ে আবার ফিরেছেন জাতীয় দলের সঙ্গে। ২০১৪ সালে জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়ার পরই সংসার জীবন শুরু করেন সুইনু প্রু মারমা। বিয়ে করেছেন ক্রীড়াঙ্গনেরই পরিচিত মুখ আরচারি কোচ মোঃ সাজ্জাদ হোসেনকে। বছর পাঁচেক আগে কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন সুইনু। কন্যা আসফিয়া বিনতে সাজ্জাদকে নিয়েই করোনাকালের সময়টা পার করছেন এই ক্রীড়াবিদ দম্পতি।
×