ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সচল শাহজালাল

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ১৯ জুন ২০২০

সচল শাহজালাল

দীর্ঘদিন পর আবার সচল হলো ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। একটানা ৮৮ দিন বন্ধ ছিল শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরও। অবশ্য সমগ্র বিশ্বের প্রায় বিমানবন্দরগুলোই এক রকম লকডাউনে ছিল ভয়াবহ করোনা তান্ডবে। নিতান্ত জরুরী প্রয়োজন, যেমন- চিকিৎসাসামগ্রী ও সামরিক প্রয়োজন ব্যতিরেকে এ সময়ে ব্যবহার হতে পারেনি প্রায় কোন বিমানবন্দরই। ফলে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী চলাচল এবং পণ্য পরিবহনসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল বন্ধ। এর ফলে পর্যটন ব্যবসায়ও নেমেছে ধস। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও বিশ্বের বিমান সংস্থা ও বন্দরগুলো কবে নাগাদ করোনাজনিত এই সমূহ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে তা নিশ্চিত করে বলা অসম্ভব। মনে রাখতে হবে যে, করোনা তা-ব শেষ হয়নি এখনও। সেক্ষেত্রে বিমানসহ যানবাহন এবং মানুষের যাতায়াতের সুযোগ প্রায় অবারিত করে দেয়া হলেও সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ বিমান অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুই সিটে একজন বসার জন্য সঙ্গত কারণেই ভাড়া বাড়াতে হয়েছে বিমানকে। সে তুলনায় যাত্রীর সংখ্যাও কম থাকায় অচিরেই তা বন্ধ করে দেয়া হয়। মঙ্গলবার মধ্যরাতে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানের উড্ডয়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শাহজালালের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। অবশ্য যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন ট্রানজিট। যাত্রীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মানা হয়েছে বলেও স্বীকার করেছে বেবিচক কর্তৃপক্ষ। আগামী ২১ জুন থেকে ঢাকা-লন্ডন রুটে প্রথম চলবে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট। ফলে স্বভাবতই ঢাকা বিমানবন্দরের ব্যস্ততা বাড়বে। তবে আশঙ্কা থাকবে করোনা সংক্রমণের। সুরক্ষার নিমিত্ত প্রত্যেক যাত্রীকে অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে ‘করোনা নেগেটিভ’ সনদ অবশ্যই দেখাতে হবে। তবে দুঃখজনক হলো করোনা সনদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতোমধ্যেই। ইতোপূর্বে ঢাকা বিমানবন্দরের তিনটি থার্মাল স্ক্যানারের দুটিই অকেজো ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। নবপর্যায়ে সচল শাহজালাল বিমানবন্দরে আর যেন অনুরূপ অভিযোগ না ওঠে তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তা না হলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে বাংলাদেশের। উল্লেখ্য, শাহজালাল বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কাজ চলছে জোরেশোরে। তবে এর সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল এবং বিমানের ৫ম ও ষষ্ঠ ড্রিমলাইনারের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন নিরাপত্তাসহ নিয়ম মানার ওপর। বলতেই হবে, যে কোন দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ধরে রাখার অন্যতম শর্ত নিরাপত্তা। এক্ষেত্রে আমাদের অনেকের প্রায়ই অনীহা, এমনকি শৈথিল্য লক্ষ্য করা যায়, যা কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই। সম্প্রতি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে একাধিক নিরাপত্তাজনিত ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়েছে। নিছক খেলনা পিস্তল নিয়ে ছিনতাই করে দুবাইগামী বিমান ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার খবরও আছে। একাধিক ভিআইপিসহ সংসদ সদস্যকে পর্যন্ত রিভলবার নিয়ে বিমানে উঠে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে, যা তিনি রিপোর্টও করেননি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে। অবাধে পার হয়ে গেছেন সর্বাধুনিক স্ক্যানারসহ নিরাপত্তা চৌকি। এর বাইরেও প্রায় নিয়মিত সোনা ও মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা পাচারের ঘটনাও ঘটেছে, যা প্রকারান্তরে দেশের বিমানবন্দরগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। করোনাকালেও কিছু অনিয়ম হয়েছে বিমানবন্দরে, যা কাক্সিক্ষত নয়। এই প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নিয়ম তা সে যত কঠিন ও কঠোরই হোক না কেন মানতে হবে সবাইকে। বিদেশের বিমানবন্দরগুলোতে যেভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, ঠিক সেভাবেই করা হবে দেশে এবং তা বাধ্যতামূলকভাবে মানতে হবে সবাইকে। এখানে ক্ষমতার দাপট দেখালে চলবে না। যদি কেউ তা অমান্য করেন তাহলে তার বিমানে চড়া বন্ধ হয়ে যাবে। করোনা মহামারীর সঙ্কটেও যেন স্বাস্থ্যবিধিসহ সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষা করা হয় শাহজালাল বিমানবন্দরে তা নিশ্চিত করতে হবে বেবিচককে।
×