ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আয়ান আব্রাজ

তারুণ্যে আলো, তারুণ্যেই আশা

প্রকাশিত: ২১:২৫, ১৭ জুন ২০২০

তারুণ্যে আলো, তারুণ্যেই আশা

বিশ্ব টেনিসে মেয়েদের আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হয়। টেনিস কোর্টের পারফর্মেন্স যেমন তেমনি এখানে বিবেচনা করা হয় গ্ল্যামারকেও। রূপ-সৌন্দর্য-গুণে কিংবা কোর্টের পারফর্মেন্সে, আপনি যেভাবেই বলেন না কেন? গত দুই দশক ধরেই দেখা গেছে সেরেনা উইলিয়ামস, মারিয়া শারাপোভা, ভেনাস উইলিয়ামস, ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা, পেত্রা কেভিতোভা কিংবা আনা ইভানোভিচ ও ক্যারোলিন ওজনিয়াকিদের দাপট। তবে তাদের আলো ধীরে ধীরে নিভতে শুরু করেছে। ইভানোভিচ-ওজনিয়াকি আর শারাপোভারা ইতোমধ্যেই বিদায় বলে দিয়েছেন টেনিসকে। ভেনাস-আজারেঙ্কা ও কেভিতোভারা তো কোর্টের লড়াইয়ে এখন নিজেদেরই ছায়া। আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস লড়াইটা চালিয়ে গেলেও বয়সের ভারে আর সেই আগের মতো নিজেকে কোর্টে মেলে ধরতে পারছেন না। যে কারণেই বিশ্ব টেনিসে এখন তরুণীরাই হয়ে উঠছেন ভরসার প্রতীক। একটু ঘাটাঘাটি করলেই তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। খুব অল্প বয়সেই চমকপ্রদ কিছু পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে অনেকেই নিজেদের নিয়ে এসেছেন বিশ্ব টেনিসের পাদপ্রদীপের আলোয়। এই তালিকায় জেলেনা ওস্টাপেঙ্কো, স্লোয়ানে স্টিফেন্স, নাওমি ওসাকা, এ্যাশলে বার্টি, বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু এবং সোফিয়া কেনিনের নাম সবার উপরে। কেননা, সর্বশেষ ১২ গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের সাতটিতেই যে মেজর শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তারা! তবে একটা জায়গায় এসব তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের ঘাটতি লক্ষ্যণীয়। তাদের অনেকেই শুরুর পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। ২০১৭ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের বাজিমাত করেছিলেন জেলেনা ওস্টাপেঙ্কো। অসাধারণ খেলেই রোঁলা গ্যাঁরোর শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিলেন তিনি। পরের বছরেই বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচে উঠে এসেছিলেন লাটভিয়ার এই তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়। কিন্তু পারফর্মেন্সের সেই ধারা আর ধরে রাখতে পারেননি এই তরুণী। যে কারণে বর্তমানে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ চল্লিশেও জায়গা নেই তার। তারপরও বয়স মাত্র ২৩। তাই এখনও আশায় বুক বাঁধেন তিনটি শিরোপার মালিক। একই বছরে ইউএস ওপেনে চমকে দিয়েছিলেন স্লোয়ানে স্টিফেন্সও। অল আমেরিকান ফাইনালে মেডিসন কিসকে ৬-৩, ৬-০ গেমে উড়িয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেন তিনি। পায়ের গুরুতর ইনজুরি কাটিয়ে সে বছরের উইম্বলডন দিয়েই কোর্টে ফিরেছিলেন। ছয় সপ্তাহ আগেও যার র‌্যাঙ্ক ছিল ৯৫৭। অথচ বাজিমাত করেন ইউএস ওপেন জিতে। উন্মুক্ত যুগে অবাছাই হয়েও কোন গ্র্যান্ডস্লাম জেতা পঞ্চম নারী তিনি। ভেঙ্গে দেন উইলিয়ামস সিস্টারদের আধিপত্যও। ১৫ বছর পর এই দুই বোন ছাড়া গ্র্যান্ডস্লাম জিতেন কোন মার্কিন নারী। গত দুই মৌসুমে দেখা যায় কয়েকজন তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের চমক। গত বছরের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হন নাওমি ওসাকা। জাপানের এই তরুণীর চমকপ্রদ পারফর্মেন্সের শুরুটা ছিল ২০১৯ সালে। ইউএস ওপেনের শিরোপা জিতে গোটা টেনিস দুনিয়াকেই চমকে দেন তিনি। তাও আবার টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামসকে পরাজিত করে। এরপর নতুন মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্র্রেলিয়ান ওপেনেও বাজিমাত করেন তিনি। ফাইনালে পেত্রা কেভিতোভাকে পরাজিত করে টানা দুই গ্র্যান্ডস্লামের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন নাওমি ওসাকা। সেই সঙ্গে গড়েন নতুন ইতিহাস। জাপানের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা দুটি মেজর শিরোপা জয়ের নজির গড়েন তিনি। পাশাপাশি এশিয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও দখল করেন ওসাকা। তবে ইউএস ওপেন ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জয়ী ওসাকার পরের সময়টা কিন্তু মোটেও সুখকর ছিল না তার। ওসাকার পর দেখা যায় এ্যাশলে বার্টির চমক। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৫ নম্বরে থেকে নতুন মৌসুম শুরু করেছিলেন তিনি। তার পরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে চলার। টেনিস কোর্টে এই বছরটা দুর্দান্ত খেলেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম প্রিমিয়ার ম্যানডেটরি শিরোপা, স্বপ্নের গ্র্যান্ডস্লাম ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়, বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল। ডব্লিউটিএ ফাইনালসেও বাজিমাত করেছেন অস্ট্রেলিয়ান টেনিসের এই প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়। দারুণভাবে রাঙিয়ে নিলেন মৌসুমের শেষটা। দুর্দান্ত খেলেই গত বছরের শেষ টুর্নামেন্ট ডব্লিউটিএ ফাইনালসের শিরোপা জিতলেন তিনি। সেইসঙ্গে ইতিহাসে জায়গা করে নেন বার্টি। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ডব্লিউটিএ ফাইনালসের শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়েন তিনি। তার আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন ইভোন গোলাগং কাউলি। ১৯৭৪ সালে প্রথম এই আসরের শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। ১৯৭৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ডব্লিউটিএ ফাইনালসের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন গোলাগং কাউলি। শুধু তাই নয়, ইতিহাসের মাত্র পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক আসরেই ডব্লিউটিএ ফাইনালসের চ্যাম্পিয়ন হলেন এই অস্ট্রেলিয়ান তরুণী। ওসাকা-বার্টির পর টেনিসপ্রেমীদের মন জয় করা খেলোয়াড়ের নাম বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু। কানাডার ইতিহাসই বদলে দেন যিনি। অথচ, এক বছর আগে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ২০০ জনের তালিকাতেও ছিল না তার নাম। পারফর্মেন্সেও ছিল না তেমন ধার। কিন্তু হঠাৎ করেই কানাডার আকাশে ঝলমলিয়ে ওঠা এক দ্বীপ্তমান তারকা হয়ে উঠেন। নিজের দেশের হয়ে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ইউএস ওপেনের ট্রফি উঁচিয়ে ধরার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু। তাও আবার বিশ্ব টেনিসের মহাতারকা সেরেনা উইলিয়ামসের বিপক্ষে জিতে। চলতি বছরে দেখা গেছে সোফিয়া কেনিনের চমক। গারবিন মুগুরুজাকে হারিয়ে বিশ্ব টেনিসের পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসেন এই আমেরিকান টেনিসের প্রতিভাবান খেলোয়াড়। যে কারণেই এসকল তরুণ খেলোয়াড়দের দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছেন বিশ্ব টেনিসের ভক্ত-অুনরাগীরা।
×