ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ মিরাজ

ইংল্যান্ডের কাছে প্রতিদানে কিছুই চায় না পাকিস্তান

প্রকাশিত: ২১:২৪, ১৭ জুন ২০২০

ইংল্যান্ডের কাছে প্রতিদানে কিছুই চায় না পাকিস্তান

কী এক অদ্ভুত সমস্যা! আর্থিক সুবিধা পেয়ে ইংল্যান্ড সফর করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ- এমন অভিযোগের রেশ না কাটতেই এবার পাকিস্তানের বিপক্ষেও একই অভিযোগ!! অথচ ঘরের মাটিতে এবারের গ্রীষ্মে একের পর এক সিরিজের পরিকল্পনাটা ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি)। করোনার কঠিন এই সময়ে ঠিকমতো খেলাটা চালিয়ে যেতে পারলে বড় লাভ তো তাদেরই। ইসিবির বিরুদ্ধে অতিথিদের গিনিপিগ বানানোর বদনাম রটে দিচ্ছে নিন্দুকেরা। ৮ জুলাই সাউদাম্পটনে প্রথম টেস্ট দিয়ে শুরু ইংল্যান্ড-উইন্ডিজ তিন টেস্টের দ্বৈরথ। এরপর জুলই-আগস্টে ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট এবং টি২০ খেলবে পাকিস্তান। চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে ইতোমধ্যে দল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচক ও প্রধান কোচ মিসবাহ উল হক। সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক স্পষ্ট জানিয়েছেন, কিছুর লোভে ইংল্যান্ডে যাচ্ছেন না তারা। মিসবাহ বলেন, ‘এসব আমাদের মনের মধ্যে নেই যে ইসিবি এই সফরের বিনিময়ে আমাদের জন্য কিছু করবে। যেখানেই হোক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করা আমাদের জন্য জরুরী ছিল। খেলোয়াড়দের মাঠে ফেরাতে হতো। এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ পাকিস্তান কোচ অবশ্য ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থের কথা শুনিয়েছেন, ‘বড় বিষয় হলো এটা আমরা এই সফরে বিনিময়ে কিছু চাইনি। কিন্তু শুধু ইসিবির কাছেই নয়, এটা সব ক্রিকেট জাতির কাছেই চাওয়া যে একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। যাতে করে ক্রিকেট খেলাটা আরও এগিয়ে যেতে পারে।’ করোনাাভাইরাসের কারণে সফরকারী পাকিস্তানকে বায়ো-সুরক্ষাসহ সকল ধরনের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিবে ইংল্যান্ড, ‘বর্তমান পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে এই সফরে আলাদা-আলাদা নিরাপত্তা থাকবে। এটি খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের জন্য কঠিন হবে, কিন্তু আমাদের এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।’ যোগ করেন মিসবাহ। ২৯ জন খেলোয়াড়ের সঙ্গে সফরে যাবে ১৪ জন অফিসিয়াল। দলে ১০জন পেসার ও চারজন স্পিনার আছে। আইসিসির নতুন নিয়মে বলে থুথুু ব্যবহার করা যাবে না। এই পরিস্থিতির সঙ্গে বোলারদের মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে বলে মনে করেন মিসবাহ,‘আমরা আমাদের সেরাটাই নির্বাচন করেছি এবং আমি জানি, ২৯ জনের স্কোয়াড অনেক বড়। এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য সহজ নয়। এ ছাড়া আমরা তিন মাস ধরে খেলার মধ্যে নেই। দীর্ঘদিন ধরে খেলোয়াড়রা মাঠের বাইরে, আমি সেটিও বিবেচনা করছি এবং মাঠে ফেরার জন্য তারা উদগ্রীব হয়ে আছে। বাছাই করার জন্য আমাদের ভাল স্কোয়াড আছে এবং ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে আমরা ভাল করতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এবং ডাক্তার সোহাইল সেলিম সফরের ব্যাপারে প্রত্যক খেলোয়াড়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং প্রত্যেকেই পরিস্থিতির সম্পর্কে অবগত আছে। সফর চলাকালীন করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ বা হালকা লক্ষণও দেখা দিলে, আমরা খেলোয়াড়দের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করেছি। চার সপ্তাহ আইসোলেশনে থাকার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকা, ফাঁকা স্টেডিয়ামে খেলা ও মাঠে সব ধরনের সুরক্ষা মেনে চলার জন্য মানিয়ে নিতে হবে তাদের।’ ওদিকে আলোচিত এই সফর সামনে রেখে বেশ আগেভাগেই ২৯ সদস্যের বিশাল দল ঘোষণা করেছেন মিসবাহর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) নির্বাচক কমিটি। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে তিন টেস্ট ও সমান ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রস্তুতির জন্য আপাতত একটাই দল বেছে নেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ানোয় স্কোয়াডে নেই মোহাম্মদ আমির ও হারিস সোহেল। তবে ফেরানো হয়েছে অভিজ্ঞ ওয়াহাব রিয়াজ ও সাবেক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদকে। বিশ্বকাপের পর আচমকাই টেস্ট থেকে অবসর নেন আমির। আর অনির্দিষ্টকালের জন্য টেস্ট থেকে ‘স্বেচ্ছা বিশ্রামের’ ঘোষণা দেন আরেক বাহাতি তারকা পেসার ওয়াহাব। তাদের ওই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয় পিসিবি। ফলে মাঝে কয়েকটা সিরিজে ছোট্ট ফরমেটের ক্রিকেটেও বাদ পড়েন দু’জনে। ইংল্যান্ডে ওয়াহাবের রেকর্ড দুর্দান্ত। তার ওপর ফের টেস্ট খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ইংল্যান্ডে ওয়াহাব-শোয়েব মালিক-সরফরাজদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে বলে মনে করেন কোচ মিসবাহ উল হকও। এছাড়া প্রাথমিক দলে চমক খুঁজতে গেলে হায়দার আলির নাম বলতে হবে। অনূর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে দ্যুতি ছড়ানো তরুণ প্রথমারের মতো ঢাক পেয়েছেন জাতীয় দলে। এছাড়া ৩৬ বছর বয়সী পেসার সোহেল খানকেও রাখা হয়েছে। দলে ৪ ওপেনার, ৯ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, ২ উইকেটরক্ষক, ১০ পেসার ও ৪ জন স্পিনারকে রাখা হয়েছে। ২৯ ক্রিকেটারের সঙ্গে ১৪ জন স্টাফের নামও জানিয়েছে পিসিবি। আগস্ট- সেপ্টেম্বরে সিরিজ হলেও পাকিস্তান দলের ইংল্যান্ডে যাওয়ার কথা জুলাইয়ের শেষে। সেখানে গিয়ে মাঠে নামার আগে বাধ্যতামূলক কোয়ারেনটাইনে থাকতে হবে পাকিস্তানীদের। পাকিস্তানের প্রাথমিক দল ॥ আজহার আলি (টেস্ট অধিনায়ক), আবিদ আলি, ফখরুজামান, ইমাম উল-হক, শান মাসুদ, বাবর আজম (টেস্ট সহ-অধিনায়ক, টি২০ অধিনায়ক), আসাদ শফিক, ফাওয়াদ আলম, হায়দার আলি, ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সরফরাজ আহমেদ, ফাহিম আশরাফ, হারিস রউফ, ইমরান খান, মোহাম্মদ আব্বাস, মোহাম্মদ হাসনাইন, নাসিম শাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, সোহেল খান, উসমান শিনওয়ারি, ওয়াহাব রিয়াজ, ইমাদ ওয়াসিম, কাশিফ ভাট্টি, শাদাব খান এবং ইয়াসির শাহ।
×