ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গারা এবার চায় ইন্টারনেট সংযোগ উদ্দেশ্য তথ্য পাচার

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ১৬ জুন ২০২০

রোহিঙ্গারা এবার চায় ইন্টারনেট সংযোগ উদ্দেশ্য তথ্য পাচার

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সচেতনতা সৃষ্টিকল্পে আশ্রয় শিবিরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ পর্যন্ত ৩৮ রোহিঙ্গা করোনা আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে তিনজন। এরপরও রোহিঙ্গারা করোনাকে ভয় না করে তারা চাইছে মোবাইল সংযোগ ও ফোর-জি নেটওয়ার্ক। সরকার ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক চালু করে দিয়েছে। এখন চাইছে রোহিঙ্গারা মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ। ক্যাম্প অভ্যন্তরে কিছু রোহিঙ্গা নেতা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মিয়ানমারের এমপিটি নেটওয়ার্ক দিয়ে থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবা নিচ্ছে। রবিবার সন্ধ্যায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (উখিয়া সার্কেল) নেতৃত্বে পুলিশ দল অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ৪০টি মিয়ানমারের এমপিটি সিম কার্ড জব্দ করেছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় এমটিপি সিম কার্ড জব্দ করেছিল পুলিশ। রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে এমপিটি সিম কার্ডগুলো এনে তাদের বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করছে বহির্বিশ্বে। জানা গেছে, রোহিঙ্গারা মোবাইল নেটওয়ার্ক ৩জি-৪জি সংযোগ পাওয়ার লক্ষ্যে শিবির অভ্যন্তরে পৃথকভাবে ইতোপূর্বে একাধিক এনজিও’র সঙ্গে পরামর্শ করেছে। করোনাভাইরাসের বাহানা ধরে ফের ক্যাম্পে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক নিতে তদ্বির চালাচ্ছে তারা। সূত্র মতে ক্যাম্প অভ্যন্তরে ৪জি নেটওয়ার্ক না থাকায় বড় বেকায়দায় পড়েছে সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এর আগে ইন্টারনেটে ম্যাসেজের মাধ্যমে শীর্ষ ডাকাত সর্দাররা অপরাধ জগতে ব্যাপক তৎপর হয়ে উঠেছিল। উদ্বাস্তু হয়েও আশ্রয় শিবিরে বেআইনীভাবে মহাসমাবেশ, অস্ত্র চালানো, ক্যারাতে-কম্পু ও জঙ্গী প্রশিক্ষণ এবং একাধিক খুন-খারাবিসহ বহু অপরাধ সংগঠিত করেছে। ফোর-জি ব্যবহারে যোগাযোগ রক্ষা করে মিয়ানমার থেকে অহরহ স্বর্ণ ও ইয়াবার চালান ক্যাম্পে প্রবেশ করিয়েছে তারা। পথিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ইতোপূর্বে একাধিক চালান জব্দও হয়েছে। ধরা পড়েছে ইয়াবা বহনকারী বহু রোহিঙ্গা। মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে একাধিক খুনের ঘটনাও ঘটেছে। অভিজ্ঞ মহল বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারে, এ ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে সুযোগ পেলে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের মধ্যে ফের খুনখারাবি বেড়ে যেতে পারে। ইতোপূর্বে ক্যাম্পে নেটওয়ার্কের গতি কমিয়ে দেয়ায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ইন্টারনেট ব্যবহার ও যোগাযোগ করতে পারেনি বিদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সঙ্গে। এর আগে মোবাইল নেটওয়ার্ক গতি উচ্চমানের (৩-জি ৪-জি) হওয়ায় রোহিঙ্গারা মোবাইলের সাহায্যে ক্যাম্প অভ্যন্তরে বহু অপরাধ সংগঠিত করেছে। ইন্টারনেটে বহু গোপন তথ্য ফাঁস করেছে বহির্বিশ্বে। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ৩জি ও ৪জি নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ করে দেয়। উল্লেখ্য, বিটিআরসি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ৩জি ও ৪জি নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ করে দিলে রোহিঙ্গারা এক প্রকারে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মিয়ানমারের মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক ব্যবহার শুরু করেছে। বিজিবি’র কড়া প্রতিবাদে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে বিস্তৃত ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে দেয় মিয়ানমার মোবাইল কোম্পানি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে জব্দ হয় ওপারের হাজারো সিম। অথচ আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন অনুসারে উদ্বাস্তুরা আশ্রিত দেশের মোবাইল ব্যবহার করতে পারে না। এমনকি ওই দেশের মুদ্রাও রাখতে পারে না। তারা ভিন্ন দেশের নাগরিক, শরণার্থী হিসেবে জীবনযাপন করবে। কিন্তু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে বিলাসী জীবনযাপন করছে। মোবাইল ফোনে জঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্থানীয় ব্যক্তিকেও খুন করতে দ্বিধা করেনি তারা। শরণার্থী আইন মতে অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা আশ্রয় শিবিরে দিব্যি ব্যবসা বাণিজ্যও করে চলেছে। মাসিক, সপ্তাহিক ও দৈনিক বেতনে অবৈধভাবে চাকরি করছে বিভিন্ন এনজিওতে। একাধিক এনজিও রোহিঙ্গাদের স্থায়ী করতে এসব অবৈধ কাজ কর্মে ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
×