ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এমএ কাদের

করোনায় প্রবীণদের পাশে থাকা দরকার

প্রকাশিত: ২১:০৯, ১৬ জুন ২০২০

করোনায় প্রবীণদের পাশে থাকা দরকার

মানুষের গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সালে বিশ্বে প্রবীণদের সংখ্যা ছিল ৫০ কোটি। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১০ কোটিতে। ২০৩০ সালে এর সংখ্যা হবে ১৫০ কোটি এবং ২০৫০ সালে প্রবীণদের সংখ্যা ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমান বাংলাদেশে প্রবীণদের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এর প্রায় ৫০ লাখ প্রবীণ অসুস্থ, অসহায়, অবহেলিত, নিঃসঙ্গ ও সেবাহীন জীবন যাপন করছেন। যাদের কারোরই করোনার ধাক্কা সামলানোর মতো শারীরিক মানসিক বা অর্থনৈতিক সামর্থ্য নেই। মহামারী করোনার আক্রান্তের মৃত্যুর হার প্রবীণদেরই বেশি। WorldOMeters এর তথ্য মতে, পৃথিবীর মোট মৃত্যুর প্রায় শতকরা ৭০ ভাগই প্রবীণ। এই দুঃসময়ে তাদের জীবন বাঁচানোর দায়িত্ব নেবে কে? প্রবীণ সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে একসময় শিশুর চেয়ে প্রবীণের সংখ্যাই হবে বেশি। এ সময় পরিচর্যাহীন বার্ধক্যই দেশের একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমান সমাজে সবচেয়ে অবহেলার শিকার এখন অসহায় প্রবীণরাই। কিন্তু ক্রমবর্ধমান বার্ধক্যের অসহায়ত্ব মোকাবেলা করার মতো দরকারী প্রস্তুতি আমাদের নেই। ভবিষ্যতে করোনার মতো বিপর্যয় এলে তার জন্য প্রবীণদের উন্নয়ন প্রয়োজন। এখন থেকেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মসূচী বাস্তবায়নে সরকারী নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। অসহায় প্রবীণদের কল্যাণের বিষয়ে এখনই আমাদের উদ্যোগী হওয়া জরুরী। কেননা বার্ধক্য হচ্ছে মানুষের অবধারিত সমস্যা। আজকের নবীনই আগামী দিনের প্রবীণ। তাই শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রবীণদের দেখভাল করতে হবে। আর এখন থেকেই নিজেদের স্বস্তিময় বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিতে হবে। দয়া দাক্ষিণ্য বা করুণার দৃষ্টিতে নয়, মানবাধিকারের ভিত্তিতে এবং প্রাপ্য মর্যাদার যুক্তিতে প্রবীণদের চাওয়া-পাওয়া সমাধান করা প্রয়োজন। এর জন্য দরকার গণসচেতনতা। আর এই গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রবীণদের অবহেলা, অযত্ন, দুর্ব্যবহার, নির্যাতনের ঘটনা এবং সবার করণীয় বিষয়গুলো সব শিক্ষা পাঠ্য সূচিতে এবং গণমাধ্যম কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে প্রবীণদের প্রতি কিছুটা হলেও সম্মান প্রদর্শন করা হবে। যে প্রবীণ যৌবনে তার মেধা, মনন, দক্ষতা দিয়ে সমাজের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন, জীবনের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের মানুষ করেছেন, মানব কল্যাণে অবদান রেখেছেন, বৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই মানুষটি অযত্ন অবহেলার আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। আপাতদৃষ্টিতে সমাজের বা সরকারের ন্যূনতম দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায় না। শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত ও সুন্দর জীবন গড়ার জন্য পিতা-মাতা ও সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে, অনুরূপ ভাবে প্রবীণদের জন্য সন্তান, সমাজ ও সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রবীণদের এই অসহায় দুর্দশা এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এর সমাধান না করলে প্রত্যেককেই বৃদ্ধ বয়সে এই অবহেলা ও কষ্টের স্বাদ নিতে হবে। লেখক : লেখক ও কলামিস্ট [email protected]
×