ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কৃষিতে বরাদ্দ-ভর্তুকি

প্রকাশিত: ২০:০৯, ১৬ জুন ২০২০

কৃষিতে বরাদ্দ-ভর্তুকি

করোনাভাইরাসের আগ্রাসী দাপটে বিশ্বসহ বাংলাদেশের প্রতিদিনের জীবন এক অসহনীয় অবস্থায় স্বাস্থ্য আর প্রাণঝুঁকির আশঙ্কা ছাড়াও বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় খাতেও পড়েছে এক অবর্ণনীয় সঙ্কট। উৎপাদনের অর্থনীতিতেও এসেছে মহাদুর্যোগ। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রত্যেক মানুষের সমন্বয়ে জীবন ও জীবিকাকে সচল এবং গতিশীল রাখার এতদিনের নিয়মে এসেছে ব্যত্যয়। সর্বমানবের সহযোগে দেশে সামগ্রিক যে ব্যবস্থাপনা সেখানেও দেখা দেয় এক অনাবশ্যক দুর্ভোগ। কারণ সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সর্বমানুষের মিলনে গড়ে তোলা হচ্ছে প্রাচীর। সামাজিক দূরত্ব তো বটেই, ব্যক্তিক বিচ্ছিন্নতাকেও সমধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে করোনা সংক্রমণ রোধে। প্রতিষেধক কিংবা নিরাময়ের যথার্থ ওষুধের অভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্দশায় পড়ে যাচ্ছে দেশের আনুষঙ্গিক উৎপাদনের খাতগুলো। কৃষি শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব বিষয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে করোনার সংক্রমণে। তবে অন্যান্য সূচকের তুলনায় কৃষি অর্থনীতি ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতি থেকে নিরাপদ দূরত্বে ছিল এমন কথা নিঃসংশয়ে বলা যেতে পারে। কারণ গত তিন মাসের আপদকালীন সময়ে খাদ্যপণ্যের অবাধ সরবরাহে বেঁচে থাকার এই খাতটিতে কোন ঘাটতি দৃশ্যমান হয়নি। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের চাহিদা মোতাবেক সঙ্কটও দেখা যায়নি। বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসিই শুধু নয়, ঘরেও ফসল তোলার আনন্দ যোগ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা দুর্যোগকে সামলাতে শুধু যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়েছেন তা নয়, তার চেয়েও বেশি কৃষকের উৎপাদিত পণ্যকে সুরক্ষা দিতেও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে দেরি করেননি। বাংলাদেশ এমনিতেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সেটা যাতে মানুষের দ্বারে দুর্যোগকালীন সময়ে পৌঁছাতে পারে তেমন ব্যবস্থাপনায় সার্বক্ষণিক নজরদারি করেছেন। সঙ্গত কারণে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়েনি। কৃষকও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়নি। সবশেষে করোনা দুর্যোগে দুর্ভিক্ষের কোন হাতছানিও দৃশ্যমান হয়নি। যা পৃথিবীর অন্য অনেক দেশকে নাজেহাল অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা তা আশঙ্কাও করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পন্ন করেছে আগামী অর্থবছরের বাজেট। নতুন বরাদ্দে কৃষি এবং ভর্তুকিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সামনে যাতে কোন সঙ্কট দেখা দিতে না পারে তেমন লক্ষ্যমাত্রায় কৃষিকে যথেষ্ট পরিমাণ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রান্তের সময়ে মানুষকে খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে কৃষি। আগামীতে এই কৃষিই জনগণের সার্বিক আশা-আকাক্সক্ষাকে জিইয়ে রেখে চাহিদা মোতাবেক খাদ্যপণ্য সরবরাহে নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হবে। ফলে কৃষি খাতে বাজেট বরাদ্দ ছাড়া ভর্তুকিতেও সমান গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কৃষিযন্ত্রের দাম কমার সম্ভাবনাও থাকবে। কৃষি খাতের আনুষঙ্গিক বরাদ্দ-ভর্তুকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যথাস্থানে যথাসময়ে চলে যাওয়ারও আশ্বাসও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কৃষি খাতকে ১৫ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা বেশি। গতিশীল এই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বলয়টি তার নিরন্তর যাত্রাপথে নিরবচ্ছিন্নভাবে জনগণের পাশে থাকবে- এমন প্রত্যাশা সকলের।
×