ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রবাসীদের অর্জন

প্রকাশিত: ২০:০৭, ১৫ জুন ২০২০

প্রবাসীদের অর্জন

দেশে ও বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর এই দুঃসময়েও বাংলাদেশের জন্য এক পরম প্রাপ্তি ও গৌরব বয়ে এনেছেন প্রবাসীরা। এবার অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ বিলিয়ন ডলার। করোনাভাইরাসজনিত সঙ্কটে যখন দেশে-বিদেশে অর্থনীতির চাকা প্রায় স্থবির, আমদানি-রফতানি ঠেকেছে তলানিতে এবং পোশাক ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি রয়েছে রীতিমতো হুমকিতে তখন এর চেয়ে আশা জাগানিয়া খবর আর কি হতে পারে? বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১০ জুন পর্যন্ত এক হাজার ৭০৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার (১৭.৪ বিলিয়ন) রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি। আরও যা উল্লেখযোগ্য তা হলো, প্রধানত এই প্রবাসী আয়ের ওপর ভিত্তি করে এবার বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভও প্রথমবারের মতো দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাপী মন্দা পরিস্থিতিসহ জাতীয় অর্থনীতিও যখন ঝুঁকির মুখে তখন সরকারসহ জনসাধারণের মুখে নিঃসন্দেহে ব্যাপক প্রত্যাশার আলো জ্বালিয়েছে প্রবাসী আয়। এক্ষেত্রে অবশ্য সরকারের গত বছর থেকে প্রবাসী আয়ে নগদ ২ শতাংশ হারে প্রণোদনাও উৎসাহ জুগিয়েছে বৈকি। সদ্য ঘোষিত জাতীয় বাজেটেও এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এতে বৈধপথে অর্থ প্রেরণের পরিমাণ বেড়েছে এবং অবৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে হয়রানিসহ বর্ধিত ব্যয় হচ্ছে না। করোনা মহমারীর কারণে বিপন্ন অর্থনীতিসহ তেলের দাম একেবারে কমে যাওয়ায় বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপদে রয়েছেন প্রবাসীরা। করোনা আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকেই হয়েছেন চাকরিচ্যুত। তবু প্রবাসী বাংলাদেশীদের এই বহু কষ্টার্জিত অর্থের পরিমাণ অন্তত আগামী ঈদ-উল-আযহা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়। করোনা সঙ্কটের আপৎকালীন অন্যতম বিদেশী মুদ্রা উপার্জনকারী খাত পোশাক শিল্প যখন সমূহ হুমকিতে তখন দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য নিঃসন্দেহে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক শ্রম সংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে জানা যায়, বিশ্বের ১৬৯টি দেশে অন্তত এক কোটি ২০ লাখের মতো বাংলাদেশী রয়েছে। যাদের অধিকাংশই শ্রমিক। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশে। তেলের দামে ধস নামায় বর্তমানে অধিকাংশই হয়ে পড়েছেন বেকার তথা চাকরিচ্যুত। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অন্তত ২৯ হাজার শ্রমিক দেশে ফিরে আসতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে অন্তত সাত শতাধিক বাংলাদেশী মৃত্যুবরণ করেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। সেক্ষেত্রে তাদের অসহায় পরিবার ও স্বজনদের দুঃখ-কষ্ট-দুর্ভোগ সহজেই অনুমেয়। প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের আসন্ন সঙ্কট-সমস্যার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অবশ্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্তত প্রবাসীদের কল্যাণে দু’শ’ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন, যা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিলের বাইরে। এর পাশাপাশি বিদেশ ফেরতদের স্বকর্মসংস্থানের জন্য সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে। তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে কোন জামানত লাগবে না। তদুপরি দেয়া হবে কৃষি খামার, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালন, সেলাই মেশিনসহ আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রশিক্ষণ। তবে এ নিয়ে যেন কোন নয়ছয় তথা দুর্নীতি-অনিয়ম না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে।
×