ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় নাজুক পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ০০:১২, ১৪ জুন ২০২০

চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় নাজুক পরিস্থিতি

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অবস্থা কেবলই নাজুক থেকে নাজুকতর অবস্থানে যাচ্ছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে। আবার এরমধ্যে অনেকে মারা যাচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় এ ভাইরাসের সংক্রমণে একজন এক ডাক্তারসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৮৭৪ নমুনা পরীক্ষায় ২২২ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ সেখ ফজলে রাব্বি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। করোনা রোগের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নাগিরক ফোরামের উদ্যোগে প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন হয়েছে। এদিকে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১৬২ মহানগরের, ৬০ জন বিভিন্ন উপজেলার। করোনা আক্রান্ত হয়ে চমেক, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কোথাও আইসিইউ সুবিধা লাগবে এমন রোগীদের জন্য সিট মিলছে না। গুরুতর রোগীদের ভর্তি করানো হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন পর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ১২টি স্পটে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বটে, কিন্তু মূল চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অপ্রতুলতা রয়ে গেছে। মূলত, চমেক, জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতালে ৩০টি আইসিইউর কার্যক্রম চালু রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চমেকের ১০টি আইসিইউর মধ্যে সচল রয়েছে ৫টি। এছাড়া চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বেসরকারী উদ্যোগে যে ভাসমান হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে সেখানে আইসোলেশনে থেকে বহু রোগী সুস্থ হয়ে উঠছে। কিন্তু আইসিইউ সুবিধা নেই। বর্তমান সময়ে করোনা রোগে আক্রান্ত হয়ে অধিকাংশ রোগী শ্বাসকষ্টজনিত কারণে এবং কেউ কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। শ্বাসকষ্টের রোগীদের চিকিৎসার প্রথমে অক্সিজেন সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হলে তখন আইসিইউ বেডে নেয়া হয়। সেখানে কেউ কেউ সুস্থ হচ্ছেন, আবার কেউ মৃত্যুবরণ করছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এক হাসপাতালের দুয়ার থেকে অন্য হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হতে পারছেন না। এভাবে হাসপাতাল-ক্লিনিকে ঘোরাঘুরি করতে করতে ইতোমধ্যে কেউ কেউ পথেই প্রাণ হারিয়েছেন। এসব ঘটনা নগরীর সাধারণ মানুষের মনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে। অপরদিকে, প্রাণ রক্ষার অন্যতম অনুষঙ্গ অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা যে অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার নিরসনও সম্ভব হয়নি এখনও। ৫ থেকে ৬ গুণ দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। এ জাতীয় সিলিন্ডারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার মিটারটিও বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিনগুণ দামে। বিত্তবানরা এ জাতীয় অক্সিজেন সিলিন্ডার মিটারসহ কিনে বাস ভবনে থেকে নিজেদের চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছেন। এতে অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন। আবার কেউ কেউ মারাও যাচ্ছেন। আইসিইউ সুবিধার একটি সিট পাওয়ার জন্য এখন প্রভাবশালী বিভিন্ন মহলের সুপারিশ যাচ্ছে প্রতিনিয়ত হাসপাতালগুলোতে। এ ধরনের সুপারিশ যাচ্ছে চমেক, জেনারেল হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতালে। এসব হাসপাতালের প্রতিটি আইসিইউ বেড রোগীতে পূর্ণ হয়ে আছে। সুতরাং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলেও প্রভাবশালীদের অনুরোধ রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছেন। অনেকে এ জাতীয় সিট পাওয়ার জন্য সিরিয়াল দিয়ে রেখেছেন মৌখিকভাবে। করোনা রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সরকার পক্ষে বেসরকারী হাসপাতালগুলোকে যে নির্দেশনা প্রদান করেছে বাস্তবিক অর্থেই তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। কিছু হাসপাতাল বলে দিয়েছে তাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। কিছু হাসপাতাল বলেছে তাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, টেকনেশিয়ান ও নার্স নেই। কিছু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিচ্ছে তারা কোভিড নন কোভিড রোগী আলাদাভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না। সরকারের চাপ এবং রোগীর আত্মীয়স্বজনের অতি বাড়াবাড়ির কারণে কিছু হাসপাতালে কোভিড, নন কোভিড রোগী চিকিৎসা দিতে বাধ্য হয়েছে। এতে করে সাধারণ রোগীদেরই ক্ষতি হচ্ছে। হৃদরোগ, কিডনি রোগ, শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তাদের করার কিছুই নেই। এ ধরনের বক্তব্য এসেছে বেসরকারী হাসপাতালগুলো থেকে। ইতোমধ্যে সরকার পক্ষে গত শুক্রবার থেকে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে কি হচ্ছে না বিষয়টি তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। কিন্তু এ কমিটির তদন্তে বেসরকারী হাসপাতালগুলো যে প্রকৃতপক্ষে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে না তা বেরিয়ে আসে। প্রশাসনের হুঁশিয়ারি সিটি মেয়রের নানা ধরনের হুমকি ধমকি কোন কিছুই কাজে আসছে না। একের পর প্রাণহানি ঘটেই চলেছে। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা পেশার লোকজনকেও বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ না দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাতে করোনা উপসর্গ নিয়ে ডাঃ আরিফ হাসান নামের এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে চমেক হাসপাতালে। তিনি চমেকের ৪৯তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। গত সাতদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। করোনার সব ধরনের উপসর্গ ছিল তার। তবে কি কারণে টেস্ট করা হয়নি তা জানা যায়নি। মৃত্যুর আগে তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যায়। এ অবস্থায় চমেক হাসপাতালে নেয়ার পর আইসিইউ সাপোর্ট দেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। এর আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডাঃ মুহিত হাসান ও এহসানুল করিম। আইসোলেশন সেন্টার কর্মীদের স্থায়ীকরণে অগ্রাধিকার দেয়া হবে ॥ এদিকে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন শনিবার চসিকের আন্দরকিল্লাস্থ পুরাতন কার্যালয়ে শিক্ষা স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় বলেছেন, নগরীর হালিশহরের সিটি কনভেনশন হলে ২৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মীদের চাকরি স্থায়ীকরণে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ওই আইসোলেশন সেন্টারে চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের ১৬ চিকিৎসক, ৫ নার্স, ১৪ ল্যাব টেকনিশিয়ান, প্যারামেডিক, ফার্মাসিস্ট, ১১ স্বাস্থ্যকর্মী ও ৬ নমুনা বুথ কর্মীর সঙ্গে মেয়র মতবিনিময় করেন। পতেঙ্গায় চালু হচ্ছে করোনা হাসপাতাল ॥ করোনায় চিকিৎসায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় চালু হচ্ছে বন্দর ইপিজেড পতেঙ্গা করোনা হাসপাতাল। ইতোমধ্যে এ হাসপাতালের বহির্বিভাগ উদ্বোধন করা হয়েছে। অস্থায়ীভাবে হাসপাতালটি হচ্ছে কাঠগড় মোড়ে পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
×