ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিমলায় লকডাউনেও পুরনো চিত্র

প্রকাশিত: ০০:০৪, ১৪ জুন ২০২০

ডিমলায় লকডাউনেও পুরনো চিত্র

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ডিমলা উপজেলা শহরের প্রধান বাবুরহাট এলাকার বেশ কিছু ব্যবসায়ী করোনা পজিটিভে আক্রান্ত হওয়ায় পুরো বাবুরহাট লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার সকাল হতে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও শনিবার সকাল থেকে দেখা যায় সেই পুরনো চিত্র। অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাবুরহাটে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অর্থলোভী ব্যবসায়ীরা বর্ষার আগমনে প্রকাশ্যে বিক্রি শুরু করেছে এই কারেন্ট জাল। এই জাল ক্রয়ে জেলেরাও ভিড় করছে দোকানে দোকানে। উপজেলার সদর বাবুরহাট বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, ৫/৬ জন জাল ব্যবসায়ী অভিনব কায়দায় বিক্রি করছেন নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল। একজন জাল বিক্রেতা জানালেন, আমি শুধু না দীর্ঘদিন ধরেই এ ব্যবসা করে আসছে সবাই। জাল কিভাবে বিক্রি করেন? জবাবে তিনি বলেন, জাল বিক্রি হয় বিভিন্ন হিসাবে যেমন খুচরা-পাইকারি। বর্তমানে এক বান্ডিলের জালের সর্বনিম্ন দাম ১২শ’ টাকা। জালের মান বুঝে বিক্রি হয় বেশি টাকায়। একজন ক্রেতা জানালেন, এক বান্ডিল জাল কিনতে লাগছে প্রায় ১৪শ’ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বাবুরহাটি, খোড়ারডাঙ্গা হাট, খগারহাট, টুনিরহাট, শুটিবাড়ীর হাট, চাপানীর হাটেও বিক্রি হচ্ছে এ জাল। বেচাকেনা থেমে নেই ছোট-বড় আরও অনেক বাজারেও। এদিকে, বর্ষার আগমনে এলাকায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। ফলে বিভিন্ন জলাশয়ে বিলগুলোতে প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল পাতছেন মাছ শিকারিরা। এতে ধরা পড়ছে দেশী প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের মাছ। কার্প জাতীয় মাছের পোনাও ধরা পড়ছে। তিস্তা নদীর খালিশাচাপানীর ডালিয়া এলাকার এক জেলে বলেন, বাদাই জাল দিয়ে মাছ ধরা হয় রাতের শেষ ভাগে। আর কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা হয় দিনের আলোতে। কারেন্ট জালে আটকা পড়া মাছ বেশি সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে। বাজারে তাজা মাছের চাহিদা বেশি। সচেতন মহল বলছে, এই কারেন্ট জাল দিয়ে এলাকার বিভিন্ন বিল বা জলাশয়ে ডিমওয়ালা মাছ নিধনে এক শ্রেণীর অর্থলোভী মানুষেরা মেতে উঠেছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামীমা আক্তার এ ব্যাপারে জানান, মহামারী নোভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর সংক্রমণ এড়াতে বাজারগুলোতে মনিটরিং করা সম্ভব হয়নি এখনও। তবে এর আগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও বিল থেকে বিপুল পরিমাণের কারেন্ট ও বাদাই জাল আটক করে জরিমানা করে আটককৃত জালগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এবারও খুব তাড়াতাড়ি কারেন্ট ও বাদাই জাল আটকের অভিযান করা হবে। ডিমলা উপজেলা কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা প্রশাসন বাবুরহাটসহ আশপাশের এলাকা লকডাউন ঘোষণা করে। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জয়শ্রী রানী রায় লকডাউনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত তিনদিনে ডিমলা উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে ২৭ জন। মোট আক্রান্ত ৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে উপজেলার সদরের বাবুরহাট, কাউশা বাজার, পোস্ট অফিস মোড়, মেডিক্যাল মোড়সহ আশাপাশের ওষুধ ও কাঁচামাল ছাড়া সকল দোকাটপাট বন্ধ করে লকডাউনের আদেশও ঘোষণা করা হয়। বাবুরহাট এলাকা লকডাউন করা হলেও শনিবার দেখা গেছে সেই পুরনো চিত্র। করোনা সংক্রামণের ঝুঁকি জেনেও রাস্তায় বের হচ্ছেন মানুষ। ওষুধ ও কাঁচাবাজার ব্যতীত এই মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় অন্যান্য দোকান খোলা রাখতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কেউ মানছে না লকডাউন। মুদি দোকান, ইলেক্ট্রনিক, কসমেটিক্স, হার্ডওয়্যার, কাপড় ও মুঠোফোনসহ অন্য ব্যবসায়ীরাও খুলেছে দোকান। দোকানের কাছে দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতা নিশ্চিত করে তবেই ভেতরে ঢুকিয়ে পণ্য বিক্রি করছেন তারা। পাশাপাশি দোকানের কাছে দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতা পণ্য কিনছে। দক্ষিণ তিতপাড়ার মুদি ব্যবসায়ী আইউব আলী (৫০) বাবুরহাটে তার মালামালের দোকানে বসেই করোনা পজিটিভ হয়। তিনিসহ কিছু ওষুধের দোকানের মালিকও করোনা পজিটিভ হয়েছে। যেহেতু উপজেলা শহরের প্রধান এলাকা বাবুরহাটের ওপরেই করোনা পজিটিভ। সেহেতু তা লকডাউন ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না প্রশাসনে। কিন্তু দেখা গেছে লকডাউনের ভেতরে করোনা পজিটিভ আইউব আলীর ছেলে ঝাপতুলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করে বিকিকিনি করতে। দূর হতে ছবি তোলার সময় দেখা যায় এক নারী ওই মুদি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ভোগ্যপণ্য ক্রয় করছে।
×