ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে নারী নির্যাতন

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ১৪ জুন ২০২০

করোনাকালে নারী নির্যাতন

করোনার মহাবিপর্যয়ে সিংহভাগ মানুষ ঘরে আটকা পড়ে অবকাশ জীবনযাপন করছে। কর্মক্ষম ও নিরোগ মানুষ করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে গৃহবাসী হতে বাধ্য হয়েছে। ফলে এখন পরিবারের সকল সদস্যই এক সঙ্গে মিলেমিশে সময় অতিবাহিত করছে। আপাতদৃষ্টিতে তা মনে হলেও এর বিপরীত চিত্রও দৃশ্যমান হচ্ছে নির্যাতন আর সহিংসতার ঘটনায়। সমস্ত দুর্যোগ আর মহামারীর বিপন্ন সময়ে অপেক্ষাকৃত অসহায় ও পিছিয়েপড়া নারীরাই অত্যাচার, নিপীড়নের শিকার হয়। এবারের করোনা লড়াইয়েও নারীর ওপর অত্যাচারের খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথ্যপ্রযুক্তির বলয়েও এমন নির্যাতনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। নিত্য খেটেখাওয়া মানুষও আজ তাদের সামান্য রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা থেকে প্রায় বঞ্চিত। অসহায়ভাবে ঘরে বসে উপার্জনহীন অবস্থায় ক্রান্তিকাল পার করছে। তার স্ত্রীটিও হয়তবা কোন সম্পন্ন গৃহস্থের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে নিয়োজিত ছিল। করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে সব ঠিকা গৃহকর্মী ঘরে বসে অযথা সময় ব্যয় করছে। সেখানে সুখে-শান্তিতে সংসার করা একেবারে স্বপ্নের রাজ্যে বাস করার মতো। গৃহবিবাদের বীজ তো এখানেই বপিত। কারণ, তাদের প্রতিদিনের আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। অভাব-অনটনের সংসারে ঝগড়াঝাটি, অশান্তি লেগেই থাকে। সরকার প্রদত্ত ত্রাণসামগ্রী প্রায় সবার ঘরে পৌঁছায় না বলেও অভিযোগ আছে। সামান্য ত্রাণসামগ্রীতে সংসারের চাহিদা মেটানোও একটি সমস্যা। ফলে নিত্য ঝড়ঝাপটা লেগে থাকে ক্ষুদ্র পারিবারিক গন্ডির মধ্যে। এ তো গেল নিম্নবিত্ত অসহায় দিনমজুরদের নৈমিত্তিক ঘটনাপঞ্জি। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সংসারেও ঘটে চলেছে হরেক রকম অশান্তি আর বিপন্ন অবস্থা। অবরুদ্ধতার চরম বিষন্নতায় ঘরবন্দী মানুষও এক প্রকার অস্থিরতায় ভুগছে। যার সর্বাধিক দায় গিয়ে বর্তাচ্ছে দুর্বল নারীর ওপর। কর্মহীন ও অলস জীবনযাপনে মন মেজাজও সব সময় ঠিক রাখা মুশকিল হয়ে পড়ছে। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বক্ষণিক নজর করোনাভাইরাসকে সামলানোর দিকেই। বিচার ব্যবস্থাও এক প্রকার স্থবিরতার আবর্তে। এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয় ঘরবন্দী পুরুষ। পারিবারিক কলহ বেড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ধর্ষণের মতো সহিংস ঘটনার চিত্রও সংবাদ মাধ্যমের খবর হচ্ছে। এরই মধ্যে উঠে এসেছে কুমিল্লায় এক নারীকে তার স্বামী আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। কুষ্টিয়ায় বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় ৯ মাসের অন্তঃসত্তার দেহে পেট্রোল ঢেলে মেরে ফেলার চেষ্টা করে বাড়িওয়ালা স্বয়ং। সাতক্ষীরায় শ্যামনগরের ৪ সন্তানের বিধবা মাকে গণধর্ষণ, বরগুনায় সাত বছরের মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মাকে অনেকে মিলে ধর্ষণের দুঃসহ চিত্র সবাইকে হতবাক করে দেয়। দুর্যোগকালীন আপদে মানুষ তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, তা নয়; বরং পশুবৃত্তির চরম সংহার মূর্তি ধারণ করছে, ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে রংপুরেও। পারিবারিক অশান্তির জের হিসেবে স্ত্রী ও সন্তানকে খুন করে গৃহকর্তা নিজে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রকাশ পায়। করোনা মহামারীরকালেও থেমে নেই নারী ও শিশু নির্যাতন। সর্বশেষ ৫ জুন পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে শ্রীমঙ্গলে মা ও মেয়ে এবং পাবনায় বাবা-মা-মেয়ে খুনের ঘটনা ঘটেছে। মহিলা পরিষদের এক বিবৃতিতে জানা যায়, মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিন মাসে ৪৮০ নারী ও শিশু সহিংসতাসহ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৬৭ নারী এবং শিশু ২১৩। একাধিক নারী ও শিশু হত্যার ঘটনাও আছে। করোনার এই ক্রান্তিকালে এসব মোটেও প্রত্যাশিত নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে সর্বশেষ তৎপর হতে হবে।
×