ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনবান্ধব বাজেট

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ১৪ জুন ২০২০

জনবান্ধব বাজেট

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। এটি বর্তমান অর্থমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাজেট ঘোষণা। বৈশ্বিক মহামারীর ভেতর করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ ছোবলের কালপর্বে জাতীয় বাজেট ঘোষণা এক অর্থে নজিরবিহীন। বিশ্ব মহামারীর হাত ধরে বিশ্বমন্দা আসার বাস্তবতা অনেকটা অনিবার্য। অর্থনৈতিক মন্দার ভেতর সবচেয়ে বেশি জরুরী দিকগুলোর ভেতর রয়েছে কৃষি উৎপাদন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা। সে সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তাও। জনকল্যাণমূলক সরকার এই তিনটি দিককেই যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে, সেটি বলাই বাহুল্য। প্রস্তাবিত বাজেটের ক্ষেত্রে তারই প্রমাণ মিলেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় দশ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ইতিবাচক। যথারীতি আশাজাগানো, ভারসাম্যপূর্ণ এই বাজেটে রয়েছে কল্পনা-পরিকল্পনার মিশেলে সৃষ্ট কিছুটা উচ্চাভিলাষও। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করলে বলতেই হবে সম্ভাবনাময় আগামীর স্বপ্নের সংকেত আছে এই বাজেটে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেশকিছু ভাল পদক্ষেপের প্রস্তাবনাও লক্ষণীয়। অবশ্য বাজেটে বিপুল ব্যয়ের বিষয়টি শুরুতেই নজর কাড়ে। তবে, স্তরে স্তরে সূক্ষ্মদৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলে এ কথা বলতেই হবে যে, দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে সচল রাখার তাগিদে এমন বাজেট প্রস্তাবনা বিচক্ষণতারই পরিচায়ক। দুঃসময়ে আশাবাদী বাজেট প্রস্তাবের জন্য সাধুবাদ পাবেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট ঘোষণা মানেই একদিকে স্বপ্ন, অন্যদিকে শঙ্কা। আশা আর স্বপ্ন হাত ধরাধরি করে চলে। বাজেটে আশার জায়গা তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকে। আর তাতে ভর করেই মানুষ স্বপ্ন দেখে উন্নতি ও সমৃদ্ধির। অন্যদিকে নতুন করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কিংবা মূল্যস্ফীতির সঙ্কেত মিলবে কিনা, এমন শঙ্কাও মানুষের মনে উঁকি দিয়ে যায়। একজন দায়িত্বশীল অর্থমন্ত্রী উভয়দিক সম্পর্কে সচেতন থাকেন। তার প্রচেষ্টা থাকে নিঃসন্দেহে জনকল্যাণকর কিছু করার। টাকা আসবে কোথা থেকে আর খরচ হবে কোন্ খাতে কত; এটা বাজেটের সারকথা হলেও এই হিসাব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি সরকারের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়। সরকারের রূপকল্প এবং অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষের ওপর নতুন করে করের বোঝা চাপবে না, এমনটি আগাম প্রত্যাশা ছিল। মানুষের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। দীর্ঘ ৫ বছর পর এবার করমুক্ত আয়ের সীমাও বেড়েছে। আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে মোট পরিচালন ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এক কোটি দরিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা বাজেটের একটি মাইলফলক উদ্যোগ। লক্ষণীয়, বর্তমান সরকারের আমলে প্রতিটি বাজেটেই সামাজিক নিরাপত্তা খাত গুরুত্ব পেয়ে আসছে। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এবার এর পরিসর বেড়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি অব্যাহত রাখার জন্য অর্থমন্ত্রী এবার রাজস্ব প্রশাসনে শুধু সংস্কারের পদক্ষেপই গ্রহণ করেননি, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন, যা বাস্তবমুখী। প্রতিঅর্থবছর শেষে দেখা যায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর কিয়দংশ বাস্তবায়িত হয় না। তবু বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সক্ষমতার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী হতে চাই।
×