ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রহস্য উদ্ঘাটন

যৌতুকের বলি গৃহবধূ শারমিন

প্রকাশিত: ০০:০৩, ১৩ জুন ২০২০

যৌতুকের বলি গৃহবধূ শারমিন

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ প্রথমে স্বামীর ভাবখানা এমনই ছিল অভিমান করে তার স্ত্রী হাবিবা আক্তার শারমিন (১৯) বিষপান করেছে। তাকে বাঁচাতে নিয়েও এসেছিল নীলফামারী সদর জেনারেল হাসপাতালে। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় শারমিনকে জরুরীভাবে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার জন্য চিকিৎসক পরামর্শ দেন। খবর পেয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে ছুটে আসেন শারমিনের বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন। নীলফামারী হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সে শারমিনকে উঠিয়ে স্বামী মোমিনুরসহ শারমিনের বাবাও উঠে বসেন। স্ত্রীর জন্য কান্না করছে স্বামী। না জানি স্ত্রীকে কতইনা ভালবাসে। মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে এ্যাম্বুলেন্স। নীলফামারী উত্তরা ইপিজেড এলাকা এ্যাম্বুলেন্সটি ক্রস করছিল ঠিক সে সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শারমিন। স্ত্রীর মৃত্যুতে হাউমাউ করে কেঁদেও ওঠেন স্বামী। এ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা শারমিনের বাবা হাবিল শেখ কাঁদছেন। এ্যাম্বুলেন্সটি পুনরায় সদর জেনারেল হাসপাতালের দিকে ফেরার জন্য রাস্তায় ঘোরানো হচ্ছিল, সে সময় সুযোগ বুঝে এ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমেই পালিয়ে যায় স্বামী। জামাই পালিয়ে যাওয়ায় রহস্য দানা বাঁধে শারমিনের বাবার মনে। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে মেয়ের লাশ এনে তিনি নীলফামারী থানায় বিষয়টি অবগত করেন। পুলিশ এল। সব কিছু জানার পর পুলিশ সুপারের দিক নির্দেশনায় থানা পুলিশ মাঠে নেমে পড়ল। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মাথায় পুলিশের জালে আটকে পড়ল শারমিনের স্বামী দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার সীমানায়। সেই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হলো শারমিনের শ্বশুর লাল মামুদকে। তার পরের কাহিনী মর্মান্তিক। সে যৌতুকের বকেয়া ৪০ হাজার টাকার জন্য বাবা ছেলে মিলে শারমিনের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অকপটে বাবা ছেলে সব কিছু স্বীকার করে ফেলে। এরপর পুলিশ তাদের বাড়ি হতে উদ্ধার করে শারমিনকে নির্যাতনের কাজে ব্যবহৃত খাটের রোলার, মাথায় আঘাত করা একটি স্টিলের বড় মগ। এভাবে বেরিয়ে আসে শারমিন বিষপান করেনি- হয়েছে যৌতুকের বলি। শুক্রবার দুপুরে পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান (বিপিএম, পিপিএম) সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবা ও ছেলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সুপার (প্রশাসন) এবিএম আতিকুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) অশোক পাল, ওসি মোমিনুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মাহমুদ-উন নবী ও ডিআইও-১ লাইছুর রহমান প্রমুখ।
×