ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আনসার আল-ইসলাম এখন থেকে পিস্তল রিভলবারে খুন করবে

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ১৩ জুন ২০২০

আনসার আল-ইসলাম এখন থেকে পিস্তল রিভলবারে খুন করবে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ দীর্ঘ সময় পর আবারও নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল-ইসলাম তাদের কর্মকা- শুরু করেছে। জঙ্গী সংগঠনটি আগের মতো চাকু দিয়ে টার্গেট কিলিং করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। টার্গেট কিলিং সহজ করতে তারা পিস্তল ও রিভলভার এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। তারা অস্ত্রগোলাবারুদ সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি নিজেদের প্রস্তুতও করছে। জঙ্গী সংগঠনটির একটি গ্রুপের আটজন গ্রেফতার হওয়ার পর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যেই চারজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। সর্বশেষ গ্রেফতারকৃত জঙ্গী সংগঠনটির সুইসাইডাল স্কোয়াডের এক সদস্যকে দুই দফায় আট দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের তথ্য মোতাবেক দেশের কয়েকটি জেলায় জঙ্গী সংগঠনটির তৎপর থাকার একটি চিত্র মিলেছে। সে মোতাবেক র‌্যাব অভিযান চালাচ্ছে। এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে র‌্যাব-২ এর স্পেশালাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানির কমান্ডার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী জনকণ্ঠকে জানান, জঙ্গী সংগঠনটি পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে থাকা বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের মতো দেশের প্রত্যন্ত একটি এলাকা দখলে নিতে চায়। এজন্য তাদের পছন্দ প্রত্যন্ত অঞ্চলের বা কোন গভীর পাহাড়ের কোন গ্রাম। সেই গ্রামের দখল নিয়ে তারা সেখানে মুসলিম ভিলেজ গড়ে তুলবে। যে গ্রাম মানবসৃষ্ট কোন আইন দ্বারা পরিচালিত হবে না। ইসলামী আইন দ্বারা পরিচালিত হবে সেই গ্রাম। যেটিকে মুসলিম ভিলেজ নাম দেয়া হবে। সেখানে শক্ত অবস্থান নিয়ে তারা দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সশস্ত্র জিহাদ করে যাবে। চলতি বছরের শুরু থেকেই তারা এমন তৎপরতা চালাচ্ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে বাহ্যিক কাজে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। দেশ স্বাভাবিক হওয়ার পর আবার তারা এমন তৎপরতা শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই একটি গ্রুপের দশজন গ্রেফতার হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩০ মে পাবনা থেকে গ্রেফতার হওয়া আব্দুল্লাহ আকাশ। তাকে দুই দফায় আট দিনের রিমান্ডে পেয়ে ঢাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করা হয়। নতুন করে কোন রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার মহিউদ্দীন ফারুকী বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই জঙ্গী সংগঠনটির তৎপরতা বিষয়টি মাথায় রেখে মুন্সীগঞ্জ, সিলেট ও পাবনায় ধারাবাহিক অভিযান চালানো হয়। গ্রেফতার করা হয় আটজনকে। এই গ্রুপে মোট এগারো জন সদস্য আছে। যারা টার্গেট কিলিং ও নাশকতা চালানোর কাজটি করে। তিনজন এখনও পলাতক। তাদের গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। এগারোজনই আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য। এই স্কোয়াডের অর্থদাতা হিসেবে ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেফতার হয়েছে মুহিব মুশফিক খান। তার কাছে জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নির্দেশিকা ও সহযোগী জঙ্গী সদস্যদের অনলাইনের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। তার কাছে বহু ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া গেছে। যার মধ্যে বিস্ফোরকও ছিল। এসব ডিভাইস প্রযুক্তিগত নানা কাজে ব্যবহৃত হতো। তারা ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপ, টেলিগ্রাম ও মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটানোর পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে নানা পরামর্শ করত। জঙ্গীবাদে টানতে তাদের মূল টার্গেট নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কিশোর ও যুবকরা। প্রসঙ্গত, আনসার আল-ইসলাম দেশের নিষিদ্ধ সাতটি জঙ্গী সংগঠনের একটি। জঙ্গী সংগঠনটি আগে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে তৎপরতা চালাত। বিশেষ করে কবি, সাহিত্যিক, লেখক, প্রকাশক ব্লগার থেকে শুরু করে অনেকেই নির্মমভাবে খুন হয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের হাতে। ২০১৫ সালে সংগঠনটিকে সরকার নিষিদ্ধ করলে পরে তারা নাম পাল্টে আনসার আল-ইসলাম নাম ধারণ করে। আনসার ইসলাম মূলত আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার অনুসারী। আনসার আল-ইসলাম নিজেদের আল কায়েদার আশীর্বাদ পুষ্ঠ হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের হয়ে কাজ করছে বলে দাবি করে আসছে।
×