ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব দুর্নীতি সহায়ক

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ১৩ জুন ২০২০

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব দুর্নীতি সহায়ক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব দুর্নীতি সহায়ক। এটি সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ও এই ব্যবস্থা সৎপথে উপার্জনকারী নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক। এর মাধ্যমে সরকার প্রকারান্তরে দুর্নীতি ও অবৈধতাকে লাইসেন্স দিয়ে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হতে জনগণকে উৎসাহ দিচ্ছে ও অনৈতিকতা প্রশ্রয় পেয়েছে আর সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। একইসঙ্গে অর্থের বা সম্পদের উৎস নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন তোলার বিধানটিও রহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাই এ প্রস্তাব প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়ে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে করোনার এই সময়ে বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে অপ্রতুল বরাদ্দ ও সময়ের অনুপযোগী প্রাধান্যে হতাশা বলে মন্তব্য করে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারী এ সংস্থাটি এসব দাবি জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারীতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সচল করা, রাজস্ব আয় ও বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির নামে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা সাদা করা ও অর্থপাচারকে সুকৌশলে বৈধতা দেয়ার অভূতপূর্ব দুর্নীতি সহায়ক সব পদক্ষেপ। একইসঙ্গে অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থী এসব পদক্ষেপ বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে দীর্ঘদিনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও স্বার্থান্বেষী মহলের দুর্নীতিতে পর্যুদস্ত স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন নিশ্চিতে জোরালো কোন পদক্ষেপ বাজেটে না থাকা এবং করোনাকালীন সময়েও এ খাতে বরাদ্দ অপর্যাপ্ত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছি। বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের নামে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকার ও দেশের সকল প্রচলিত আইনকে উপেক্ষা করে বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন দুটি ধারা সংযোজনের মাধ্যমে জমি, ভবন, ফ্ল্যাট ও এ্যাপার্টমেন্ট কেনা, নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার ও বন্ডে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার অবারিত সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বাজেটের এমন প্রস্তাবে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতার সম্পূর্ণ বিপরীত ও অমর্যাদাকর পদক্ষেপ যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বছরের পর বছর এ ধরনের সুবিধা দিয়ে দেশের অর্থনীতির কোন উপকার হয়নি, উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আদায় হয়নি, কোন বিনিয়োগ তো নয়-ই। বরং অনৈতিকতা প্রশ্রয় পেয়েছে আর সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এখানেই শেষ নয়, ঘোষিত বাজেটে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং-এর মাধ্যমে অর্থপাচার ঠেকাবার নামে ৫০ শতাংশ জরিমানার বিধান আয়কর অধ্যাদেশে যুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এমন প্রস্তাব অপরিণামদর্শী। অর্থপাচারের মতো অপরাধকে ৫০ ভাগ কর প্রদানের মাধ্যমে বৈধতা প্রদান গুরু পাপে লঘু দ-ের অভিনব উদহারণ হতে যাচ্ছে, যেন এ ধরনের ঘোরতর অপরাধের জবাবদিহি কর আদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
×