ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডব্লিউএইচও নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ১৩ জুন ২০২০

ডব্লিউএইচও নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা

নতুন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সুস্পষ্ট ও কার্যকর নির্দেশনার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দীর্ঘসূত্রতা ও একের পর এক ব্যর্থতায় বিজ্ঞানীদের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এএফপি। সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচও’র কর্মকর্তারা উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা ‘বিরল’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। গবেষকদের তীব্র আপত্তির মুখে একদিন পরই সংস্থাটি তাদের বক্তব্যে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানায়। এবারই প্রথম নয়, গত কয়েক মাসে আরও কয়েকবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থানকে নড়বড়ে মনে হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি গত সপ্তাহে এসে সবার মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়েছে। অথচ এতদিন ধরে তাদের ভাষ্য ছিল, মাস্কে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়- এর সপক্ষে দৃঢ় প্রমাণ নেই। ডব্লিউএইচও’র সেই ভাষ্যে গা না করে বিশ্বের বেশিরভাগ বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন দেশের সরকার গত কয়েক মাস ধরেই সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে মাস্ক পরতে পরামর্শ দিয়ে এসেছে। দেরিতে হলেও এখন সংস্থাটি সে নির্দেশনাকেই কার্যকর বলে মেনে নিচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুকণার মাধ্যমে নতুন করোনাভাইরাস ছড়ায় না- ডব্লিউএইচও’র এমন ভাষ্যের সঙ্গেও অনেক বিজ্ঞানীর বিরোধ দেখা যাচ্ছে। ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুকণা ও অতি ক্ষুদ্র তরলকণা প্রসঙ্গে সংস্থাটির অবস্থান বিশ্বের অন্যদের চেয়ে এখনও আলাদা,’ বলেছেন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল ওস্টেরহম। বৈজ্ঞানিক মতামতের এ দ্বিধাবিভক্তি বিভিন্ন দেশের সংক্রমণ মোকাবেলার নীতিতেও প্রভাব ফেলছে। কেবল উপসর্গ প্রকাশ পাওয়া আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখলেই হচ্ছে না, ‘উপসর্গবিহীন আক্রান্তরাও’ কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে, এ শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই লকডাউনের পথ বেছে নিয়েছিল। আবার প্রাণঘাতী এ ভাইরাস যদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুকণার মাধ্যমে ছড়াতে পারে, তাহলে কেবল হাত পরিষ্কার রাখলেই হবে না, সংক্রমণ প্রতিরোধে নিতে হবে আরও নিত্যনতুন ব্যবস্থা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষে দ্রুত বিভিন্ন গবেষণা সংগ্রহ ও সেগুলো পর্যালোচনা করে ভাইরাসটির চরিত্র বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচন করা সম্ভব হলেও এ কাজে এখন পর্যন্ত তারা আস্থার প্রতিদান দিতে সক্ষম হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাধারণত সতর্কতার সঙ্গে বিভিন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পর্যালোচনা করে থাকে। কিন্তু এখন গবেষণার গতি বদলে গেছে। বিজ্ঞানীরা এখন যত দ্রুত সম্ভব তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানের ফল প্রকাশে মত্ত; অনুসন্ধানের ফল যথাযথ পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞদের সময়ও দিচ্ছেন না তারা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য এমন তাড়াহুড়ো খারাপ নয়; কিন্তু এ ধরনের চর্চা অনেক সময় বিভ্রান্তিরও জন্ম দেয়। ‘উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের’ নিয়ে যেমনটা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ডব্লিউএইচও-চীন জয়েন্ট মিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘প্রকৃত উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে সংক্রমণের বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট। তবে এ ধরনের সংক্রমণ সম্ভবত খুবই বিরল এবং এটি ভাইরাসটির বিস্তারে মূল চালক বলে মনে হচ্ছে না।’
×