ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর ফুটপাথ নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজারে সয়লাব

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১৩ জুন ২০২০

রাজধানীর ফুটপাথ নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজারে সয়লাব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার রেজা ফুড প্রোডাক্টস। আগে সেখানে তৈরি হতো খাদ্যদ্রব্য। কিন্তু করোনার সঙ্কট কাজে লাগিয়ে অধিক মুনাফার আশায় কারখানাটিতে তৈরি করা হচ্ছিল নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার। অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে প্রমাণও পায় র‌্যাব। নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন ও বাজারজাত করার দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঘটনাটি গত মঙ্গলবারের। একটি দুটি ঘটনায় নকল এসব পণ্যের অভিযান চললেও রাজধানীর ফুটপাথগুলোতে সয়লাব হয়ে গেছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। দেদারসে বিক্রিও হচ্ছে। জানা গেছে, করোনাভাইরাস রোধে হ্যান্ড স্যানিটাইজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর সেই স্যানিটাইজার এখন ফুটপাথেও বিক্রি হচ্ছে। মানহীন এসব স্যানিটাইজার কোন প্রশ্ন না করে কিনেও নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে তাতে করোনা প্রতিরোধে কতটা কাজ হচ্ছে তার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোন কোন অসাধু দোকানি আসল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বোতল সংগ্রহ করে তাতে নকল স্যানিটাইজার ভরে বিক্রি করছেন। প্রতিদিনই রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিলের ফুটপাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রি করতে দেখা যায়। মতিঝিলের একটি দোকানের মালিক জানান, তার কাছে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা দামের হ্যান্ড স্যানিটাইজার রয়েছে। তিনি একটি বড় বোতল দেখিয়ে এর দাম চান ২০০ টাকা। আরেকটি বোতলে স্প্রে করার ব্যবস্থা রয়েছে। এটির দাম চান ১৮০ টাকা। দেখা যায় অনেকে তার কাছ থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনছেন। দোকানটিতে আরও বিক্রি করা হচ্ছে পিপিই, বিভিন্ন ধরনের মাস্ক, চশমাসহ করোনা রোধের জিনিসপত্র। জানতে চাইলে বিক্রেতা বলেন, এসব স্যানিটাইজার শতভাগ ভাল। তিনি এগুলো মানসম্মত দোকান থেকে কিনে এনে বিক্রি করছেন। ‘কোন ধরনের সন্দেহ নেই।’ রাজধানীর অনেক স্থানে ভ্যানে করেও বিক্রি করা হচ্ছে করোনাভাইরাসের সুরক্ষা সামগ্রী। পিপিই সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে না পারলেও গলা ফাটিয়ে হকাররা বলছে, ‘করোনা থাইক্যা বাঁচেন পিপি নেন, পিপি’। প্রায় প্রতিটি হকারের ভ্যানে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও চক্ষু রক্ষার গগলস এবং বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতলে ভরা হ্যান্ড স্যানিটাইজারও রয়েছে। এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার বোতলে কোন কোম্পানির লেভেল নেই। ফুটপাথে বিক্রেতারা তাদের পণ্যে শতভাগ কার্যকর বলে দাবি করলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক অসাধু দোকানি ব্র্যান্ডের স্যানিটাইজার বোতল সংগ্রহ করে তাতে নকল স্যানিটাইজার রিফিল করে ফুটপাথে বিক্রি করছেন। রসায়নবিদরা জানিয়েছেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে ইথানল ও প্রোপানল ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এ্যালকোহল, এ্যালোভেরা অয়েল, গ্লিসারিনসহ নানা রাসায়নিক দ্রব্য থাকে। মানব ত্বকের সহনশীল মাত্রা অনুযায়ী এগুলো ব্যবহার করতে হয়। ল্যাবে পরিমাণ মতো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করতে হয়। উপকরণ কম-বেশি হলে ত্বকের ক্ষতি হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায় এই ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য শরীরে ব্যবহারের ফলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘কী ধরনের জিনিস দিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানাচ্ছে সেটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি মিথানল দিয়ে বানায় তাহলে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হবে। আর যদি সাবান ও পানি দিয়ে বানানো হয় তাহলে ক্ষতি না হলেও মানুষকে ঠকানো হলো। এ কারণে ফুটপাথে যেসব স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে সেগুলো দ্রুত পরীক্ষা করে দেখা উচিত।’ র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক সংগ্রহ করে বিক্রি করার অপরাধে কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে। তার পরও কিছু কিছু লোক এসব ব্যবসা করে যাচ্ছেন বলে আমাদের কানে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি নকল স্যানিটাইজার এবং ব্র্যান্ডের স্যানিটাইজার বোতল সংগ্রহ করে সেগুলোতে নকল স্যানিটাইজার বিক্রি করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে আমরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছি। আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এদিকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর জীবাণুনাশক সামগ্রীর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এসব সামগ্রী বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় কোম্পানিগুলো হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সুযোগে একদল অসাধু ব্যবসায়ী নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে। নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ॥ নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন ও বাজারজাত করার দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে গত মঙ্গলবার পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। চাহিদা অনুযায়ী নকল স্যানিটাইজারগুলো সরবরাহ করে আসছিল রেজা ফুড প্রোডাক্টস। চট্টগ্রামের অমনিবাস নামে একটি কোম্পানিকে স্যানিটাইজার সরবরাহ করছিল তারা। কোন ধরনের চুক্তিপত্র ও ওই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন যাচাই ছাড়াই তারা চট্টগ্রামে স্যানিটাইজার সরবরাহ করছে তারা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ বসু জানান, রেজা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের ফুডের ট্রেড লাইসেন্স আছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের মধ্যে সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে কোন ধরনের অনুমতি বা অনুমোদন ছাড়া নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছিল প্রতিষ্ঠানটি। পলাশ বসু আরও বলেন, তাদের তৈরি করা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতলে যে উপাদানগুলো উল্লেখ আছে অর্থাৎ আইসোপ্রোফাইল এ্যালকোহল, তা বিন্দুমাত্র নেই। এগুলো সব ভেজাল ও নকল প্রোডাক্ট। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ লেবেলবিহীন পণ্য আছে। এসব অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে রেজা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী রেজাউর রহমানকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড এবং কারখানা সিলগালা করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
×