ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার মধ্যে মশার উৎপাত বেড়েছে নগরীতে

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১৩ জুন ২০২০

করোনার মধ্যে মশার উৎপাত বেড়েছে নগরীতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় পুরো বিশ্বের মতো লড়াই করে যাচ্ছে বাংলাদেশও। করোনা সঙ্কটের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় বেড়েছে মশার উৎপাত। নগরবাসীর অভিযোগ, ঘরের বাইরে করোনা। আর ঘরে মশা। কোথাও যেন নিস্তার নেই। রাজধানীর গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে মিরপুর, ধানমন্ডি, শান্তিনগর, কমলাপুর, পুরান ঢাকাসহ প্রায় সব এলাকার নগরবাসীই অতিষ্ঠ মশার উৎপাতে। করোনার এই সময়ে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয়া হলেও জানালা খুললেই বাসা-বাড়িতে মশা ঢোকে ঝাঁকে ঝাঁকে। এদিকে রাজধানীর কোথাও জমে থাকা পানি বা এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেলে, সেটি যদি সরকারী প্রতিষ্ঠানও হয়, সেখানে আইন অনুযায়ী অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। ইতিমধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান শুরু করছে ডিএনসিসি। রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা রাসেল আহমেদ মশার যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, বাইরে গেলে করোনা আতঙ্কে থাকতে হয়। ঘরে এসেও শান্তি নেই মশার উৎপাতে। সামান্য সময় জানালা খোলা রাখলেই একটু পর পুরো ঘর মশায় ভরে যায়। সন্ধ্যার পর এই সমস্যা আরও বেশি হয়। বিষয় এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, বাইরে গেলে করোনা আর বাসায় থাকলে মশা। যদিও এবার বেশ আগে থেকেই মশক নিধনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছে রাজধানীর মশক নিধনে প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই প্রতিষ্ঠান ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, মশক নিধনের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। করোনার সময়েও মশক নিধনে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং মশক নিধন কর্মীরা। ঈদের পর বিশেষ কর্মসূচী হাতে নেয়ার পরিকল্পনা আছে বলেও ডিএসসিসির একটি সূত্র জানায়। অন্যদিকে, জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে ডেঙ্গু সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিজেদের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচীর কথা জানায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, বছরের শুরু থেকেই আমরা সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। এটা অব্যাহত আছে। নিয়মিত লার্ভিসাইডিং, ফগিং করা হচ্ছে। এর বাইরে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। সেখানে সবাইকে বলা হয়েছে, সবাই যেন স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে পানি জমতে না দেন। আমরা কিন্তু প্রতিটি জায়গায় নোটিস দিয়েছি, মাইকিং করেছি। আমরা চাই সবাই যেন নিজ নিজ আঙিনা বা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার রাখে। জমাট বাধা পানিমুক্ত অবস্থায় রাখে। এরপরেও যারা আইন মানবেন না, সরকারী নির্দেশনা মানবেন না এবং সচেতন হবেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। এছাড়াও করোনার কারণে এই সময়ে মশক নিধন কার্যক্রম বেশ চ্যালেঞ্জিং বলে দাবি করেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। বলেন, আমাদের যেসব মশক কর্মী কাজ করছেন, তারা কিন্তু করোনা ঝুঁকির বাইরে না। তারাও ঝুঁকিতে আছেন আর এটা আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা আমাদের পূর্ব সতর্কতা অনুযায়ী, সব কর্মীকে মাস্ক, গ্লাভস এবং নিরাপত্তামূলক পোশাক দিয়েছি। অনেকেই গরমের কারণে পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। তবে মাস্ক এবং গ্লাভস পরাটা আমরা বাধ্যতামূলকভাবে নিশ্চিত করেছি। বর্তমানে ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ থেকে ১২টি হ্যান্ড স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে প্রতিদিন সকাল বেলা লার্ভিসাইডিং করা হচ্ছে। প্রতিটি মেশিনে প্রতিদিন ছয় বার করে ওষুধ স্প্রে করা হয়। আর প্রতি বিকেলে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০টি ফগিং মেশিনের মাধ্যমে একবার করে এডাল্টিসাইডিং করা হচ্ছে। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিয়ে ডিএনসিসির প্রথম কর্পোরেশন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বুধবার মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে মিরপুর মাজার রোডে অবস্থিত ডিএনসিসির ১০ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রসঙ্গে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া যেন গত বছরের মতো ভয়াবহ রূপ নিতে না পারে, সেই জন্য আমি আগে থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। গত ১০ মে থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে। কোথাও জমে থাকা পানি বা এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেলে, সেটি যদি সরকারী প্রতিষ্ঠানও হয়, সেখানে আইন অনুযায়ী অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। গত ১৬ মে থেকে পরিচ্ছন্নতা ও মশককর্মী দ্বারা ৫টি ওয়ার্ডে ঈদের আগ পর্যন্ত চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আজ শনিবার থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান শুরু করা হবে। অন্তত আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে ১০ দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে। নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে বিনামূল্যে ডিএনসিসি এলাকার ৫টি নগর মাতৃসদন ও ২২টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১১ মে থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে।’ মেয়র বলেন, ‘মশক নিধন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে দুটি এ্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। একটি এ্যাপের মাধ্যমে ডিএনসিসি এলাকার এডিস মশার লার্ভা পাওয়া সব বাড়ি বা স্থাপনার ছবিসহ তথ্য সংরক্ষণ করা হবে, যা পরবর্তীতে মনিটরিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হবে।’ মশক নিধনকর্মীদের মনিটরিং প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘সমগ্র ডিএনসিসিকে ৪০০ মিটার বাই ৪০০ মিটার গ্রিডে ভাগ করা হবে। প্রতিটি গ্রিডে বসবাসরত একজন গৃহিণীকে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হবে। একটি গ্রিডে কর্মরত মশককর্মীর কাজে ওই গ্রিডে বসবাসরত গৃহিণী সন্তুষ্ট কিনা ডিএনসিসির একটি এ্যাপের মাধ্যমে তিনি তা প্রকাশ করবেন। তার সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করবে মশক নিধন কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি। ওই এ্যাপের মাধ্যমে মেয়রসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা কোন্ এলাকার মশক নিধন কার্যক্রমের কী অবস্থা তাৎক্ষণিক জানতে পারবেন। জনগণকে মশকনিধন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতেই এ ব্যবস্থা চালু করা হবে।’
×