করোনাভাইরাসের মহাসমরে জনজীবন এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া এই সংক্রমণটি তার বহুল বিস্তারে প্রতিনিয়তই আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আবার এমন শোচনীয় দুর্যোগকালে ডেঙ্গুর মতো আরও এক মরণব্যাধিকে যাতে শুরু থেকেই প্রতিরোধের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে ব্যাপারেও তীক্ষ নজর রাখা একান্ত আবশ্যক। ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় গত বছর এমন সময়ে মহাদুর্ভোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে দেশকে। মশাবাহিত এই রোগটি এডিস থেকে ছড়িয়ে থাকে। করোনার ওপর যদি এই ভয়াবহ ডেঙ্গু নতুন করে চেপে বসে তাহলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে যাওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়। বর্ষা ঋতু তার আগমনী বার্তায় ঝড়-বৃষ্টির উপস্থিতিও জানান দিতে দেরি করছে না। বৃষ্টি স্নাত মৌসুমেই এডিস মশা উৎপত্তির সময়। কারণ বৃষ্টির পানি ঘরের আশপাশে কিংবা বাগানে, ছাদে যদি কোন কারণে জমতে থাকে, সেখানেই এডিস মশা তার বংশবিস্তারই শুধু নয়, টিকে থাকার আশঙ্কাও তৈরি করে। শুধু বৃষ্টির পানি নয়, ফ্রিজ, এসি কিংবা বাথরুমের বালতির পানি যদি ৩ দিনের বেশি জমে থাকে তাহলেও সেখানে এডিস মশা তার বসতি তৈরি করে। সঙ্গত কারণে ঘরে-বাইরে সবাইকেই এ ব্যাপারে সতর্ক সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে ভবনের আশপাশে পানি কোনভাবেই জমতে না পারে। প্রশাসনিক তৎপরতা ছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজগৃহের আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। সরকার কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম তো থাকবেই নাগরিকদেরও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের সুরক্ষায় সমস্ত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধিকে অনুসরণ করতে হবে। ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশন তার কার্যবিধির লক্ষ্যমাত্রায় মশক নিধনের ব্যবস্থাকে জোরদার করেছে। উত্তর সিটি কর্পোরেশন ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে। এমন অভিযানে ভবন, নির্মাণাধীন প্রকল্প পরিদর্শনকালে এডিস মশার লার্ভা খুঁজে পাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। ৯ হাজার বাড়ি এবং স্থাপনায় এডিস মশার বংশ বিস্তারে উপযোগী পরিবেশও প্রত্যক্ষ করা গেছে যাতে নির্দিষ্ট এলাকার ভয়াবহতার চিত্র ফুটে ওঠে। এডিস মশার উৎপত্তিস্থল এবং বংশ বিস্তারের স্থান নজরে আসার পর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মামলা করে মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। আশপাশের অন্যান্য ভবনের মালিকদের প্রতি সতর্ক অবস্থা জারি করা হয় যাতে তারা নিজ উদ্যোগে বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সমস্ত আবর্জনাকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়। শুধু তাই নয়, এডিস মশার লার্ভাও যদি কোন আবাসিক ভবনে থাকে তাও নির্মূলের আবেদন জানানো হয়। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় এডিস লার্ভারও সন্ধান মেলে। ফলে ডেঙ্গু জ্বর নিয়েও সাবধান আর সতর্কতার প্রয়োজন আছে। সময়টাও এডিস মশার বংশ বিস্তারের উপযোগী। গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। সমস্ত জীবাণুবাহিত রোগ বালাইয়ের প্রথম এবং প্রাসঙ্গিক শর্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে চারপাশের পরিবেশ দূষণমুক্ত করা স্বাস্থ্য পরিচর্যার নিয়ামক শক্তি। সেটা যেভাবে করোনা বুঝিয়ে দিয়েছে একইভাবে ডেঙ্গুকেও নিরাপত্তার বলয়ে আটকে দিতে হলে সবাইকে স্বাস্থ্য সুুরক্ষার নিয়ম কানুনকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে। শুধু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাই নয়, মশক নিধনে যথার্থ জীবাণুনাশক পরিষেবা দিয়ে পুরো পরিবেশকে রোগ ব্যাধি থেকে দূরে রাখতে হবে। মশক মারার ওষুধ ছিটাতে হবে বসতবাড়ির চারপাশে, ভেতরের অলিগলিতে, ড্রেন, নর্দমা এবং পানি নিষ্কাশনের বিভিন্ন স্থানগুলোতেও। ওষুধের নামে শুধু পানি কিংবা ধোঁয়া উড়ানোর অভিযোগও কম নয়। গত বছর এমন সব অনৈতিক কার্যক্রমে ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাপনা দীর্ঘায়িত হয়েছিল। এবার যেন তেমন অশনিসঙ্কেত আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে না দেয়। এমনিতে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে আমরা ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, বিপর্যস্ত। আর কোন মহাসঙ্কট এই মুহূর্তে আমাদের যেন প্রতিকূল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে না যায় সেদিকেও সর্বক্ষণিক নজরদারি আবশ্যক।