ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গরিবের চালে অনিয়ম

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১৩ জুন ২০২০

গরিবের চালে অনিয়ম

বর্তমান জনকল্যাণকামী সরকারের অন্যতম বড় মানবিক কাজ ১০ টাকা দরে গরিবের বাড়িতে চাল পৌঁছে দেয়া। কিন্তু এই মহৎ প্রকল্পেও নয় ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। এক শ্রেণীর অসাধু ও লোভী জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবক এখানেও বাগড়া বসিয়ে চলেছে। প্রথমত রয়েছে স্বজনপ্রীতি। দুস্থ হোক বা না হোক নিজেদের লোকদের নামে কার্ড করে দেয়ার সংস্কৃতি চলে আসছে সেই পঁচাত্তরের পর থেকেই। বর্তমান সরকার প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসে এইসব অনিয়ম বন্ধে পদক্ষেপ নেয়। নিকট অতীতে সরকার দর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের পর সমাজে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার কাজে গতি আসে। গত বছরই আমরা দেখেছি দুর্নীতি যেই করুক, সে যে কোন দলেরই লোক হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ করা বহু কর্মী এমনকি নেতা পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত লোক আইনের জালে ধরা পড়ে। সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর কার্ড বিতরণ করতে গিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। এই কর্মসূচীর আওতায় সুবিধাভোগীদের তালিকা করতে গিয়ে যেসব অভিযোগ এসেছে সে ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয় সচেতন রয়েছে। আর সে কারণেই দ্রুত যাচাই বাছাই করে প্রকৃত গরিব ও দুস্থদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে তালিকা প্রণয়নের জন্য প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের চিঠি দেয়া হয়েছিল করোনাজনিত মহামারী শুরু হওয়ার আগে আগে। সঙ্গত কারণেই সেই কাজে গতি আসেনি। তবে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর এখন সুযোগ এসেছে গরিবের চাল প্রাপ্তির কাজটি সুষ্ঠু ও সুন্দররূপে সম্পাদনের। বলাবাহুল্য, এ কাজ করতে গেলে সরকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ প্রভাবশালীদের হুমকি-ধমকির শিকার হবেন। এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন কোন প্রকার হুমকি-ধমকিতে ভয় না পেয়ে স্বজনপ্রীতির উর্ধে থেকে সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। বুধবার চট্টগ্রাম বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে খ্যাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, দুর্নীতি রোধে প্রয়োজনে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর কার্ড ডিজিটালাইজড করা হবে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, করোনাকালীন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের স্থবিরতায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। সরকার নানাভাবে এদের প্রত্যেকের কাছেই ত্রাণ ও নগদ অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেয়ার প্রয়াস চালিয়েছে। তারপরও এটাই বাস্তবতা যে, এই তালিকার বাইরেও থেকে গেছেন বহু অভাবী মানুষ। আবার তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও সঠিকভাবে সহায়তা পৌঁছায়নি সবার কাছে। তাই সমাজের বিত্তবান মানুষ এবং নানা সমাজকল্যাণমূলক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ওপরও কিছুটা দায় এসে পড়েছে। শতাব্দীর এই ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রমণে শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকা কোন কাজের কথা নয়। প্রত্যেককেই মানবিক হতে হবে, মানবতার দায়বোধ থেকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যই ছিল সব কাজে স্বচ্ছতা আনা এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করা। তাই আমরা মনে করি, কোন কিছুর অপেক্ষায় না থেকে এখনই ১০ টাকা চালের কার্ড ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হোক। নতুন তালিকা তৈরির সময়েই এই কাজ করা হলে বরং সুবিধাই হবে। বছরে ৫ মাস গরিব ও দুস্থদের মাঝে ১০ টাকা দরে মাসে ৩০ কেজি চাল প্রদানের ব্যবস্থা একটি যুগান্তকারী শুভ পদক্ষেপ। এই কাজে সামান্যতম অনিয়ম কোনক্রমেই বরদাশত করা হবে না। ৫০ লাখ পরিবার এই কর্মসূচীর সুফল ভোগ করছেন। এটি বিরাট ব্যাপার। তাই সর্ষের ভেতর ভূত তাড়ানোর উদ্যোগ এখনই নিতে হবে।
×