ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমন্বিত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১২ জুন ২০২০

সমন্বিত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত বছরের চেয়ে এবারের বাজেটে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে কম বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ৬৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। বর্তমান ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে যা ছিল ৬৪ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। যা গত বাজেটের চেয়ে ২৪১ কোটি টাকা কম। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় উন্নীত করার লক্ষ্যে আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে লক্ষ্যে সরকার দেশের সড়ক-সেতু, রেলপথ, নৌ-পথসহ আকাশপথের সমন্বয়ে সামগ্রিক যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি সমন্বিত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। আধুনিক সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণ ॥ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নত ও মানসম্মত সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ এক হাজার ১৪০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান উন্নয়ন, প্রশস্তকরণসহ জেলা মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাজেট বক্তৃতার আরও বলা হয়, দেশব্যাপী জাতীয় মহাসড়ক চার বা তারবেশি লেনে উন্নীতকরণ মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কের উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেনের কার্যক্রম চলমান। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিবহন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যে গৃহীত সাসেক রোড কানেক্টিভিটি প্রজেক্টের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৪৮ ভাগ। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত এবং পাচ্চর ভাঙ্গা অংশে ধীরগতির যানবাহনসহ উভয়পাশে পৃথক লেনসহ চারলেনে উন্নীত করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। যা দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয়পাশে সার্ভিস লেনসহ চারলেনে উন্নীতকরণ, রংপুর-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়ক চারলেন করা, মংলা চ্যানেলের ওপর সেতু নির্মাণ, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ, সিলেটের তামাবিল মহাসড়ক চারলেনের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ঢাকা মহানগরীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য পরিকল্পিত-সমন্বিত আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে রিভাইজড স্ট্রেটেজিট ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান ২০১৫-৩৫ বাস্তবায়ন চলমান। এর আওতায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রথম মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক এমআরটি-৬ এবং হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র্যা পিড ট্রানজিট (বিআরটি-৩) নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। নতুন মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক ১ ও ৫-এর নির্মাণকাজ আগামী অর্থবছরে শুরু হবে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই হাজার ৫৫০ কিলোমিটার মহাসড়ক মার্কিংকরণ, এক হাজার ৯৯০ কিলোমিটার মহাসড়কের আন্তঃবাঁকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধক স্থাপনা অপসারণ পরিকল্পনাধীন। সড়ক নিরাপত্তায় সচেতনতা বাড়াতে সরকার প্রতি বছরের ২২ অক্টোবরকে নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেতু ও টানেল ॥ নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনে পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ অনেক বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিভিন্ন অগ্রগতি তুলে ধরে বলা হয়, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত সেতু প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৭৯ ভাগ, দৃশ্যমান হয়েছে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার। টানেল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ৫১ ভাগ। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু হবে। গাইবান্ধা-জামালপুর জেলার সংযোগকারী যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতার সমীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পটুয়াখালী-আমতলী-বরগুনা সড়কে পায়রা নদীর ওপর, ভুলতা-আড়াইহাজার-নবীনগর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর, বরিশাল-ভোলার সংযোগ স্থাপনে তেঁতুলিয়া, কালাবদর নদীর ওপর, বিষখালী নদীর ওপর পাঁচটি বৃহৎ সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে অর্থায়নের চেষ্টা চলছে বলেও জানানো হয়েছে। রেলপথ ব্যবস্থার আধুনিক সম্প্রসারণ ॥ ২০১৬-৪৫ মেয়াদে পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ বছরব্যাপী রেলওয়ে মহাপরিকল্পনা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আগামী অর্থবছরে ৯০০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল রেলট্র্যাক নির্মাণ, এক হাজার ৫৮১ কিলোমিটার নতুন রেলট্র্যাক নির্মাণ, এক হাজার ৫২৭ কিলোমিটার রেল ট্যাক পুনর্বাসন, ৩১টি লোকমোটিভ সংগ্রহ, ১০০টি যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন, ২২টি স্টেশনের সিগন্যাল ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। কুমিল্লা-লাকসাম হয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডাবল ট্র্যাক দ্রুতগতির রেল লাইন নির্মাণ, ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ, নাভারন থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত এবং সাতক্ষীরা থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত ব্রডগেজ রেল লাইন নির্মাণ এবং ঢাকা শহরের চারদিকে বৃত্তাকার রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। নৌ-পথ ॥ উন্নত প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক উপকরণ ব্যবহার করে সমুদ্র-নদী ও স্থলবন্দরসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সহজতর তথা প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য সরকার ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও অন্যান্য নাব্যতা উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সমুদ্রবন্দরসমূহের পণ্য হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, ওভারফ্লো কন্টেইনার ইয়ার্ড, বে ও বাল্ক টার্মিনালসহ জলযান সংগ্রহের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বন্দর সংযোগকারী নদী ও চ্যানেলসমূহ ড্রেজিং ও রাস্তা ছয় থেকে চার লেন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নদী-বন্দরগুলোর পণ্য হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা বাড়াতে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নৌ-বন্দর স্থাপন, নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা ওয়াকওয়ে জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং নদীর তলদেশ থেকে বর্জ্য অপসারণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দরে আন্তর্জাতিক পেসেঞ্জার টার্মিনাল, মালামাল সংরক্ষণে আধুনিক ওয়্যারহাউস, ইয়ার্ড ট্রান্সশিপমেন্ট শেড, ওয়েব্রিজ স্কেলসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। আকাশপথে নানামুখি উদ্যোগ ॥ আকাশপথের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণেও নেয়া হয়েছে নানামুখি উদ্যোগ। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহের যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডেলিং সক্ষমতার মান ও পরিধি বৃদ্ধির অংশ হিসেবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। কক্সবাজার, সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণের কাজ এগিয়ে চলছে। বাগেরহাট জেলার খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণসহ যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশাল বিমানবন্দর এবং রাজশাহী শাহ মাখদুম বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও নবরূপায়ণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দেশে আন্তর্জাতিকমানের সিভিল এভিয়েশন ইনস্টিটিউট নির্মাণসহ রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের বিমান বহর সম্প্রসারণ, লাভজনক বিভিন্ন গন্তব্যে সাপ্তাহিক ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি, উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন গন্তব্যে সার্ভিস সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×