ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় আসছে আরও ১১ লাখের বেশি

কর্মসংস্থানের টার্গেট কোটি মানুষের ॥ এক শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১২ জুন ২০২০

কর্মসংস্থানের টার্গেট কোটি মানুষের ॥ এক শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনা বিধ্বস্ত অবস্থায় দেশের বেকারত্ব দূর ও অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে এবার বাজেটে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরও ১১ লাখ পাঁচ হাজার মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে পাঁচ লাখ বয়স্ক ভাতা, সাড়ে তিন লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা ও দুই লাখ ৫৫ হাজার প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান। আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলে জাতীয় বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনার ১০০টির মধ্যে ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বেসরকারী খাতে স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৮টি ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। সরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে প্রায় ১ হাজার ৭শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকারী খাতের অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’, যা দেশের সর্ববৃহৎ পরিকল্পিত ও আধুনিক শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে এ পর্যন্ত ২০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) অধীনে বর্তমানে ৬টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। দেশের অবকাঠামো উন্নতিতে পিপিপি কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব আইন-২০১৫ সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রফতানিমুখী শিল্প খাতের উৎপাদন কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে বন্ডেড ওয়ারহাউজ ব্যবস্থপনাকে অটোমেশন শুরু করা হবে। এছাড়া সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে সরকার সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বিগত বছরগুলোতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত সংস্কারমূলক পদক্ষেপের এই কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় আসছে আরও ১১ লাখ মানুষ ॥ আরও ১১ লাখ পাঁচ হাজার মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে পাঁচ লাখ বয়স্ক ভাতা, সাড়ে তিন লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা ও দুই লাখ ৫৫ হাজার প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন। এ জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা; যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা; যা মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এ হিসাবে অসহায় মানুষের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও ১১ লাখ পাঁচ হাজার মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে পাঁচ লাখ বয়স্ক ভাতা, সাড়ে তিন লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা ও দুই লাখ ৫৫ হাজার প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণা, লকডাউন, শিল্প কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের আয় কমে দারিদ্র্য নিরাপত্তায় আমাদের অর্জন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার চলতি অর্থবছরে দরিদ্র কর্মজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবে ৫০ লাখ মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আওতা বাড়ানোর প্রস্তাব করছি। করোনা মহামারীর কারণে সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০ উপজেলায় বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সব দরিদ্র, প্রবীণ ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হবে। এতে পাঁচ লাখ মানুষ নতুন উপকারভোগীতে যোগ হবে এবং এ খাতে ৩০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হবে। করোনা মহামারীর কারণে সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০ উপজেলায় বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সব বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এতে সাড়ে তিন লাখ নতুন উপকারভোগী যোগ হবে এবং এ খাতে ২১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সর্বশেষ প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ অনুযায়ী দুই লাখ ৫৫ হাজার নতুন ভাতাভোগী যুক্ত করে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৮ লাখে বৃদ্ধি করা হবে। এ বাবদ ২২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এছাড়া দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, ভিজিডি কার্যক্রম, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভাতা, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ, ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের সহায়তা, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচী ইত্যাদি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
×