ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কার্ডিফে ঐতিহাসিক কিউই বধ

প্রকাশিত: ০০:০০, ১০ জুন ২০২০

কার্ডিফে ঐতিহাসিক কিউই বধ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে দ্য ওভালে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হার দিয়ে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। এরপর আরেক হটফেবারিট অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের দ্বিতীয় গ্রুপ ম্যাচে নামতে পারেনি, বৃষ্টির কল্যাণে ১ পয়েন্ট পাওয়াতে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে যায়। কারণ শেষ গ্রুপ ম্যাচে শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিতে পারলেই সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠবে। ৯ জুন, ২০১৭ কার্ডিফে হওয়া সেই ম্যাচে ইতিহাস রচনা করেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। পঞ্চম উইকেটে দু’জন ২২৪ রানের দেশের ইতিহাসে সেরা রেকর্ড গড়ে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন। দু’জনের জোড়া শতকে ৫ উইকেটের জয়ে সেই আসরে সেমিফাইনাল খেলে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কঠিনতম গ্রুপে পড়ে যায় বাংলাদেশ দল। তিন ক্রিকেট পরাশক্তি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ‘এ’ গ্রুপে মাশরাফিরা। স্বভাবতই তাই বড় কোন স্বপ্ন দেখার উপায় ছিল না। শুরুটাও সেভাবেই হয়েছিল। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওভালে ৬ উইকেটে ৩০৫ রান তুলেও ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ৫ জুন একই মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গ্রুপ ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলে ১ পয়েন্ট পেয়ে যান মাশরাফিরা। তখনই শেষ ম্যাচ জিতে সেমিতে ওঠার একটা আশা জাগ্রত হয়। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টানা বেশ কিছু জয় তুলে নেয়ার পর আত্মবিশ্বাসী হয়েই তাদের বিরুদ্ধে কার্ডিফে নামে বাংলাদেশ। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবার হারিয়ে দেয়ার দারুণ ইতিহাস তো ছিলই। সবমিলিয়ে উজ্জীবিত বাংলাদেশ চেপেই ধরেছিল মরিয়া কিউইদের। তাদের অবস্থাও একই ছিল। সেমিতে ওঠার জন্য জিততেই হবে। ইংল্যান্ডের কাছে হার এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়াতে ১ পয়েন্ট ছিল কিউইদের। বাংলাদেশকে হারালে সম্ভাবনা থাকবে শুধু সেমিতে খেলার। কিন্তু টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরুর পরও সুবিধা করতে পারেনি তারা বাংলাদেশী বোলারদের দারুণ বোলিংয়ে। ৪৬ রানের উদ্বোধনী জুটির পরও মাশরাফির মিতব্যয়ী বোলিং এবং তাসকিন আহমেদের ২ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ৩ উইকেট দখলে কিউইদের নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে মাত্র ২৬৫ রান করতে দিয়েছে বাংলাদেশ। রান হয়তো অনেকই বাড়তো, কিন্তু ৪৪তম ওভারে মোসাদ্দেক তার অনিয়মিত অফস্পিনের জাদু দেখিয়ে জোড়া উইকেট নেয়াতে তা পারেনি কিউইরা। ব্যাটিং করাটা যে সেদিন অনেক কঠিন ছিল তা বাংলাদেশের টপঅর্ডারদের ব্যর্থতাই বলে দেয়। দলীয় ৩৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে নিশ্চিত এক পরাজয়ের দিকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ দল। তামিম ইকবাল ০, সৌম্য সরকার ৩, সাব্বির রহমান ৮, মুশফিকুর রহিম ১৪ রানেই সাজঘরে ফিরে গেছেন টিম সাউদির ভয়ানক পেস তোপের মুখে। সাউদি একাই নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। এরপর ইতিহাস গড়েন মাহমুদুল্লাহ ও সাকিব। পঞ্চম উইকেটে তারা ২২৪ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি গড়েন যা তখন ছিল বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে যে কোন উইকেটে সেরা জুটির রেকর্ড। এমনকি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসেই সেটি ছিল যে কোন উইকেটে দ্বিতীয় সেরা জুটির রেকর্ড। দু’জনেই সেঞ্চুরি হাঁকান। সাকিব ১১৫ বলে ১১ চার, ১ ছক্কায় ১১৪ রানে ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হয়ে যখন সাজঘরে ফেরেন তখন বাংলাদেশ মাত্র ৯ রান দূরে জয় থেকে, বল বাকি ২১টি। মাহমুদুল্লাহ ১০৭ বলে ৮ চার, ২ ছক্কায় ১০২ রানে অপরাজিত থেকে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়ে মাঠ ছাড়ের ১৬ বল বাকি থাকতেই। ৪৭.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২৬৮ রান তুলে সেই জয় তুলে নেয়া বাংলাদেশ ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপপর্ব শেষ করে। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের কাছে অস্ট্রেলিয়া পরাজিত হওয়ায় বাংলাদেশ উঠে যায় সেমিতে। তবে এর আগে কিউইদের হারানোটাই ছিল সেমিতে ওঠার পথে অত্যন্ত জরুরী। সেই ঐতিহাসিক ৯ জুন পেরিয়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট।
×