ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভার্চুয়াল সংলাপে সিপিডির দাবি

এপ্রিলে পূর্ণাঙ্গ বেতন পেয়েছে ১৫ শতাংশ শ্রমিক

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ১০ জুন ২০২০

এপ্রিলে পূর্ণাঙ্গ বেতন পেয়েছে ১৫ শতাংশ শ্রমিক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রায় ১৫শতাংশ শ্রমিক তাদের এপ্রিল মাসের পূর্ণাঙ্গ বেতন পেয়েছেন বলে গবেষণা সংস্থা সিপিডির এক জরিপে উঠে এসেছে। সংগঠনটির দাবি, বর্তমানে প্রায় ৩৫ শতাংশ শমিক কর্মহীন রয়েছেন। এছাড়া কোভিড-১৯ অতিমারির ধকল কাটাতে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেও জানায় সংগঠনটি। এতে দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হবে বলে গবেষণায় বরা হয়েছে। মঙ্গলবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯- সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ও ত্রাণ কর্মসূচির প্রাথমিক মূল্যায়ন’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এ সব মতামত উঠে আসে। সংলাপে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম যৌথভাবে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ গবেষণা প্রতিবেদনটি সিপিডি’র ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনা (আইআরবিডি)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রস্তুত করা হয়েছে। সংলাপে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান; পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অফ বাংলাদেশ (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড.আহসান হাবীব মনসুর; বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক লীলা রশীদ; প্লামি ফ্যাশনসএর ব্যস্থাপনা পরিচালক এবং বিকেমমইএর সাবেক সভাপতি মোঃ ফজলুল হক; মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সৈয়দ মাহবুবুর রহমান; জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতি বাংলাদেশ মির্জা নুরুল গনি শোভন; ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সাধারণ সম্পাদক চায়না রহমান এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ এসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও সংলাপে ব্যবসায়ী, গবেষক, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন অংশীজনেরা অংশ নেন। সংলাপে বলা হয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, রপ্তানিমুখী বৃহৎ শিল্প, কৃষি উন্নয়ন, পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের একটি বড় অংশ বাস্তবায়িত হবে ব্যাংকঋণের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে, দেশের ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান তারল্য সংকট ও মন্দ ঋণের চাপ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। দেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য প্রণোদনা ঘোষিত হলেও পোশাক শ্রমিকদের একটি বড় অংশ পূর্ণাঙ্গ বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং চাকরি হারাচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ও ঋণসুবিধা এখনও যথাযথভাবে ভোগ করতে পারছেন না। এর পাশপাশি, সরকারের বিভিন্ন ত্রাণ কার্যক্রমে বাছাই ও বিতরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এসব সমস্যার সঠিক সমাধান না হলে প্রকৃত অংশীজনেরা প্রণোদনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম চলে আসছে। ইন্টারপোল তাদের সাম্প্রতিক একটি বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে আর্থিক প্রতারণার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর তালিকায় রেখেছে। এ অস্থায় সুশাসনের অভাব ও আইনের শাসন প্রয়োগ না হলে ক্রমবর্ধমান মন্দ ঋণের চাপ ও তারল্য সংকটের ঝুঁকি নিয়ে সুষ্ঠুভাবে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এতে করে, অসাধুগোষ্ঠীর সুযোগ নেয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এছাড়াও, সরকারের চলমান ত্রাণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতার অভাব ও দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে। প্রকৃত জনগোষ্ঠীর কাছে প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পৌছে দিতে হলে সুবিধাভোগী বাছাই, ত্রাণবিতরণ ও ত্রাণের আওতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বিস্তৃত করা জরুরি। ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উল্লেখ করেন, গার্মেন্টস শ্রমিক ও ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ এই প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর সুবিধা পাচ্ছে না। সিপিডি’র জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ১৫শতাংশ শ্রমিক তাদের এপ্রিল মাসের পূর্ণাঙ্গ বেতন পেয়েছেন, বাকিরা কেউ আংশিক পেয়েছেন এবং প্রায় ২৭শতাংশেরও বেশি শ্রমিক অর্ধেকেরও কম বেতন পেয়েছেন কিংবা একেবারে কিছুই পাননি।
×