ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগ করা হবে ১২ হাজার জনবল

জীবন বাঁচাতে ব্যয় হবে ২২ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১০ জুন ২০২০

জীবন বাঁচাতে ব্যয় হবে ২২ হাজার কোটি টাকা

এম শাহজাহান ॥ করোনাভাইরাসের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে নতুন বাজেটে ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। স্বাস্থ্যবিভাগের অনুকূলে নিয়মিত বরাদ্দের বাইরে অতিরিক্ত এই অর্থ ব্যয় করবে সরকার। সুচিকিৎসা নিশ্চিতে নতুন জনবল নিয়োগ, হাসপাতাল নির্মাণ, ভ্যাকসিন ও টিকা আবিষ্কারে গবেষণা, করোনা পরীক্ষার কিট আমদানি, ওষুধ সহজলভ্য, পিপিই, গ্লাভস মাস্কসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ উৎপাদনসহ করোনা মোকাবেলায় একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হবে। লিড মিনিস্ট্রি হিসেবে কাজ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বড় অঙ্কের এই টাকা ব্যয় করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু মানুষের জীবন বাঁচাতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করারও তাগিদ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিভাগ খাতে নতুন অর্থবছরে প্রায় ১২ হাজার জনবল নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে ২ হাজার ডাক্তার, ৬ হাজার নার্স, ৩ হাজার মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এবং ৭৩২ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এছাড়া করোনা ঝুঁকি মোকাবেলায় দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আরও দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ভাইরাসজনিত রোগ নির্ণয় ও এ সংক্রান্ত গবেষণার লক্ষ্যে ৩০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ করোনা সঙ্কট দূরীকরণে নতুন জনবল নিয়োগ, গবেষণা ও প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে আসন্ন অর্থবছরে ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ তথ্য। জানা গেছে, আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বরাদ্দকৃত শীর্ষ ১০ খাতের মধ্যে স্বাস্থ্যবিভাগ অন্যতম। এ খাতের জন্য এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৭ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ৫ ভাগ। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। অর্থাৎ আসন্ন বাজেটে করোনা মোকাবেলায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ছে ৮ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ ও জনবলসহ অন্যান্য কাজে আরও ৪ হাজার অর্থাৎ মোট ২২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হবে। জানা গেছে, করোনা মোকাবেলায় এবার বাজেটে সবচেয়ে বেশি কর্মসূচী গ্রহণ করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনা মোকাবেলা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট দেয়া হচ্ছে এবার। আগামীকাল জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দ্বিতীয়বারের মতো বাজেট পেশ করবেন। করোনার কারণে বাজেট অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতি সীমিত রাখার কথা জানিয়েছে সংসদ সচিবালয়। এছাড়া করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গণমাধ্যম কর্মীদেরও এবার বাজেট অধিবেশন কভার করার সুযোগ থাকছে না। করোনা থেকে মানুষের জীবন বাঁচানো ও গরিব মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেয়া এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে। এ কারণে আগামী বাজেটের বেশির কর্মসূচী স্বাস্থ্যবিভাগকে ঘিরে নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, করোনা থেকে মানুষের জীবন বাঁচানো এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট দেয়া হবে। এজন্য দেশের স্বাস্থ্যবিভাগে নতুন কিছু প্রকল্প গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। বাজেটেও বেশকিছু পদক্ষেপ রাখা হয়েছে। ১২ হাজার জনবল নিয়োগ ॥ করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিভাগে ১২ হাজার জনবল নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রাখা হয়েছে। করোনা চিকিৎসায় উৎসাহ দিতে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে। এদের সম্মানী বাবদ আগামী বাজেটে ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। করোনায় মৃত্যুবরণকারী ডাক্তার মনের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে সরকার। এছাড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নতুন বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি জরুরী তহবিল গঠন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার হয় এমন সব পণ্য আমদানিতে শতভাগ শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পাবেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনে থাকছে সব ধরনের ট্যাক্স ও ভ্যাট সুবিধা। কিছু শর্ত সাপেক্ষে হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ওষুধ ও সেবা সামগ্রী সম্পূর্ণ ফ্রি দেয়া হবে। ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ ও এ রোগের চিকিৎসা সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে আগামী বাজেটে এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে সরকার। জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি উত্তরণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশও নতুন নতুন হাসপাতাল করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। করোনার যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জরুরী বরাদ্দ হিসেবে রাখা হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, যেকোন জরুরী অবস্থার জন্য প্রতি বছর এ ধরনের থোক বরাদ্দ রাখা হয়। আগামীতে কোভিড-১৯ এর যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে নিয়মিত বরাদ্দ রাখার পাশাপশি জরুরী পরিস্থিতি ব্যবহারের জন্য এ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়াও করোনা নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি নির্ধারিত বরাদ্দের পরেও যদি প্রয়োজন হয় তাহলে জরুরী প্রয়োজনে সিসিইউ, আইসিইউ, আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু, সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা (সাপোর্ট কেয়ার), করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য কিট (সরঞ্জাম) এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ে এ টাকা ব্যবহার করা হবে। এ বিভাগে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সম্ভাব্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ২৫ হাজার ৭২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে ১৯ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। নতুন বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হবে ২৭ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। করোনারভাইরাসে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বাজেটে। যা করোনাভাইরাসের যেকোন জরুরী পরিস্থিতি খরচ করা যাবে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, এখন এ পরিস্থিতিতে থোক বরাদ্দ রাখতেই হবে। এটা পর্যাপ্ত কিনা সেটা এখনও বলা সম্ভব নয়। কারণ করোনা কতদিন থাকে সেটাই আমরা জানি না। তিনি আরও বলেন, এ বরাদ্দ রাখাটা ভাল। কারণ এ রকম একটা ফান্ড থাকলে জরুরী প্রয়োজনে টাকার জন্য ঘোরাঘুরি করার প্রয়োজন হবে না। তবে এ তহবিলের টাকাটা কি কিভাবে খরচ হবে সে বিষয়ে একটি প্ল্যান করা দরকার। এদিকে, দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত দরিদ্র রোগীরা তাদের চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পাবেন। বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে- ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, থ্যালাসেমিয়া ও জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্তরা এসব চিকিৎসায় সহায়তা পাবেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে এসব রোগে আক্রান্ত ভূমিহীন, শিশু, নিঃস্ব, উদ্বাস্তু, বয়োজ্যেষ্ঠ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, বিপত্মীক, নিঃসন্তান, পরিবার বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পাবেন। সমাজসেবা অধিদফতরের হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের মধ্যেমে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হবে।
×