ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা রাজনীতি ॥ টার্গেট শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ২১:০৫, ১০ জুন ২০২০

করোনা রাজনীতি ॥ টার্গেট শেখ হাসিনা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্বাধীন। যার যা ইচ্ছে লিখছে। মিথ্যা বলার স্বাধীনতা ভোগ করছে। দুর্যোগ মহামারীর সময় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন হয়। তা এখন সোনার পাথর বাটি। বিতর্কের চেয়ে কুতর্ক বেশি। সামাজিক যোগাযোগের অধিকাংশ পোস্টে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আক্রমণের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকার। একবার চিন্তা করুন, শেখ হাসিনা দুর্যোগকালে প্রধানমন্ত্রীর আসনে না থাকলে দেশের কী অবস্থা হতো! আমরা নিজের ভুল দেখি না, নাগরিক দায়িত্ব পালনও করি না, শুধু শেখ হাসিনার ভুল ধরতে পারি। নিজের বেলায় আইনজীবী পরের বেলায় বিচারক। আয়নাতে নিজের চেহারা দেখুন। রাষ্ট্র চালাতে গেলে ভুল হয়, শেখ হাসিনাও ভুল করতে পারেন, কিন্তু অপরাধ করেন না। তাঁর হয়তো ভুল আছে কিন্তু বিকল্প নেই। অতীতে আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছে। একাত্তরের চেতনার বিরোধিতা করে পুরো রাষ্ট্রকে পাকিস্তান বানিয়েছে। এটি ভুল নয়, রাষ্ট্রদ্রোহ। এটি অপরাধ। ভুল ক্ষমার যোগ্য, অপরাধ নয়। সে অপরাধের রাজনীতি থেকে তারা এখনও ফিরে আসেনি। অপরাধীরা শেখ হাসিনার ভুল ধরে। শেখ হাসিনাকে নানাভাবে আক্রমণ করে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে, করছে। এখন শেখ হাসিনাকে দুর্বল করা মানে বাংলাদেশকে দুর্বল করা। দেশের উন্নয়ন স্তব্ধ করা। জামায়াত-বিএনপি নিজেদের দলের সমালোচনা করে না। কোন অপরাধ ও ভুল স্বীকার করে না। তাদেরকে দুর্যোগ মোকাবেলায় দেখাও যায় না। সরকারদলীয় লাখো নেতাকর্মী ত্রাণ তৎপরতা চালাল। তার জন্য কেউ প্রশংসা করল না। সারাদেশে আড়াই শ’ ভাগের ১ ভাগ ত্রাণ চুরি হলো। সে চোরদের সরকার গ্রেফতার করল, ত্রাণ উদ্ধার করল, মামলা হলো। তার জন্য সরকার কোন প্রশংসা পেল না। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সুশীল সমাজের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগে স্ট্যাটাস দিয়ে সরকারকে চোর বলল। যে সরকার চোর ধরে সে সরকারকে চোর বললে, চুরি বন্ধ হবে কিভাবে? ছাত্রলীগ তো এখন শেখ হাসিনার উন্নয়ন পোস্ট দেয় না। এক ভাইয়ের গ্রুপ অন্য ভাইয়ের গ্রুপকে নোংরা ভাবে আক্রমণ করে পোস্ট দেয়। ভাইয়ের সেøাগান দিতে দিতে বোনের (শেখ হাসিনা) সেøাগানের কথা ভুলে গেছে। তবে ব্যতিক্রমও আছে। ব্যতিক্রম যুক্তি নয়। একটি কোকিল ডাকা মানে বসন্ত নয়। এখন সরকারদলীয় কোন কোন কর্মীর পোস্টে জামায়াত-বিএনপি লাভবান হয়। এটি রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা। অনেকে বলেন, এটি তো আত্মসমালোচনা। প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগে লেখলে আত্মসমালোচনা বলে না কারণ জামায়াত বিএনপি এ ধরনের আত্মসমালোচনা করে না। বরং আমরা যা লিখি তা নিয়ে নেগেটিভ রাজনীতি করে। আমরা তাদের নেতিবাচক রাজনীতির সুযোগ করে দিচ্ছি। আওয়ামী লীগের আত্মসমালোচনা জামায়াত-বিএনপির জন্য সরকারবিরোধী প্রচারণার দলিল। তারা এ সব আওয়ামী লীগের অপরাধের আত্মস্বীকৃতি হিসেবে প্রচার করে। এ সব আত্মসমালোচনায় যদি দেশদ্রোহী শক্তি লাভবান হয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দুর্বল হয়, সে আত্মসমালোচনার দরকার নেই। আত্মসমালোচনা করতে হলে নিজের দলীয় ফোরামে করুন, রাজপথে নয়। সরকার করোনাকালে সুন্দর ত্রাণ তৎপরতা চালাল। খবর নিয়ে দেখুন, দুনিয়ার অনেক দেশে খাদ্যের হাহাকার চলছে, দাম বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের। বাংলাদেশের চেয়ে কয়টি দেশের অবস্থা বর্তমান ভাল আছে? এ সব নিয়ে কারও স্ট্যাটাস দেখি না। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগকে কৃষকের ধান কেটে দিতে বলল। অনেক নেতাকর্মী তাই করল। এক-দুই জন কাঁচা ধান কাটল। সবাই মিলে কাঁচাধানের ছবিটিই ব্যাপক ভাবে প্রচার করল। কৃষকের ধান কাটা একটি কল্যাণকামী প্রতীকী কাজ। কল্যাণমূলক কাজে উৎসাহ ও প্রেরণা পাওয়ার অধিকার রাখে। তা হলো না। কাঁচা ধান যারা কাটল তাদের সমালোচনার পাশাপাশি যারা ভাল কাজ করল তাদের প্রশংসা পাওয়ার কথা। তাদের ভাগ্য তা জুটল না। আসলে আমরা নেগেটিভ থিংকিং এর মানুষ। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির নাগরিক দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়া খুব কঠিন। করোনার শুরুতে সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করল। অনেকে বলল, মানুষের জীবন রক্ষায় মক্কা মদিনায় নামাজের জামাত বন্ধ করে দিছে। বাংলাদেশের মসজিদগুলো এখনো উম্মুক্ত কেন? সরকার যখন মসজিদের জামাত সঙ্কুচিত করল তখন তারাই কাঁচাবাজারের ছবি প্রচার করে সামাজিক যোগাযোগে লেখতে শুরু করল, ‘বাজার খোলা মসজিদ বন্ধ।’ বাজার খোলা না রাখলে তো মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। জীবন বাঁচানো ফরজ আর মসজিদে জামাত পড়া সুন্নত। সেখানেও রাজনীতি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জোর করে সরকারের নিয়ম ভেঙে (অনেকটা সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়ার মতো) মাওলানা আনসারীর জানাজার নামাজে লাখো মানুষ জামায়াত করল। সরকার যখন মার্কেট, গার্মেন্টস নিয়ম মেনে চালু করার সিদ্ধান্ত নিল তখন তারাই সরকারের সমালোচনা শুরু করে দিল। অর্থনৈতিক চাকা বন্ধ রাখলে যদি করোনার চেয়ে বেশি মানুষ মরে, তাহলে তো অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে হবে। আসলে এ সব কিছুই না, সমালোচনাকারীদের আসল টার্গেট শেখ হাসিনা । তারা মূলত চায়, গার্মেন্টসের অর্ডার বন্ধ হয়ে যাক, অর্থনৈতিক সব চাকা বন্ধ হোক, দেশ গোল্লায় যাক, তাতে কোন সমস্যা নেই, শুধু শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল ও ব্যর্থ হলেই কেল্লাফতে। আমাদের সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো এ সব ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সরকারদলীয় কর্মীও সামাজিক যোগাযোগে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছে। এটি কী আমাদের দলীয় কর্মীর চিন্তার দেউলেপনা, না তারা দলে অনুপ্রবেশকারী তা জানি না। লেখক : গবেষক
×