ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাদের ওপর হামলায় জাপায় ফের গৃহদাহ

প্রকাশিত: ২২:১৪, ৯ জুন ২০২০

সাদের ওপর হামলায় জাপায় ফের গৃহদাহ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের ছেলে ও রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য রাহগির আল মাহির (সাদ এরশাদ) ওপর হামলার ঘটনায় ফের গৃহদাহ শুরু হয়েছে দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা জাতীয় পার্টিতে। হামলার ঘটনায় দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের গ্রুপ একটি পক্ষ। অপরদিকে দলের পদ বঞ্চিতরা রওশনের পক্ষ নিয়ে সাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আর হামলার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেয়ায় জি এম কাদেরকে দোষারোপ করছেন অনেকেই। যদিও এ ব্যাপারে সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ দলের চেয়ারম্যানসহ নীতিনির্ধারকরা। তবে দলের পক্ষ থকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে মহাসচিব রাঙ্গা বলেছেন, ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে মীমাংসা করা হয়েছে। কেউ এ নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, এরশাদের মৃত্যুর পর দলের কাউন্সিলে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান জিএম কাদের। কিন্তু চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন রওশন। ছেলে সাদকেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। তার অনুসারী নেতাদেরও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দিয়ে সংবাদমাধ্যমে তা তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন কিছুই টেকেনি। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জি এম কাদের পক্ষ। এর পর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জাপায় অনেকটা দ্বিধাবিভক্তির রাজনীতি চলছে। সাদের ওপর হামলার ঘটনার পর যা আরও প্রকাশ্য হলো। কারণ অভিযুক্ত হামলাকারীরা জিএম কাদেরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপার চীফ প্যাট্রন রওশন এরশাদের পুত্র সাদ দম্পতি রংপুরের বাড়ি পল্লীনিবাসে দলের স্থানীয় কয়েক নেতাকর্মীর হাতেই দোসরা জুন লাঞ্ছিত হন। বিষয়টি মানতে পারছেন না রওশন এরশাদের অনুসারীরা। ঘটনার জন্য পুরোপুরিভাবে সাদ ও তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে দুষছেন জাপার মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এবং রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর জাপার সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। ঘটনার পর রংপুরে সাদ প্রেস কনফারেন্স করলেও এখন পর্যন্ত আইনগত কোন ব্যবস্থা নেননি তিনি। এমনি রওশনও এ ব্যাপারে অনেকটা চুপচাপ থাকলেও সক্রিয় আছেন বেশকিছু নেতাকর্মী। এ নিয়ে ঢাকা ও রংপুরে উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনাও কাজ করছে। ডিও লেটারে (চাহিদাপত্র) স্বাক্ষর না করায় এমপি সাদ এরশাদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ড জাপার সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতানকে ঐদিনই আটক করে পুলিশ। টিপুকে ছেড়ে দিতে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তফা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলে পরে টিপুকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ঘটনার পরদিন রংপুরের পল্লীনিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাদ এরশাদ অভিযোগ করে বলেন, রংপুরের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে দলের সুবিধাবাদী নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। বাবা এরশাদের সুনাম ক্ষুন্ন করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। সংবাদ সম্মেলনে সাদের স্ত্রী অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা তার গায়ে হাত দিয়েছে। এ সময় তিনি গায়ে থাকা ছেঁড়া জামাও দেখান স্থানীয় সাংবাদিকদের। এদিকে সাদ দম্পতির ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে দলটির রওশন এরশাদের অনুসারীরা। সমাবেশে নেতৃত্ব দেয়া নেতারা সাদের ওপর হামলায় পার্টির শীর্ষ নেতারা নীরব কেন, জানতে চান। এ ঘটনায় শীর্ষ নেতারা জড়িত কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা। শনিবারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের বিক্ষোভে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জাপা নেতা কাজী মামুনুর রশীদ, মেজর (অব) খালেদ আখতার, ইকবাল হোসেন রাজু, সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, নুরুল ইসলাম নুর, আমানত হোসেন আমানত, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান ও রেজাউল করিম রেজা। সমাবেশে সেন্টু বলেন, এরশাদের পল্লীনিবাসে তারই ছেলে ও পুত্রবধূর ওপর হামলা প্রকারান্তরে এরশাদ ও জাপার ওপরই আক্রমণ। কাজী মামুন বলেন, আমরা এ ঘটনা বরদাশত করব না। পার্টির চেয়ারম্যান-মহাসচিবের নীরবতায় আমরা লজ্জিত। বক্তব্যদাতাদের মধ্যে মামুন, খালেদ ও জাহাঙ্গীরকে পার্টির কাউন্সিলের পর প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ দেন জিএম কাদের। অন্যদেরকেও পার্টির কোন পদে রাখা হয়নি। রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ঘটনাটি মীমাংসিত ও রংপুরের বিষয়। এ নিয়ে পার্টি চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কাছে কেউ কোন অভিযোগও করেননি। বিরোধীদলীয় নেতা বিষয়টি টেলিফোনে আমাকে এবং চেয়ারম্যানকে অবহিত করলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। যারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছে- জাপা তাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ঘটনায় সারাদেশে নেতাকর্মীদের কোন রকম বিভ্রান্ত না হতে আহ্বান জানান দলের মহাসচিব।
×