ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা জানতে চান ডোমিঙ্গো

প্রকাশিত: ২১:০৩, ৯ জুন ২০২০

ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা জানতে চান ডোমিঙ্গো

মোঃ মামুন রশীদ ॥ অনেক ক্রিকেটবোদ্ধাই বিভিন্ন সময়ে বলে থাকেন ক্রিকেট হচ্ছে একটা মানসিক খেলা। কারণ মনস্তাত্ত্বিকভাবে শক্তিশালী না হলে, মেধা কাজে লাগিয়ে মনোনিবেশ না করলে ক্রিকেট খেলা কঠিন। বিভিন্ন সময়ে এর প্রমাণও পাাওয়া গেছে। তাই প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে নামার আগে মানসিকভাবে যেকোন ক্রিকেটারেরই ফুরফুরে থাকা অতীব জরুরী। দীর্ঘ সময় খেলার মধ্যে থেকে, কিংবা বিরতিতে থেকে অনেক ক্রিকেটারই একঘেঁয়েমিতে ভুগতে পারেন, তার মানসিক অবসাদ আসতে পারে। তাই তাদের মানসিক দিকগুলো জানা জরুরী। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো তাই চান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এ বিষয়ে তার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুক। বর্তমানে এ বিষয়টার দিকে বেশ মনোযোগী হয়েছে বিশ্বের অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তিরা। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতেও এমনটা থাকা জরুরী বলে সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে দাবি করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান এই কোচ। খুব বেশিদিন হয়নি, অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল হুট করেই ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিরতিতে গিয়েছিলেন। সে সময় জাতীয় দলের সঙ্গে আসন্ন একটি সিরিজ খেলার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু মানসিকভাবে অবসাদে ভুগছেন এমন কথা জানিয়ে সরে দাঁড়ান তিনি। কারণ এমন অবস্থায় নিজের সহজাত নৈপুণ্যটাও করা সম্ভব হবে না। সেই সময় ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বেশকিছু প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারও একই কথা বলে সাময়িক বিরতিতে গেছেন। অতীতে ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার মার্কস ট্রেসকোথিকও এমনটা নিয়ে খোলামেলা কথাই বলেছেন। তবে অধিকাংশ ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় না। নিজের মানসিক অবস্থার কথা বলতে সঙ্কোচ বোধ করেন অধিকাংশ ক্রিকেটারই। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এটা আরও অসম্ভব। এ নিয়ে ১৮ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে যাওয়া মাশরাফি বিন মর্তুজাও বলেছেন, ‘আমাদের এখানে মানসিক স্বাস্থ্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের সমাজ বাস্তবতা ভিন্ন। মার্কাস ট্রেসকোথিক বা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মতো মানসিক স্বস্তি নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই আমাদের। যদি কেউ বলে, সে অসুস্থবোধ করছে তখন আমরা অনুমান করি, সে কোনো বাহানা বানানোর চিন্তা করছে। এমনকি অনেক লোক ওভাবে বিষয়টা অনুভব করে না। যারা করে, তারা প্রকাশ করে না অথবা বলার প্রয়োজনবোধ মনে করে না।’ ২০১৪ সালে টানা পরাজয়ের বৃত্তে বন্দী হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। বেশকিছু ম্যাচ জেতার পর্যায়ে গিয়েও হেরে যাচ্ছিল দল। তাই অস্ট্রেলিয়ার স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট ফিল জন্সিকে এনেছিলেন কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে। ফলটাও ভাল এসেছিল। এখন কোচ ডোমিঙ্গোও চাইছেন ক্রিকেটাররা তাদের মানসিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা হওয়ার চেষ্টা করুক। কারণ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেট পরাশক্তিগুলো সবসময়ের জন্যই একজন মনোবিদ রাখেন। সে কারণে এখন বিষয়টা উপলব্ধি করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)। জন্সিকে কিছুদিনের জন্য নেয়া এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান ক্রীড়া মনোবিদ আলী খান দুই দফায় সেজন্য কাজের সুযোগ পেয়েছেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে। ক্রিকেটাররা তাতে লাভবান হয়েছেন নিজেরাই স্বীকার করেছেন বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কেউ নিজের মানসিক ব্যাপারগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কোচ বা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেননি। এ বিষয়ে ডোমিঙ্গো বলেন, ‘মানসিক অবসাদ এমন এক বিষয়, আমি মনে করি খেলোয়াড়দের এটা নিয়ে সৎ হওয়া প্রয়োজন। এসব বিষয়ে কথা বলা নিয়ে সব খেলোয়াড় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না। তবে আমরা এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই যেখানে আমাদের দল, আমাদের খেলোয়াড়রা কেমন বোধ করছে, তাদের বিশ্রাম দরকার কিনা এবং বিষয়টা মানসিক নাকি শারীরিক, এসব বিষয় নিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। এটার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে কারণ এটি খেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।’ টানা খেলার কারণে এর আগে সাকিব আল হাসান দুইবার সরে দাঁড়িয়েছিলেন সিরিজ থেকে। তামিম ইকবাল গত বিশ্বকাপ থেকে টানা ব্যর্থতার পর শেষ পর্যন্ত সতীর্থদের পরামর্শে কিছুদিন বিরতিতে গিয়েছিলেন। তবে ডোমিঙ্গো চাইছেন কেউ অস্বস্তি বোধ করতে থাকলে তা যেন সঙ্গে সঙ্গেই ক্রিকেটাররা তাবে বলেন।
×