ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বেচ্ছাসেবকরা সারাদেশে প্রস্তুত

করোনায় ৫ শতাধিক মৃতের দাফন সেবা কোয়ান্টামের

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ৯ জুন ২০২০

করোনায় ৫ শতাধিক মৃতের দাফন সেবা কোয়ান্টামের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনায় মৃতদের শেষ বিদায় জানাতে দেশব্যাপী চলছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের দাফন সেবা কার্যক্রম। এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পাঁচ শতাধিক মরদেহ দাফন বা সৎকার করেছেন কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবকরা। সোমবার কোয়ান্টামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ৭ এপ্রিল থেকে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা দেশের যে কোন প্রান্তের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন কোয়ান্টামের নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবকরা। করোনা আতঙ্কে পরিবারের সদস্যরা যখন লাশ দাফন কাজে কাছ থেকে অংশ নিতে চাইছেন না; তখনই এগিয়ে আসে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক দল। মূলত জাতির এই দুর্যোগে মানবিক মূল্যবোধ নিয়েই এগিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। কোয়ান্টামের দাফন কার্যক্রমের সমন্বয়ক ছালেহ আহমেদ জানান, করোনার এই সময়ে সারাদেশকে ২১ জোনে ভাগ করে চলছে আমাদের দাফন সেবা। রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, যশোর, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের যে কোন প্রান্তে কাজ করছেন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক দল। কখনও কখনও ঢাকা থেকে মৃতের সবকিছু করণীয় সম্পন্ন করে দেয়া হয়েছে এবং নির্ধারিত জেলার স্বেচ্ছাসেবকরা দাফনসহ বাকি কাজ সম্পন্ন করেছেন। এ পর্যন্ত ৫২৯ জনের মরদেহ দাফন (বা সৎকার) করেছি আমরা। এর মধ্যে দাফন ৪৬৩ জনের এবং সৎকার ৬৬ জনের। মোট দাফন ও সৎকারের মধ্যে ঢাকায় করা হয় ৩৭৪ জনকে ও অন্যান্য জেলায় করা হয় বাকি ১৫৫ জনকে। তিনি বলেন, গত ৭ এপ্রিল থেকে দাফন কার্যক্রম শুরু করি। ধর্মীয় বিধান মেনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ অনুযায়ী দাফন সম্পন্ন করে যাচ্ছি আমরা। মুসলিম ছাড়াও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য রয়েছে আমাদের আলাদা স্বেচ্ছাসেবক দল। এছাড়া মহিলাদের দাফনের জন্য রয়েছে আলাদা একটি মহিলা স্বেচ্ছাসেবক দল। শুরু থেকেই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দাফন (বা সৎকার) করছে কোয়ান্টাম। কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক দলের কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকরিজীবী, কেউ আইনজীবী, কেউবা শিক্ষার্থী। দিনে বা রাতে যে কোন সময়ে ডাক পড়লেই তারা হাজির হয়ে যান হাসপাতাল বা মৃতের বাসা বাড়িতে। যথাযথ ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী মমতা নিয়ে মৃতের আপনজন হয়ে শেষ বিদায় জানান তারা। একটি দাফন বা সৎকার শেষে নিরাপত্তার স্বার্থে কর্মীদের পরিধেয় পোশাকসহ অন্য সরঞ্জাম কবরস্থানে বা শ্মশানে তাৎক্ষণিক পুড়িয়ে ফেলা হয়। ছালেহ আহমেদ জানান, কবরস্থ করার পর মৃতের জন্য আন্তরিক প্রার্থনা করি আমরা। একজন মানুষ মারা গেলে পরিবারের মানুষ কাছে থাকবে না, আত্মীয়রা জানাজায় আসবেনা- এটা আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়। করোনার এই সময়ে স্বজনহীন সেই সব মৃতকে শেষ সম্মান জানানোর মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই দিন-রাতের যে কোন সময়ে এ সেবায় নিয়োজিত আমরা। সকলের দোয়া, সহযোগিতা নিয়ে শেষ পর্যন্ত সেবা দিতে প্রস্তুত আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দল। প্রসঙ্গত, একটি দাফন বা সৎকার কাজে প্রায় ৩০ রকমের উপকরণ ব্যবহার করে কোয়ান্টাম। সুরক্ষার জন্যে ব্যবহার করা হয় এ্যালকোহলসহ কয়েক ধরনের জীবাণুনাশক রাসায়নিক পদার্থ। পাশাপাশি ব্যবহৃত হয় পিপিই, মাস্ক, সেফটি গ্লাস, ফেসশিল্ড, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, হেভি গ্লাভস, নেক কভার, মরদেহের কাফনের কাপড়, মরদেহ বহনের জন্যে বিশেষ বডিব্যাগ ইত্যাদি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী পরিচালিত এ দাফন কার্যক্রম পুরোটাই চলছে কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্যদের দেয়া অনুদানের ভিত্তিতে।
×