ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ জরুরী

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ৮ জুন ২০২০

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ জরুরী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা জরুরী। এই ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। রবিবার ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনার বা ভার্চুয়াল আলোচনায় এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও খাত সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গতি বাড়াতে ট্যাক্স রেট কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। একইসঙ্গে ভ্যাট হার কমানো ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক টেকসই, পুনরুদ্ধার, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ, এফডিআই এবং ওএফডিআই বিষয়ে ওয়েবিনার করে এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় কৃষিমন্ত্রী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এম.পি, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, আবদুল মাতলুব আহমাদ, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রমুখ অংশ নেন। কারোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলায় ব্যাংক ঋণ ভিত্তিক যেসব প্যাকেজ নেয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাত সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলছে। তার ওপর সরকার ব্যাংক ঋণ ভিত্তিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এতে করে অর্থনীতির উন্নতি হবে। তবে প্রণোদনা বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই সহযোগিতা করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। যার মাধ্যমে ব্যাংক খাতে তারল্য বাড়বে। এই উদ্যোগটি স্বল্পমেয়াদি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। তিনি বলেন, প্রয়োজনে ৫, ১০ অথবা ১৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি এতটা কমে যাওয়া আসলেই দুঃখজনক। তবে করোনা পরবর্তীতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য বেসরকারী ঋণ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, দেশের কৃষকরা চলমান সঙ্কটকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে। তাই কৃষি খাতের ঋণ প্যাকেজের সুদহার আরও কমিয়ে আনার দাবি জানান তিনি। একে আজাদ বলেন, আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলায় বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে। পাশাপাশি দেশীয় দক্ষশক্তি বাড়াতে হবে। কারণ দক্ষজনশক্তি না থাকায় দেশ থেকে প্রতি বছর ৫ বিলিয়ন অর্থ চলে যাচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে। একে আজাদ বলেন, বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে এফবিসিসিআইকে দেশীয় দক্ষশক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ দক্ষজনশক্তি না থাকায় দেশ থেকে প্রতি বছর ৫ বিলিয়ন অর্থ চলে যাচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে ৫৫ শতাংশ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। তারা ভিয়েতনামে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করছে। এই বিনিয়োগটা যাতে বাংলাদেশের আনা যায় সেই পরিকল্পনা নিতে হবে। আব্দুল মাতলুব আহমেদ বলেন, এখন সময় দেশীয় ইন্ডাস্ট্রিকে সার্পোট দেয়ার। পণ্য উৎপাদন করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর, বিদেশেও রফতানি করা যাবে। বাংলাদেশটাকে পুরা ইপিজেডের মতো করে দেবেন। দেশটাই পাল্টে যাবে। চলমান পরিস্থিতিতে যেসব পণ্য রফতানি করতে সমস্যা হচ্ছে তা দেশের বাজারে সরবারহের পরামর্শ দেন তিনি। বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামোর তৈরি এবং দক্ষশক্তি বৃদ্ধির পরামর্শ দেন বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডির) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, করোনা মোকাবেলায় প্রথমে আমাদের স্বাস্থ্যখাতের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। এই অবস্থায় সরকারী ও বেসরকারী খাতে প্রণোদনা দিতে হবে। আগামী বাজেটে ৭-৮ শতাংশ ঘাটতি থাকতে পারে। তবে বাজেটে নতুন করে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।
×