রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত সঞ্চালনে একটি লাইনের সরবরাহ বন্ধ হলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে অন্য একটি লাইন। এতে সরবরাহ থাকবে স্বাভাবিক। বহুদিন ধরে কাক্সিক্ষত এন মাইনাস ওয়ান নামের এই প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা চললেও এবারই প্রথম বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ পাচ্ছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুত সঞ্চালনে সব থেকে বড় বড় প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রামপাল, পায়রা, মাতারবাড়ি এবং রূপপুর বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্পের সঞ্চালন অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য বাজেটে বরাদ্দ পেয়েছে পিজিসিবি। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে নিবরচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব হবে।
জানতে চাইলে পিজিসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, অনেকদিন থেকেই এন মাইনাস ওয়ান নামের প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা চলে আসছিল। এখন একটি লাইন বন্ধ হয়ে গেলে তা চালু করে আবার সঞ্চালন স্বাভাবিক করতে হয়। অনেক যায়গাতে এ জন্য ভোগান্তি হয়। তবে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য একটি লাইন চালু হয়ে যাবে। যাতে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। এটি উন্নত বিশ্বে রয়েছে, আমাদের সঞ্চালন ব্যবস্থায় নতুন যোগ হচ্ছে। তিনি বলেন, এছাড়াও আগামী অর্থবছর থেকে বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। যাতে করে বিদ্যুতখাত উন্নয়নের সুফল মানুষ আরও নিবিড়ভাবে ভোগ করবে।
বিদ্যুতের আধুনিক সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবার বাজেটে নতুন পুরাতন মিলিয়ে ১৮ প্রকল্পে বরাদ্দ থাকছে। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে বর্তমান বাজেটের চেয়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছর সংশোধিত বাজেটে চার হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সেখানে আগামী অর্থবছর বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাত হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা।
পিজিসিবি সূত্র বলছে এবার বাজেটে যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড স্ট্রেংদেনিং প্রকল্প। এই প্রকল্পটি যদিও গত অর্থবছর থেকে শুরু হয়ে আগামী ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।
গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুত সরবরাহে দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২১ সালের জুনে। পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি এই প্রকল্পের অধীনেই মূলত এন মাইনাস ওয়ান বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর জুনে।
পিজিসিবি সূত্র বলছে, বিদ্যুতের উৎপাদন চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ। বিদ্যুতের চাহিদাও ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দেয়া সম্ভব হলে চাহিদা একবারে অনেকটা বেড়ে যাবে। সঙ্গত কারণে বাড়তি চাহিদার কারণে সঙ্কট যাতে তৈরি না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।
সরকার দেশের বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে তিনটি বিদ্যুত হাব তৈরি করছে। এগুলো হচ্ছে, মাতারবাড়ি, পায়রা এবং রূপপুর। এরমধ্যে মাতারবাড়ি এবং পায়রাতে কয়লা এবং এলএনজি ব্যবহার হবে। অন্যদিকে রূপপুরে হবে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রর বিদ্যুত সঞ্চালনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের একটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ করেছে পিজিসিবি। কিন্তু সেখানে আরও কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুত সঞ্চালনেও অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। অন্যদিকে মাতারবাড়ি থেকে বিদ্যুত সঞ্চালনের অবকাঠামোও নির্মাণ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
পিজিসিবি সূত্র জানায়, এবার বাজেটে মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য মাতারবাড়ি-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বরাদ্দ থাকছে পটুয়াখালী-পায়রা ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পে। যা শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে। এছাড়া বারাদ্দ রাখা হয়েছে বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম রিলায়েবিলিটি এ্যান্ড ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট ২০১৭তে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২১-এর জুনে।
বাকেরগঞ্জ-বরগুনা ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং বরগুনা ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ, ভেড়ামারা (বাংলাদেশ)-বহরমপুর (ভারত) দ্বিতীয় ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন (বাংলাদেশ অংশ) নির্মাণ, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুত সরবরাহের লক্ষ্যে সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন, পর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের পরিবর্ধন এবং ক্ষমতাবৃদ্ধি, আশুগঞ্জ ১৩২ কেভি পুরাতন এআইএস উপকেন্দ্রকে ১৩২ কেভি নতুন জিআইএস উপকেন্দ্র দ্বারা প্রতিস্থাপন প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুত ইভাকুয়েশনের জন্য সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন গ্রিড সম্প্রসারণ প্রকল্প, বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ইন্ডিয়ান ডলার ক্রেডিট লাইন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, ভারতের ঝাড়খন্ড হতে বাংলাদেশে বিদ্যুত আমদানি করার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর থেকে মনাকষা সীমান্ত পর্যন্ত ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, ঢাকা এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিড সঞ্চালন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এবার বাজেট বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়নে পিজিসিবির পাশে থাকছে বিশ্বব্যাংক, জাইকা, জার্মানির উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান কেএফডব্লিউ, এডিবি, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান (এআইআইবি) ছাড়াও চীন এবং ভারত সরকারের আর্থিক বিনিয়োগ।
