ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২০ লাখ টাকায় বিক্রি হলো জয়নুলের সেই ছবি

প্রকাশিত: ০১:০৯, ৭ জুন ২০২০

২০ লাখ টাকায় বিক্রি হলো জয়নুলের সেই ছবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা সেই ছবি বিক্রি হলো ২০ লাখ টাকায়। শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত নিলামে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও, শেষতক এটি কিনে নেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সংগ্রাহক মোহাম্মদ আজিজ খান। ছবি বিক্রির সমুদয় অর্থ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষ ও দুস্থ শিল্পীদের সহায়তায় দান করা হবে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, রাত ৮টায় নিলামের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। একাধিক ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করা হয় পুরো কার্যক্রম। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি, জয়নুল আবেদিন ও তার শিল্পকর্ম সম্পর্কে আলোচনা করতে এ সময় সরাসরি যুক্ত হন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী, সৈয়দ আজিজুল হক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন। তার আগে নিলামে ওঠা ছবি সম্পর্কে তথ্য দেন জয়নুল আবেদিনের পুত্র প্রকৌশলী ময়নুল আবেদিন। তিনি জানান, আরব লীগের আমন্ত্রণে ১৯৭০ সালে শিল্পাচার্য জর্দান, সিরিয়া, লেবানন ও ইজিপ্ট সফর করেন। এসব দেশে ফিলিস্তিনীদের ক্যাম্প পরিদর্শন করে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের ছবি আঁকেন তিনি। একই সময় একটি স্কেচবুকে বেশ কিছু ড্রইং করেন। ছোট স্কেচবুক হলেও এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। করোনায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা থেকে আমরা পরিবারের সদস্যরা একটি ছবি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি। বাবা জয়নুল আবেদিনের মানবিক আদর্শে উজ্জীবিত হয়েই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি। স্কেচটির মাপ ৮.৪ বাই ৪.৫ ইঞ্চি। ঘোড়ার গাড়ি করে কয়েকজন যাত্রী মালামালসহ গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। এই যাত্রার দৃশ্য নিজের সঙ্গে থাকা স্কেচবুকে জলরঙে তুলে নিয়েছিলেন জয়নুল। ছবির ওপরে ডান কোণে জয়নুল আবেদিনের স্বাক্ষর করা। তারিখও উল্লেখ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, ১৯৭০ সালের মে মাসেই ছবি আঁকা হয়। ক্ষুদ্র আকারের ছবিটির ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ৮ লাখ টাকা। তবে বিডিং শুরু হলে দামও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে নিলাম পরিচালনাকারী ও উপস্থাপক জানান, মূল্য বেড়ে হয়েছে ৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এর পর কিছু সময় বিডিং কম হলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমুল প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। ছবিটি নিজের করতে অনেকেই প্রাণপণ চেষ্টা চালান। তবে বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানের আগ্রহ ছিল চোখ পড়ার মতো। ক্রমাগত বিড করে যাচ্ছিলেন তিনি। অন্য বিডাররাও ক্ষান্ত দিচ্ছিলেন না। এভাবে ছবির অর্থ মূল্য গিয়ে দাঁড়ায় ২০ লাখে। সর্বোচ্চ বিডার হিসেবে ছবিটি সংগ্রহ করেন আজিজ খানই। তাৎক্ষণিক সবাই তাকে অভিনন্দিত করেন। জবাবে লাইভে যুক্ত হয়ে আজিজ খান বলেন, আমার জন্য তো এটা (শিল্পাচার্যের আঁকা ছবি) অমূল্য। আমি কোন মূল্য দিয়ে কিনিনি। আমি ভাগ্যবান যে, এটি পেয়েছি। এ সময় মিষ্টি একটি হাসি ছিল তার ঠোঁটে। তিনি বলেন, ছবিটির জন্য আমি প্রথমে ১৬ লাখ টাকা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিলাম। পরে দেখলাম, দাম আরও বাড়ছে। শেষতক ২০ লাখ পর্যন্ত গেল। ছবি কিনতে পারার আনন্দ প্রকাশ করার পাশাপাশি তিনি বলেন, করোনার সময় বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অসহায়ের মতো জীবন-যাপন করছেন। এই অর্থ তাদের জন্য ব্যয় করা হবে। এমন একটি মহৎ উদ্যোগের অংশ হতে পেরে ভাল লাগছে বলে জানান তিনি। এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, এ ড্রইংটি সত্যি অসাধারণ। প্রবাসে শিল্পাচার্যের হাতে অত তো সময় ছিল না। চলতি পথে যেটুকু সময় পেয়েছেন, এঁকেছেন। তার পরও কী অসামান্য শিল্পকর্ম হয়ে উঠেছে! সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, শিল্প মানুষের জন্য। কল্যাণের জন্য। শিল্পের আদর্শের সঙ্গে সত্য এবং কল্যাণের আদর্শকে যুক্ত করেছন জয়নুল আবেদিন। মানবতার কল্যাণে যুক্ত হওয়ায় শিল্পের সৌন্দর্য আরও বাড়ল বলে মন্তব্য করেন তিনি। অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, আমি অভিভূত হয়েছি এই ভেবে যে, ছবিটি দেশেই রয়ে গেল। আজিজ খান সমকালীন চিত্রকলাকে সব সময় প্রমোট করেন। আজও তাই করতে দেখলাম। তিনি এগিয়ে এসেছেন বলেই দেশে রয়ে গেল ছবিটি। এই অকশনের মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ছবি বেচা কেনাকে উৎসাহিত করা হলো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
×