ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় করে দেয়ার প্রবণতা যন্ত্রণাদায়ক ॥ মাশরাফি

প্রকাশিত: ২২:২৬, ৭ জুন ২০২০

বিদায় করে দেয়ার প্রবণতা যন্ত্রণাদায়ক ॥ মাশরাফি

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়ানডে থেকে এখনও অবসর নেননি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে এই অবসর নিয়ে চাপে ছিলেন। সেই চাপ মাশরাফিকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। এই চাপে কষ্টের কথা নিজেই জানিয়েছেন। বিশ্বকাপের পর থেকেই মাশরাফির অবসর নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। সবদিক, এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) মাশরাফিকে অবসর নেয়ার জন্য আকারে-ইঙ্গিতে চাপ দিতে থাকে। আনুষ্ঠানিকভাবে মাশরাফি এখনও অবসর নেননি। তবে ওয়ানডে নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তবে মাঠ থেকে মাশরাফি অবসর নেবেন, এর কোন নিশ্চয়তা নেই। তিনি যে সেই নিশ্চয়তা দেননি। অনিশ্চয়তাতেই রেখেছেন। এতদিন এই সব কিছু নিয়ে চুপ ছিলেন। এখন মুখ খুলেছেন। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এই দলনেতা জানিয়েছেন, ‘সত্যি বলতে কি মনে হচ্ছে সবার মধ্যে আমাকে বিদায় করে দেয়ার তাড়া দেখা যাচ্ছে এবং এটা খুব যন্ত্রণাদায়ক।’ মাশরাফিকে দল থেকে বাদ দিতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ম্যানেজমেন্ট এবং অবসর গ্রহণে বাধ্য করার জন্য চাপ দিয়েছিল। আর এতে ‘কষ্ট’ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি। অনেক আশা ছিল শেষ চারে খেলার। কিন্তু পারেনি। দল সেমিফাইনালে উঠতে না পারা এবং মাশরাফির নিজের নৈপুণ্যও আশানুরূপ না হওয়ায় এই চাপের সূত্রপাত ঘটে। তারপরও খেলা চালিয়ে গেছেন। গত মার্চে অধিনায়ক হিসেবে নিজের শেষ সিরিজ খেলে ফেলেছেন মাশরাফি। তবে অবসর এখনও নেননি। টেস্ট খেলেন না। টি২০ থেকে ২০১৭ সালেই অবসর নিয়েছেন। ওয়ানডে খেলা এখনও চালিয়ে যাওয়ার আশা আছে মাশরাফির। ওয়ানডেতে মাঠ থেকে অবসর নাও নিতে পারেন তিনি। ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ যে কষ্ট পেয়েছেন। মাশরাফি এ নিয়ে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমাকে বিদায় জানানোর জন্য তাদের (বিসিবির) একটা বিদায়ী ম্যাচ আয়োজন করা উচিত ছিল এবং এটা কোন সাধারণ ম্যাচ নয়-সাধারণ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এক ব্যাপার এবং তাড়াহুড়ো করে একটা বিশেষ ম্যাচ আয়োজন আলাদা ব্যাপার।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘দ্বিতীয়ত, তারা ওই ম্যাচের (জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে) জন্য ২ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিল। এইদিক থেকে এটাকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলা যায় না, কারণ প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের খেলোয়াড়রা যথেষ্ট বেতন পায় না।’ মাশরাফি আরও বলেন, ‘তারা আমার বেতন নিয়ে কথা বলেছে, তাদের প্রশ্ন কোন রিটার্ন ছাড়াই কেন বোর্ড আমাকে বেতন দেবে? আমি কি তাহলে ১৮ বছর শুধু টাকার চিন্তা করে খেলেছি? আমি যদি টাকার কথা চিন্তা করতাম, তাহলে আমার হাতে তখন অনেক সুযোগ ছিল। আমি টাকার জন্য ক্রিকেট খেলিনি। শুধু তাই না, তারা গুজব ছড়ায় বিশ্বকাপে নাকি বাংলাদেশ দল সাড়ে নয়জন খেলোয়াড় নিয়ে খেলেছে। আপনার কি মনে হয়, এটা আমার প্রাপ্য?’ নিজের ব্যাপারটাও বুঝতে বলেছেন মাশরাফি, ‘হয়তো বোর্ড আমাকে ভালভাবে বিদায় জানাতে চেয়েছিল। কিন্তু আপনাকে আমার ব্যাপারটাও ভেবে দেখতে হবে। আমার শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়া নিয়েও কথা হলো। আমি ইনজুরিতে না পড়লে আমি শ্রীলঙ্কা সফরে যেতাম। হঠাৎ করেই আমাকে বিদায় করে দেয়ার তাড়া শুরু হয়ে গেল। আমি শুধু এটাই জানি আমি ক্রিকেটের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছি, যদিও আমার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল এবং হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। টাকাই যদি সব হতো, আমি অনেক কিছুই করতে পারতাম। যখন ইনজুরির কারণে আমার ক্যারিয়ার শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল, এমনকি আমি ইন্ডিয়ান সুপার লীগেও (আইসিএল) খেলতে যাইনি, অথচ সেখানে খেলার জন্য ৮ কোটি টাকা অফার করা হয়েছিল। আমি তা করিনি। আমি জীবন দিয়ে ক্রিকেট খেলেছি এবং হয়তো আমি কিংবদন্তি খেলোয়াড় হতে পারিনি, কিন্তু যোগ্য সম্মানটা তো আমার প্রাপ্য।’ মাশরাফির কথাবার্তাতেই বোঝা যাচ্ছে, অবসর নিয়ে চাপে কতটা কষ্ট তিনি পেয়েছেন।
×