ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পর্কে বরফ গলার ইঙ্গিত ॥ যুক্তরাষ্ট্র-ইরান

প্রকাশিত: ২১:২৪, ৭ জুন ২০২০

সম্পর্কে বরফ গলার ইঙ্গিত ॥ যুক্তরাষ্ট্র-ইরান

যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন বন্দী থাকা দুই ইরানী নাগরিক, এরপর ইরানে বন্দী থাকা এক মার্কিন সৈন্যের মুক্তির পর দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চির বৈরী দেশ ইরানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। ইরানে করোনা আক্রান্ত মার্কিন নৌসেনা মিশেল হোয়াইট ইরান থেকে মুক্তির পর সুইস সামরিক বিমানে জুরিখ পৌঁছেছেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের এক সিনিয়র কর্মকর্তা তাকে অভ্যর্থনা জানান। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মাসহাদ নগরীতে সাবেক এই নৌসেনাকে ইরানবিরোধী প্রচার চালানোর অভিযোগে আটক করা হয়।- খবর এএফপি ও তেহরান টাইমসের এই নৌসেনার মা জোয়ানি হোয়াইট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দুঃস্বপ্নের অবসান হয়েছে এবং আমার ছেলে নিরাপদে বাড়ি ফিরছে এই ঘোষণায় আমি আনন্দিত। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি হোয়াইটের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং ইরানের অনেক প্রশংসা করেছেন। কয়েক মাস আগেও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। ট্রাম্প টুইটারে লিখেছেন, ‘ইরানকে ধন্যবাদ, এতে দেখা যায় দেশটির সঙ্গে সমঝোতা করা সম্ভব! যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বিচারক ইরানিয়ান আমেরিকান ডাঃ মজিদ তাহেরিকে ইরানে তার পরিবারের কাছে যাওয়ার অনুমতির আদেশের পরে হোয়াইট ইরান থেকে মুক্তি পেয়ে দেশের পথে যাত্রা করেন। একদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে আটক আরও এক ইরানিয়ান বন্দী বিজ্ঞানী সাইরাস আসগারি মুক্তি পেয়ে ইরানে ফিরেছেন। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একাডেমিক সফরের সময় তিনি গ্রেফতার হন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাবেদ জাফরি টুইটারে লিখেছেন, ‘এটি সকল বন্দীদের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। ফায়দা নেয়ার চেষ্টার দরকার নেই। উল্লেখ্য, গত বছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চুক্তি থেকে বের আসে। এরপর দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে ওঠে। চলতি বছরের প্রথম দিকে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পর দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সমানুপাতিক জবাব দিতে ইরান প্রস্তুতি নেয়। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আমির হাতামি বলেন, ইরাকে মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধের প্রতিক্রিয়া সমানুপাতিক হারে দেয়ার অঙ্গীকার করে ইরান। মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানী কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানির হত্যার প্রতিশোধ নিতে মার্কিন স্থাপনায় তেহরানের হামলার কথা উল্লেখ তিনি বলেছিলেন আমরা স্বল্পমাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছি। আমি আশা করছি এটি আমেরিকার জন্য স্মরণীয় শিক্ষা হবে। এ সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে সন্ত্রাসী সরকার বলে উল্লেখ করেন। কাসেম সোলেইমানির হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন জোটের বিমান ঘাঁটি ‘আইন আল-আসাদ’সহ অন্য একটি ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। একের পর এক ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য অসংখ্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ঘাঁটিটিকে গুঁড়িয়ে দেয় ইরানী সামরিক বাহিনী। এতে ৮০ মার্কিন সেনা নিহতের দাবি করে ইরান। তবে ট্রাম্প এ হামলার প্রতিক্রিয়া জানান, সব ঠিক আছে। এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের তীব্র উত্তেজনা চলে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন কাসেম সোলেইমানির মেয়ে জয়নব। বাবার জন্মস্থান কেরমান শহরে জুমার নামাজের খুতবার আগে দেয়া ভাষণে তিনি এ হুমকি দিয়েছিলেন। প্রথা অনুযায়ী এ সময় সোলেইমানির মেয়ের হাতে অস্ত্র ছিল। ইরানে জুমার নামাজের ভাষণ ও খুতবার সময় পাশে একটি রাইফেল রাখা হয়। খতিব নিজেও রাইফেলটি এক হাতে ধরে রাখেন।
×