ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিকদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য ও অবস্থান ঘোষণার দাবি জাসদের

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ৬ জুন ২০২০

শ্রমিকদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য ও অবস্থান ঘোষণার দাবি জাসদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঐতিহাসিক ৭ জুন ৬ দফা দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফার সমর্থনে ১৯৬৬ সালের হরতাল এবং এই হরতালে ছাত্র-যুবকদের পাশাপাশি তেজগাঁ-ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ-আদমজী-নারায়ণগঞ্জ-টঙ্গীর শ্রমিকদের মারমুখী অংশগ্রহণ এবং মনু মিয়া, আবুল কালাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জের ৬ জন শ্রমিকসহ ১১জন শ্রমিকের রাজপথে লড়াই করে বীর আত্মবলিদান। পাকিস্তানি প্রায় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগ্রামকে নতুন উচ্চতা ও গভীরতা দান করে। শনিবার দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠনো বিবৃতিতে জাসদ নেতৃদ্বয় বলেন, ৭ জুনে জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেনীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও মারমুখী ভুমিকা জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম-স্বাধিকার সংগ্রাম-স্বায়ত্বশাসনের সংগ্রামকে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙ্গে ও অতিক্রম করে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাবার পথনির্দেশ করে দিয়েছিল। জাসদ নেতৃদ্বয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তৎকালীন আন্তর্জাতিক-আঞ্চলিক ও পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ঐতিহাসিক ৬ দফা প্রণয়ন ও ঘোষণার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু অতি উচ্চ মেধা ও সুক্ষ্ম রাজনৈতিক কৌশলের প্রয়োগ করেছিলেন। পাকিস্তানিদের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ৬ দফা প্রত্যাখ্যান করা কিংবা মেনে নিয়ে হজম করা সম্ভব ছিল না। বরং ৬ দফা পশ্চিম পাকিস্তানের অভ্যন্তরেই জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামকেও শক্তি যুগিয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে আধুনিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল, ৬ দফার মধ্য দিয়ে সেই ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক রূপ লাভ করেছিল। জাসদ নেতৃদ্বয় বলেন, ৬ দফা ঘোষণার বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃবৃন্দকে কারাবন্দী করা হয়, বাইরে থাকা অন্যান্য নেতাদের দোদুল্যমানতা, অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও নেতাদের বিরোধিতা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরম শূন্যতার মধ্যে স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস হিসাবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থী ধারার নেতাকর্মীদের সুদূরপ্রসারী চিন্তা, দুঃসাহসিক ভুমিয়া ও অক্লান্ত পরিশ্রমেই ৬ দফার পক্ষে শ্রমিক শ্রেণী, বস্তিবাসীসহ সাধারন মানুষকে এর পক্ষে টেনে আনা ও ৭ জুনের হরতালে রাজপথে মারমুখী সংগ্রামে অবতীর্ণ করা সম্ভব হয়েছিল। তারা ঐতিহাসিক ৭ জুনে স্বাধীনতার নিউক্লিয়াসের তিন কান্ডারি সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমেদসহ তৎকালীন ছাত্রলীগের বিপ্লবী ধারার নেতা-কর্মীদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান। এদিকে দলের পক্ষ থেকে অপর বিবৃতিতে বলা হয়, বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হকের শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বক্তব্য রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক ও উস্কানিমূলক। দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিজিএমইএ'র সভাপতি রুবানা হকের শ্রমিক ছাঁটাই বিষয়ক বক্তব্য রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক ও উস্কানিমূলক। তারা বলেন, বৈশ্বিক ও জাতীয় দুর্যোগের মধ্যে কিভাবে শিল্প কলকারখানা চলবে, শ্রমিকদের চাকুরি ও জীবিকা রক্ষা হবে তা নিয়ে দেশে সরকারসহ অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সম্প্রদায়ও সচেতন আছেন এবং ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সরকার শ্রমিকদের বেতনের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। ইইউ ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। বাতিল হওয়া রপ্তানি কার্যাদেশ বৈদেশিক ক্রেতারা পুনর্বহাল করেছেন। এরকম পরিস্থিতিতে রুবানা হকের অসত্য বক্তব্য দিয়ে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের হুমকি দেয়া পরিস্থিতি ঘোলাটে করার রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি ও উস্কানি ছাড়া আর কিছুই না। তারা বলেন, দুর্যোগকালে শ্রমিক ছাঁটাই করা যায় না। এব্যাপারে আইএলও কনভেনশনসহ সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইন আছে। সরকারের সাথে কোনো সামন্বয় ছাড়া রুবানা হকের যা ইচ্ছা তাই বলার কোনো এখতিয়ার নাই। বিজিএমইএ'র সভাপতি বা কারখানার মালিক হওয়া মানে শ্রমিকদের বা দেশের মালিক হওয়া না। তারা বলেন, এর আগে সরকারের সাথে কোনো সমন্বয় ছাড়া রুবানা হক নিজের ইচ্ছামত কারখানা একবার খোলা, একবার বন্ধ করার ঘোষণা দিয়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে অবর্ননীয় অমানবিক দুর্দশার মধ্যে ফেলেছিলেন। তারা বলেন,রুবানা হকের শ্রমিকদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে হবে। তারা আরও বলেন, বছরের পর বছর ধরে সরকারি প্রণোদনা ও সব ধরনের সুযোগ সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভোগ করার পরও শ্রমিকের বেতন-ভাতার প্রশ্ন আসলেই নিজেদের ভিক্ষুক দাবি করে শ্রমিকদের সব দায়দায়িত্ব সরকারের উপর চাপিয়ে দেয়ার এই নির্লজ্জ অমানবিক আচরণ বন্ধ করতে হবে। তারা বলেন, যে মালিকরা বছরের পর বছর শ্রমিকের শ্রমে সীমাহীন সম্পদ-বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া তারা জাতীয় দূর্যোগে দেশের জনগণের প্রতি তো কোনো সামাজিক দায়িত্ব পালন করেনি। তারা শ্রমিকদের প্রতিও কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। জাসদ নেতৃদ্বয়, শ্রমিকদের নিয়ে মালিকদের ছিনিমিনি খেলার বিরুদ্ধে সরকারের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য ও অবস্থান ঘোষণার দাবি জানান।
×