ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোটেশন প্রথায় লঞ্চ চালানোয় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

প্রকাশিত: ২২:০৯, ৫ জুন ২০২০

রোটেশন প্রথায় লঞ্চ চালানোয় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ জীবন আগে না ব্যবসা আগে। করোনার মহাদুর্যোগের মধ্যেও লঞ্চ মালিকদের কাছে ব্যবসাই আগে। তাই রোটেশন প্রথার মাধ্যমে পূর্বের তুলনায় কমসংখ্যক লঞ্চ চলাচলের কারণেই যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে চিরদিনের জন্য রোটেশন প্রথা বাতিল করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীদের চলাচলের সুযোগ করে দেয়ার জন্য সচেতন নাগরিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সূত্রমতে, করোনা প্রতিরোধে টানা ২ মাস ৭ দিন পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। লকডাউন শিথিলের পর থেকেই বরিশাল লঞ্চঘাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই যাত্রীচাপ সামাল দিতে না পেরে প্রতিদিনই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে নির্ধারিত সময়ের একঘণ্টা আগে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো বরিশাল নদী-বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য করছে প্রশাসন। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন ও লঞ্চ চলাচলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ ঘোষণার পর থেকেই বরিশাল নদী-বন্দরে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে লঞ্চ এবং বিআইডব্লিউটিএ’র পূর্ব প্রস্তুতি থাকলেও যাত্রীদের চাপে তা ভেঙ্গে পড়ে। এদিকে শুরু থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চগুলো যাত্রী তুলছে কিনা এবং লঞ্চঘাটে কতটা স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে তা মনিটরিং করছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু যাত্রীদের চাপ এতটাই বেশি যা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। আর তাই প্রতিদিন উপচেপড়া ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবার আশঙ্কায় ডেকে যাত্রী তোলা বন্ধ করে নির্ধারিত সময়ের আগেই লঞ্চগুলোকে ঘাট ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এরপরও লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। সরেজমিনে দেখা গেছে, লঞ্চঘাট এলাকায় যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ কঠোর অবস্থানে। কিন্তু দেশের এই করোনা দুর্যোগের মধ্যেও যাত্রীরা অনেকেই এ বিষয়ে উদাসীন। মাস্ক না পরে এবং সামাজিক দূরত্ব না মেনে লঞ্চে যাতায়াত করছেন অধিকাংশ যাত্রী। বিআইডব্লিউটিএ জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আগে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি লঞ্চ চলাচল করত। বর্তমানে মাত্র চার থেকে ছয়টি লঞ্চ চলাচল করছে। লঞ্চে ঢাকাগামী একাধিক যাত্রী বলেন, সামাজিক দূরত্ব আমরাও মেনে চলতে চাই। কিন্তু ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে লঞ্চ চলাচলের সংখ্যা খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে যাত্রা করতে হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক ও নদী-বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, করোনা সংক্রমণের আগে নিয়মিত যে হারে লঞ্চ চলাচল করত বর্তমানে তা কমে এসেছে। এরমধ্যে পারাবত লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মচারীদের নিরাপত্তার জন্য লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে। তিনি আরও বলেন, লঞ্চে একই পরিবারের পাঁচজন যাতায়াত করলে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব কোনটাই বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে লঞ্চে মাস্কের ব্যবহার ৯৫ ভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি এই কর্মকর্তার।
×