ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণীদের আচরণে নজর রাখা হচ্ছে

সংক্রমণের ভয়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা শীঘ্র চালু হচ্ছে না

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ৬ জুন ২০২০

সংক্রমণের ভয়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা শীঘ্র চালু হচ্ছে না

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বিধিনিষেধ মানার শর্তে সবকিছুই সীমিত পরিসরে চালু করা হলেও দেশের অন্যতম শিক্ষনীয় ও দর্শনীয় স্থান ঢাকা চিড়িয়াখানা শীঘ্র চালু করা যাচ্ছে না। প্রাণী দেহ থেকে প্রাণী দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে এক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। চিড়িয়াখানা এখনই দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হলে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মারাত্মকভাবে বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে; যা দর্শনার্থী ও চিড়িয়াখানার প্রাণীর জন্য মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। প্রাণী দেহ থেকে প্রাণী দেহে কিভাবে করোনাভাইরাস ছড়ায় সে ব্যাপারে ঢাকার সাভারের প্রাণী গবেষণাগারে বিস্তর গবেষণা চলছে। গবেষণা রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার বিষয়টি। এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক প্রাণী চিকিৎসক নূরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে আরও জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ঢাকা চিড়িয়াখানার প্রাণীদের ওপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। কোন প্রাণী অস্বাভাবিক আচরণ করছে কিনা বা অসুস্থতার লক্ষণ আছে কিনা সে বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। চিড়িয়াখানার মাংসাশী প্রাণীর ক্ষেত্রে নজরদারি করা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কারণ চীনের উহানের একটি প্রাণীর বাজার থেকে করোনাভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে বিভিন্নভাবে দাবি করা হচ্ছে। এজন্য চিড়িয়াখানার প্রাণীদের রক্ষণাবেক্ষণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকলেও যাবতীয় কর্মকা- অব্যাহত আছে। চিড়িয়াখানায় কর্মরতদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। নিরাপদ দূরত্বে থেকে প্রাণীদের রক্ষণাবেক্ষণসহ খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন দুই বেলা চিড়িয়াখানায় জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। যদিও প্রাথমিকভাবে বাদুড় ও বনরুই নামের দুটি প্রাণীর দেহ থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে বিভিন্ন সময় দাবি করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা চিড়িয়াখানায় এ দুটি প্রাণী নেই। চিড়িয়াখানায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রুটিনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে, যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে। তিনি জানান, চীনের উহানের একটি প্রাণীর বাজার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, এমন তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর পরই চিড়িয়াখানার প্রাণীদের বিষয়ে সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের সঙ্গে কথা হয়। প্রাণী চিকিৎসক হিসেবে প্রাণী দেহ থেকেই যে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে সেটি কোন্ প্রাণী সেটি গবেষণার বিষয়। এখনই হয়ত সেটি বলা সম্ভব নয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ২ হাজার ৭শ’ ৭৮টি প্রাণী আছে। প্রতিবছর এসব প্রাণীর খাবারের জন্য খরচ হয় আট কোটি টাকা। তুলনামূলক বেশি খরচ হয় মাংসাশী প্রাণীর জন্য। সব মিলিয়ে প্রতিমাসে পৌনে এক কোটি টাকা খরচ হয়। এসব প্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সকালের পালায় ৭০ জন কাজ করেন। আর বিকেলের পালায় কাজ করেন ৫০ জন। অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্যান্য দায়িত্ব পালন করেন। প্রাণীর খাঁচা ও তার আশপাশে ভালভাবে স্প্রে করা হচ্ছে। চিড়িয়াখানার খালি জায়গায়ও জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। সবচেয়ে বেশি স্প্রে করা হয় মাংসাশী প্রাণীর বসবাসের খাঁচা ও তার আশপাশের এলাকা। তিনি বলছিলেন, মাংসাশী প্রাণীরা অন্য প্রাণী খায়। সেই প্রাণীই হয়ত আবার মানুষের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরই মধ্যে হয়ত কোন প্রাণীতে ভাইরাসটি লুকিয়ে থাকে। ভাইরাসযুক্ত প্রাণী খাবার কারণে ভক্ষণকারী প্রাণী আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সময় অনেকেই কৌতূহলবশত কোন কোন প্রাণীর খুব কাছাকাছি চলে যান। চিড়িয়াখানায় এ ধরনের নির্দেশনা থাকলেও অনেক দর্শনার্থী তা মানেন না। লুকিয়ে মাংসাশী বা এ জাতীয় প্রাণীর সঙ্গে ছবি তোলেন, যা সত্যিই খুবই বিপজ্জনক। আর এভাবেই প্রাণী দেহ থেকে প্রাণী দেহে ভাইরাস সংক্রমিত হওয়া বিচিত্র নয়। প্রাণীরা আগের যেকোন সময়ের তুলনায় ভাল আছে। কারণ, তারা নিজের মতো করে বসবাস করতে পারছে। নিয়মিত খাবার পাচ্ছে। কেউ তাদের বিরক্ত করছে না। তারা আরাম-আয়েশ করতে পারছে। এমন সুযোগে কোন চক্র বা কেউ প্রাণী চুরির চেষ্টা করছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে। এজন্য অনেক জায়গায় সিসি ক্যামেরাও লাগানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি মোতাবেক চিড়িয়াখানা বন্ধ করা হয়। সম্প্রতি সীমিত পরিসরে অনেক কিছুই স্বাভাবিক করে দেয়া হলেও দর্শনার্থী ও প্রাণীদের ভাইরাসটি থেকে সংক্রমণ এড়াতে চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ঢাকার শাহবাগে তৎকালীন নবাবরা একটি ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানার গোড়াপত্তন করেন। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চিড়িয়াখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় চিড়িয়াখানাটি। ওই সময় সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্টের সামনে বর্তমান ঈদগাহ এলাকায় ৪ থেকে ৫ একর জায়গাজুড়ে ছোট আকারের একটি চিড়িয়াখানা স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৬১ সালে চিড়িয়াখানাটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, গবেষণা, বিনোদন ও প্রাণী সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা লাভের লক্ষ্য নিয়েই প্রতিষ্ঠিত করা হয় চিড়িয়াখানাটি। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে চিড়িয়াখানাটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানাটি ১৮০ দশমিক ৬০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। চিড়িয়াখানায় প্রবেশ মূূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। তবে শিশুদের চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে কোন ফি লাগে না। প্রতি রবিবার চিড়িয়াখানাটি বন্ধ থাকে।
×