ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতি

প্রকাশিত: ২১:০০, ৬ জুন ২০২০

স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতি

করোনাভাইরাসের চরম দুর্যোগে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার যে নাজুক চেহারা দৃশ্যমান হয়েছে সেখানে দুর্নীতির কার্যক্রমও সবার সামনে চলে এসেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জাম ক্রয় নিয়েও ব্যাপক অনিয়ম আর বিধিবহির্ভূত অবস্থা হতবাক হওয়ার মতোই। দেশের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চরম হুমকির মুখে যা মানুষকে নাড়া দিয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জামের অভাবে সম্মুখ সারির করোনা যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গণমাধ্যম কর্মীর আক্রান্ত হওয়াই শুধু নয়, প্রাণ সংহারের মতো মহাবিপর্যয় ঘটতেও সময় লাগেনি। যথেষ্ট পরিমাণ মানসম্মত স্বাস্থ্য সুরক্ষার পণ্যের অভাবে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সঙ্গত কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হয়ে এসব সুরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে এগিয়ে এলেও যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে অসঙ্গতিও দৃশ্যমান হতে সময় লাগছে না। করোনার চলমান সঙ্কটের মানবিক বিপর্যয়ের দুঃসময়ে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রীর যে অনিয়ম আর অতিরিক্ত ব্যয়ের চিত্র উঠে আসছে তাতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃৃপক্ষ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়ভাগ সব থেকে বেশি, মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই কিংবা গগলসের বাজার মূল্য কারও অজানা নয়। আর সব থেকে বেশি জানে স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনা সঙ্কটকালে প্রমাণ হয়েছে আমাদের শুধু চিকিৎসা পদ্ধতিই নয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থাপনায়ও রয়েছে যথেষ্ট ঘাটতি আর ত্রুটিবিচ্যুতি। এসবের যথার্থ নিরসনে শুধু বাজেট বরাদ্দই যথেষ্ট নয়, একই সঙ্গে জরুরী সুষ্ঠু পরিচালনা এবং দক্ষ মানব সম্পদের নির্ধারিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন। এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় চিকিৎসা ও সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ দুর্নীতির মতো কালো থাবার গ্রাস হলে কারোনা দুর্যোগ সর্বনাশার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। এমন সমালোচনাও উঠেছে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী কেনার চেয়ে অপেক্ষাকৃত অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে বেশি নজর দিতে গিয়ে টাকার অপচয় করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার যে ব্যয় দেখানো হয় তাতে বাজার মূল্যের চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশি অর্থ প্রদর্শন করা হয়। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে টাকার অঙ্ক বাড়ানোর যে হীন মনোবৃত্তি সেটি দমন করা চাই। সার্বিক বিষয়েই কঠোর নজরদারি একান্ত আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা সামগ্রী উৎপাদক সংস্থাসমূহের তথ্যে জানা যায় ৫০০ টাকার ওপরে কোন গগলস বিক্রি হয় না। আর ২০০০ টাকাই পিপিইর আসল দাম। আন্তর্জাতিক মানসম্মত এসব সুরক্ষা পণ্য উৎপাদন করা দেশীয় ওষুধ সংস্থার মতে অতিরিক্ত দামে কেনার কোন অবকাশই থাকে না। তার পরেও বাজার মূল্য কেন এত বেশি তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ৫শ’ টাকার গগলস ৫ হাজার আর ২ হাজার টাকার পিপিই ৫০০০ টাকা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অর্থ যোগানদাতা সংস্থাগুলোর ঋণ সহায়তা ছাড়া বর্তমান ২০২০-২১ সালের বাজেটেও স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শ ও সুপারিশ এসেছে বিশিষ্ট জন ও গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন থেকে। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো আবশ্যক হয়ে উঠেছে অন্য বারের তুলনায়। বাজেট এবং ঋণ সহায়তার টাকা কোথায় কিভাবে খরচ করা হবে তাতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা অত্যন্ত জরুরী। আর তেমন প্রেক্ষাপটে দক্ষ, সৎ ও কর্মক্ষম জনশক্তির বিকল্প নেই। বাজার মূল্যের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেনা সামগ্রীর আকাশ-পাতাল ফারাক কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এসব তদন্ত করাও সময়ের দাবি। এমনিতে দেশ এখন করোনা দুর্যোগে বেহাল অবস্থায়। সেখানে চিকিৎসা ও সুরক্ষা সামগ্রীর নয়-ছয় এক অশনিসঙ্কেত বহন করছে। করোনার সঙ্গে সঙ্গে এমন দুর্বিপাক থেকেও দেশবাসীকে রক্ষা করা চাই।
×