ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্র সম্পদ

প্রকাশিত: ২১:০০, ৬ জুন ২০২০

সমুদ্র সম্পদ

সমুদ্র ও অন্যান্য জলজ সম্পদের টেকসই ব্যবহারে বৈশ্বিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরী। বিষয়টি সম্পর্কে সরকার সম্পূর্ণ সজাগ ও সচেতন। বুধবার ভিডিও কনফারেন্সে জেনেভায় ‘ভার্চুয়াল মহাসাগর সংলাপ’-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতায় এ সংক্রান্ত নতুন সম্ভাবনার দিকটি উঠে এসেছে। তিনি সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহারে বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য তিন দফা প্রস্তাব পেশ করে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সমুদ্র কর্মকান্ডে তাদের প্রতিশ্রুতি নবায়ণের আহ্বান জানিয়েছেন। এতে দেশের সুনীল অর্থনীতিতে নতুন প্রাণসঞ্চার হবে বলে আশা করা যায়। প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম প্রস্তাবে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, সক্ষমতা ও প্রযুক্তিসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তার আহ্বান জানান। দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি আঞ্চলিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অবৈধ, অননুমোদিত ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্যসম্পদ নির্মূল বন্ধের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মৎস্য উন্নয়ন বিষয়ে যৌথ গবেষণা পরিচালনার ওপর জোর দেন। তৃতীয় প্রস্তাবে উপকূলীয় বাসস্থান ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মাছের উৎস চিহ্নিতকরণ এবং এর ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। প্রতিটি প্রস্তাবই যুগোপযোগী এবং তাৎপর্যপূর্ণ। স্মরণযোগ্য গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকায় তৃতীয় আইওআরএ সমুদ্র অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে টেকসই সমুদ্র অর্থনৈতিক বেষ্টনী গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যথার্থই উল্লেখ করেছিলেন, সমুদ্র অর্থনীতিকে সামনে রেখে সমুদ্রে অব্যবহৃত ও এর তলদেশে অ-উন্মোচিত সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে এই অঞ্চলে যার যার টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করার সুযোগ রয়েছে। সমুদ্র জয়ের পর বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে। সমুদ্রে জরিপ, গবেষণা ও সম্পদ অনুসন্ধানে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরকে (জিএসবি) সরকার নির্দেশনাও প্রদান করেছে। এটা ঠিক যে, বিশাল সমুদ্রসীমা জয়ের ফলে বাংলাদেশের সামনে জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও বন্দরসুবিধা বৃদ্ধি, মৎস্য ও জলজ সম্পদসহ সমুদ্র তলদেশে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং পর্যটন ব্যবসা সম্প্রসারণ প্রভৃতি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর সমুদ্র বিষয়ে মহাপরিকল্পনা, জাতীয় নিরাপত্তা ও সম্পদ উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের কাজটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। যতটা জানা তার চেয়ে অনেক বেশি অজানা বিশাল সম্পদের আধার এই সমুদ্র। এই সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা এবং সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করতে হবে। বঙ্গোপসাগরে মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপন্থা প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মৎস্য উৎপাদনে নিজস্ব সক্ষমতা অর্জন করেছে। সরকার সমুদ্রের জৈব সম্পদ সংরক্ষণে মৎস্য আহরণের সব ধরনের ক্ষতিকারক পদ্ধতি ও উপায়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বলেই এক্ষেত্রে সফলতা আসছে। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানার মধ্যে শুধু বিপুল মৎস্য ভান্ডার নয়, রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের ভান্ডার। বিশেষ গঠন-প্রকৃতির কারণেই তেল-গ্যাসসহ নানা খনিজ সম্পদ সঞ্চিত রয়েছে এই সাগরের তলদেশে। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশই তাদের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূূচীর মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বাংলাদেশের মতো একটি উপকূলীয় রাষ্ট্রের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সমুদ্র পরিবহন ও বন্দর সহযোগিতা বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ, মৎস্য রফতানি, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ সর্বোপরি জীববিজ্ঞান ও সমুদ্রবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ার উত্তম সম্ভাবনা রয়েছে। সকল সম্ভাবনাকে সর্বোতভাবে কাজে লাগানোই এখন আসল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধি অত্যাবশ্যক। আমরা আগেও বলেছি সামগ্রিক বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিটাইম রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিমরাড) তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
×