কবিখ্যাত এই দেশে
দুখু বাঙাল
কুৎসিত শব্দেরা মাঝে মাঝে ঘিরে ফেলে ঠিক আমাকেই
বলা যায় শজারুর আলিঙ্গনে বিদ্ধ এক কবি
বীভৎস এই প্রাণীর মাঝে করি তবু ব্যাঘ্রের সন্ধান
অন্তত যুদ্ধ করে মরা যায় যদি
অতঃপর পরাজিত ষাঁড়ের মতো মানবপ্রাচীর ভেঙে
নদীর পথেই ছুটি, যে-নদী ভাঙ্গন ভুলে আমারেই ডাকে।
এখন স্বদেশজুড়ে শান্তিবাদ, পথে পথে মেধার সঙ্গিন
মোড়ে মোড়ে আলোভুখ বাতিঘর
ঘাটে ঘাটে শব্দভুখ অযাচিত কবি
তবু ছাই মননের সব আলো নীরবেই লুট হয়ে গেল
অথচ পশ্চাতে ছিল বীর্যময় দীর্ঘপথ, দীর্ঘপ্রাচীর
আগাগোড়া ছিল এক জ্বলজ্বলে রক্তের সোপান।
কবিখ্যাত এই দেশে কোনোমতে বেঁচে যাওয়া
কুৎসিত শব্দঘেরা আমি এক আওয়াজহীন নির্লজ্জ কবি।
** করোনা : ২
ফারুখ সিদ্ধার্থ
এই প্রথম কোনও অসুখে মানুষ হয়েও মানুষ নয়
লকডাউন কুঅরান্টিন আইসোলেশন স্যানিটাইজার
খারযুক্ত সাবানকেই অধিক আপন করে নিয়ে
সুখের অপেক্ষাÑ একাকী গভীর...
ছেলেবেলার ছুরির মতো এরা
বহুদিন পড়েছিল মরচে ধরা...
বহু ব্যবহারে আজ কত ধারালোÑ কত উজ্জ্বল!
করোনা ফিরিয়ে দিয়েছে এ-ঔজ্জ্বল্যÑ
কবিতাকে দিয়েছে শব্দের নতুন ফ্যাশন...
বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এ-নিঃসঙ্গ যাপিতজীবন
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তুব
সাম্যস্বপ্ন দেখাতে এসেছে পহেলা বৈশাখÑ
অসুখের মতো ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবের দিন...
** একলা ঘরের গান
অনিকেত সুর
জলের বুকে গল্প ছিল ঢেউ
বক্ষে তোমার সজল কোমল হাত
পাশের ঘরে গাইছিল গান কেউ
হাসনাহেনার মদ্যভরা রাত।
এক আকাশের স্বপ্ন-চোখে তুমি
নজর যখন ফেললে আমার মুখে
ধূসর পথের শ্রান্ত চলাগুলো
কনক সুরে উঠল বেজে সুখে।
আমার ছিল আয়নাজলের নদী
হঠাৎ কে সে নাম ধরে ডাক দিল
নদীর কথা শুনিয়েছিলাম তাকে
সেদিন এমন বৃষ্টি নেমেছিল!
আজকে আমি সেই সেদিনের গান
একলা ঘরে পেলাম যখন ছুটি
তোমার হাতেই সূর্য-ওঠা ভোর
বলছে হেসে গোলাপ কুঁড়ি দুটি
** যমদূতের রাশভারি
আফিফ জাহাঙ্গীর আলি
এখন আমার শহর লকডাউন
বাহিরে শূন্যতার কোলাহল
র্পদা সরানো জানালার স্বচ্ছ কাচ ভেদ করে দেখি।
কোভিড নাইন্টিন পৃথিবীব্যাপী
পারমাণবিক-মিশাইলÑ ক্ষেপণাস্ত্রের বড়াই চূর্ণ করে
দুনিয়া কাঁপানো আঘাত হেনেছে প্রাণঘাতী?
আগ্রাসনে বাড়ছে লাশের সারি?
বিশ্বজুড়ে যমদূতের রাশভারি!
সুখবর নেইÑ শেষ কোথায়?
** অসভ্যতার কবি হতে চাই
বাসু দেবনাথ
মাথার ভিতর পৃথিবীর চাকা ঘুরিয়ে দিলাম
সভ্যতার যুগ চলছে—
শুনতে পেলাম যুদ্ধ পরিকল্পনার গুঞ্জন,
শুনতে পেলাম ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না।
আরেকটু ঘুরিয়ে দেখি এক ধর্ষিতা নারী
বিচারের প্রহসনে নীরবে গোঙাচ্ছে -
দেখি বিদ্রোহীর কোণঠাসা দেহ।
রংবেরঙের নেশার দ্রব্য।
আরেকটু ঘুরিয়ে দেখি ধ্বংসের মহাকল
চলছে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক ক্লিকে
নাকি উড়ে যাবে পৃথিবীর বুক!
বিনামূল্যে লেখা হচ্ছে জীবনের দরপত্র।
আর সামনে যাওয়ার সাহস হয়ে ওঠেনি,
ওতটুকু দেখার সহ্যশক্তি ঈশ্বর আমায় দেয়নি।
এইবার পৃথিবীর চাকা একটু পিছনে ঘুরালাম
সভ্যতার যুগ যাকে অসভ্য বলে যায়।
অসভ্যতার যুগ চলছে...
দেখি এক শিশু ঘুমিয়ে আছে তার মায়ের বুকে
মিটিমিটি হাসছে।
চলছে লাউ আর কুমড়োর অদলবদল।
ঘরের দুয়ারে এক বিদ্রোহী প্রতিবাদী সুর তুলছে।
কেটে দেওয়া হয় এক ধর্ষকের শিশ্ন।
হতাশ হলাম এটাই কি সে অসভ্যতা!
তবে সভ্যতা কি?
- যা মাপার আগে দাঁড়িপাল্লায় লুকিয়ে ফেলা হয়।
তবে আমি অসভ্যতার কবি হতে চাই।
শীর্ষ সংবাদ: