ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চাহিদা বৃদ্ধি ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজি

চট্টগ্রামে অক্সিজেন সিলিন্ডারের তীব্র সঙ্কট

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ৫ জুন ২০২০

চট্টগ্রামে অক্সিজেন সিলিন্ডারের তীব্র সঙ্কট

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে বেহাল দশা যেমন অব্যাহত রয়েছে, তেমনি জীবনরক্ষার অপরিহার্য অনুষঙ্গ অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডারও মিলছে না। অক্সিজেনের অভাব না থাকলেও মূল সঙ্কট সিলিন্ডার নিয়ে। এর ফলে পাঁচগুণেরও বেশিমূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ ডিলার বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং এর মিটার সরবরাহ দিতে পারছে না। যারা পারছে তারাই পাঁচগুণেরও বেশি দাম হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধের জন্যও চলছে রীতিমতো হাহাকার। এসব ঘটনার নেপথ্যে ওষুধ ও অক্সিজেন সিলিন্ডার ও প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। এর পাশাপাশি পূর্বের তুলনায় ব্যাপকহারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সঙ্কট সৃষ্টি হয়ে বাড়তি মূল্যের চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমিত রোগীর মৃত্যু বাড়তে থাকায় এ রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত ওষুধ সামগ্রী ও জীবনরক্ষাকারী অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অক্সিজেন সরবরাহে কোন সঙ্কট নেই। করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আগে যে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার তিন হাজার টাকায় বিক্রি হতো এখন তা প্রায় ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সিলিন্ডারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা মিটারের মূল্য ছিল আগে সর্বোচ্চ ২২শ টাকা, তা বর্তমানে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বলা হচ্ছে, একদিকে এ জাতীয় পণ্য আমদানি হয়ে না আসা, অপরদিকে চাহিদা হঠাৎ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক হাত ঘুরে এ জাতীয় সামগ্রী গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর সময় তা কয়েকগুণ বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের পক্ষ থকে জানানো হয়েছে, আগে যেখানে সারামাসে ২-৩টি বিক্রি করত, এখন দিনে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০টি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারী বেসরকারী খাতে করোনা চিকিৎসার বেহাল অবস্থায় অপেক্ষাকৃত বিত্তবানরা নিজেদের উদ্যোগে এবং অর্থ ব্যয়ে করোনা চিকিৎসার উপায় খুঁজছেন। ফলে লকডাউন হওয়ার শুরুতে করোনা সংক্রান্ত ওষুধের বিক্রি বেড়ে যায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বহুগুণ বেশি। এরপর করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা চিত্র যখন বেরিয়ে আসতে শুরু করে তখন বিত্তবানরা শঙ্কিত হয়ে যান। ফলে তারা নিজেদের উদ্যোগে অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার, সঙ্গে ক্যানোলা ও অক্সিজেন মাস্ক কেনা শুরু করে দেয়। এ প্রক্রিয়ায় অসুস্থ রোগীরা ঘরে এসব ব্যবহার শুরু করে আবার আরেকটি গ্রুপ ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় থেকে মজুত করেছে। এর ফলে বাজারে তীব্র সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে এবং বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্য পাঁচগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। আর গত কয়েকদিন ধরে সিলিন্ডারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা মিটার একেবারেই মিলছে না। বলা হচ্ছে, কয়েকদিনের মধ্যে চীন থেকে আমদানির পণ্য চলে এলে বেড়ে যাওয়া মূল্য কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর মিটারসহ একটি সিলিন্ডার তিন হাজার টাকা থেকে বেড়ে গিয়ে সাড়ে ১১ হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়। এখন তা প্রায় ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডার কোন রকমে মিলানো গেলেও মিলছে না মিটার। আগে যেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার মিটার সর্বোচ্চ ২২শ টাকায় বিক্রি হতো তা এখন প্রায় ৬ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। আড়াই’শ টাকার অক্সিজেন মাস্কের মূল্য ৫শ টাকায় উন্নীত। অক্সিজেন গ্রহণের ক্যানোলার মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ৮০ টাকা, তা এখন ৩শ টাকা হয়েছে। এছাড়া অক্সিজেন মাপার যন্ত্র অক্সিমিটার আগে যেখানে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন চার হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। অপরদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও সংক্রমিতদের চিকিৎসায় চিকিৎসকরা যেসব ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দিতেন সেসব ওষুধের মূল্য দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। এর পাশাপাশি হ্যান্ডগ্লাভস, স্যানিটাইজার এমনকি ডেটল, স্যাভলনের দামও দ্বিগুণেরও বেশি। এ অবস্থায় সাধারণ চিকিৎসা প্রার্থীদের মাঝে রীতিমতো হাহাকার বিরাজ করছে। ঘরে ঘরে চলছে এক ধরনের জ¦র, যা আট থেকে দশদিন পর্যন্তও স্থায়িত্ব পেয়ে থাকে। এদের মধ্যে যারা সুযোগ পাচ্ছেন তারা করোনার পরীক্ষা করে নিচ্ছেন। আর যারা পারছেন না তারা এমনিতেই এন্টিবায়েটিকসহ জ¦র কমার ওষুধ গ্রহণ করছেন। এদের মধ্যেই কেউ সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন।
×