ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:০১, ৫ জুন ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ অঘোষিত লকডাউন তুলে দেয়া হয়েছে। খুলেছে সরকারী-বেসরকারী অফিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সবাই খুলেছে, সব কিছু খোলা, এমন নয়। তবে একটু একটু করে চেষ্টা হচ্ছে। ক্রমেই সচল হচ্ছে ঢাকা। সরকারী-বেসরকারী অফিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সীমিত উপস্থিতি। তবে কাজ চলছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দফতর অধিদফতরে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যার যার কাজ দ্রুত শেষ করে বাড়ি ফিরছেন তারা। এ ছবিটা একেবারেই নতুন। করোনা সতর্কতার অংশ হিসেবে এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর বাইরে সাধারণ মানুষ জীবিকা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে করোনার ভয়ে আতঙ্কে তারা ঢাকা ছেড়ে গিয়েছিলেন বটে। ফিরতেও হয়েছে দ্রুত। কাজে যোগ দিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তারা। শ্রমজীবী মানুষ আপাত যে কাজ পাওয়া যাচ্ছে তাই করছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা হয়েছে। আশপাশ এলাকার অনেকে জীবিকার জন্য ঢাকার মুখাপেক্ষি হন। তারাও সব কিছু খোলার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। এখন সবজি ফল গাভীর দুধ ইত্যাদি নিয়ে ঢাকায় ঢুকছেন তারা। ইন্দিরা রোডে কথা হচ্ছিল সাভারের এক দুধ বিক্রেতার সঙ্গে। নামই দ্রিস। বয়সে তরুণ। জানালেন, লকডাউনের আগে ঢাকার ১০টি বাসায় প্রতিদিন দুধ সরবরাহ করতেন তিনি। নিজের গাভী আছে। সেই গাভীর খাঁটি দুধ নিয়ে সাভার থেকে বাসে করে ঢাকায় আসতেন। কিন্তু সাধারণ ছুটি শুরুর আগেই তার দুধ দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রচুর দুধ নষ্ট হয়েছে। আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে তাকে। বর্তমানে সব কিছু চালু হওয়ার পর কোন কোন ‘কাস্টমার’ ফেরত পেয়েছেন। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি। নতুন করে শুরুর, ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে এভাবে বহু মানুষ প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় নামছেন। অবস্থাটি ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি এই করোনাভাইরাস থেকে আমাদের মানুষদের রক্ষা করতে। তবে যেহেতু অর্থনীতি একেবারে স্থবির অবস্থায় রয়েছে, আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখন উন্মুক্ত করছি, কারণ মানুষকে আমাদের তো বাঁচাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কথাতেও পরিষ্কার, বাঁচা এবং বাঁচানোর প্রয়োজনেই সচল হচ্ছে ঢাকা। অবশ্য কোভিড-১৯ এর ভয় কেটে গেছে এমনটি ভাবছেন না কেউ। বরং আশঙ্কা নিয়েই বাসার বাইরে বের হতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিন বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ৫৭ হাজার ৫৬৩। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৭৮১ জনের। ১২ হাজার ১৬১ জন সেরে উঠেছেন। এ অবস্থায় যতটা সম্ভব নিজেকে সুরক্ষিত রেখেই কাজ করছে মানুষ। গণপরিবহনে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। মাস্ক পরছেন রিক্সাচালকও। যেখানে সেখানে হাত দেয়া, গা ঘেঁষে দাঁড়ানো যথেষ্ট কমেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারেও বেড়েছে সচেতনতা। এদিকে সাধারণ ছুটির সময় সব কিছু বন্ধ থাকায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ঢাকার পরিবেশ প্রকৃতিতে। হাওয়া এখন নির্মল। দূষণের মাত্রা অনেক কমেছে। শব্দ দূষণ হচ্ছে না। গ্রীষ্মকালের গরমে টেকা দায় হয়ে যায়। অথচ এখন সেই অসহনীয় গরমটা নেই। একই কারণে ঢাকার সড়কগুলো ঝকঝকে। ময়লা করার কেউ তেমন নেই। আর ধুলো বালি কিছু জমলেও বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবারও কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে ঢাকায়। ভারি বর্ষণ। বৃষ্টি শেষে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখে একটা আরাম হলো। গাছের পাতা আশ্চর্য সবুজ। মনে হচ্ছিল কেউ বুঝি হাত দিয়ে জল ঢেলে ধুয়ে দিয়েছে।
×