ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার কারণে আম রফতানি অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ৫ জুন ২০২০

করোনার কারণে আম রফতানি অনিশ্চিত

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ বিশ্বজুড়ে করোনার প্রভাবে এবার বিদেশে রফতানি হচ্ছে না রাজশাহীর আম। করোনার কারণে এবার রাজশাহী অঞ্চলের সুস্বাদু ও রসালো আমের স্বাদ পাচ্ছেন না বিদেশীরা। গত কয়েক বছর থেকে রাজশাহীর রসালো আম ইউরোপ ও মধ্যপাচ্যের কয়েকটি দেশে রফতানি করা হতো। আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহীর আমের স্বাদ পেত ইউরোপ ও মধ্যপাচ্যের কয়েকটি দেশের প্রবাসী বাঙালী ও স্থায়ী নাগরিকরা। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে বিমান চলাচল না করায় আম বিদেশ যাচ্ছে না। জানা গেছে, রাজশাহীর আম দেশ ছাড়িয়ে ইউরোপ ও মধ্যপাচ্যের কয়েকটি দেশে অবস্থান করে নিয়েছিল। চাহিদার কারণে বাইরের কয়েকটি দেশে পাঠানো হতো রাজশাহীর আম। পুরো মৌসুম ধরেই এই আম যেত বিদেশে। অর্জন হতো বৈদেশিক মুদ্রাও। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও আশা ছিল আম রফতানি হবে। গত বছর যে আম পাঠানো হয়েছিল তার চেয়ে এবার অধিক পরিমাণ আম বাইরের দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সব ফ্লাইট বন্ধ। যার কারণে এবার বিমানে আম যাচ্ছে না। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামছুল হক জানান, গত কয়েক বছর থেকে রাজশাহীর আম ইউরোপ ও মধ্যপাচ্যের কয়েকটি দেশে পাঠানো হতো। গত বছর ৩৬ হাজার টন আম বাইরের দেশে পাঠানো হয়েছে। এর আগের বছরগুলোতেও আম পাঠানো হয়েছে, কিন্তু গত বছর এর পরিমাণ ছিল বেশি। এবার আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া ছিল আম পাঠানোর জন্য। কী কী আম পাঠানো হবে সেটাও নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বিমান না চলার জন্য এবার আম পাঠানো যাচ্ছে না। যার কারণে এবার বিদেশে আম রফতানি একেবারে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ইউরোপ ও মধ্যপাচ্যের কয়েকটি দেশে রাজশাহীর আমের চাহিদা অনেক বেশি। গত বছর চাহিদা থাকার পরও শেষ পর্যন্ত চাহিদার একাংশ আম পাঠানো হয়েছিল। এবার রাজশাহী অঞ্চলে আমের ফলন যেমন হয়েছে। বাইরের দেশে রফতানিযোগ্য আমের পরিমাণ এবার অনেক বেশি। কিন্তু কোনভাবেই বাইরের দেশে আম পাঠানো যাচ্ছে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে এবছরই প্রথম একেবারে স্বল্পমূল্যে দেশের মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় রাজশাহীর আম পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বল্পমূলে কুরিয়ার সার্ভিস ও দেড় টাকা কেজিতে ট্রেনে আম পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আম চাষীরা যেন কোন ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে এসব ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও এবার বিভিন্ন জায়গায় আম পাঠানোর জন্য যোগ হয়েছে ডাক বিভাগ। একেবারে বিনা মূল্যে ডাক বিভাগে ক্ষুদ্র আম চাষীদের আম রাজধানী ঢাকায় পাঠানো শুরু হয়েছে। বিদেশের বাজার ধরতে চলতি বছরেও অনেক চাষী ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদন করছেন। তবে এবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে দেখা দিয়েছে বিদেশে আম পাঠানো। বিদেশে রফতানির জন্য জেলায় এবার এক লাখ ১৫ হাজার আম ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া এলাকায় শফিকুল ইসলাম সানা নামের এক চাষী ১০ হাজার আমে ব্যাগিং করেছেন। পবার হরিপুর, কসবা এবং রাজশাহী মহানগরীর জিন্নানগরেও কিছু আম ব্যাগিং করা হয়েছে। কিন্তু চাষীরা রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। তাই অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বেশি পরিমাণ আমে ব্যাগিং করার সাহস পাচ্ছেন না তারা। নগরীর জিন্নানগরে ১০ হাজার খিরসাপাত ও ল্যাংড়া আমে ব্যাগিং করেছেন রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত রফতানিকারক কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তারপরেও উন্নত প্রযুক্তিতে নিরাপদ ও বালাইমুক্ত কিছু আম উৎপাদন করছি। বিদেশে পাঠাতে না পারলেও দেশেই যদি ঠিকমতো আম বাজারজাত করা যায় তাহলে হয়তো লোকসান হবে না। সে আশাতেই করছি। জানি না কী হবে! রাজশাহী জেলায় আম বাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টন। গত ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম নামানোর সময় শুরু হয়েছে। ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চালু হচ্ছে আজ ॥ আজ শুক্রবার ৫ জুন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকা রুটে চালু হচ্ছে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে আমসহ অন্যান্য পার্সেল পরিবহনের জন্য ট্রেনটি চালু করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী) ফুয়াদ হোসেন আনন্দ রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যখন ঢাকা যাবে তখন ট্রেনটির নাম হবে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন-২’। আর ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফেরার পথে নাম হবে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন-১’। ট্রেনটি সপ্তাহে প্রতিদিন চলাচল করবে। প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিকেল ৪টায় ছেড়ে আসবে। রাজশাহী পৌঁছাবে ৫টা ২০ মিনিটে। এখানে ৩০ মিনিট থেমে ৫টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করবে। এরপর ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ১টায়। ঢাকা থেকে ট্রেনটি রাত ২টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে আসবে। রাজশাহী পৌঁছাবে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে। এখানে ২০ মিনিট থেমে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। পৌঁছাবে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে। ট্রেনটিতে মোট ছয়টি ওয়াগন থাকবে। প্রতিটি ওয়াগনে ৪৫ হাজার কেজি আম নেয়া যাবে। তবে শুধু আম নয়, সকল প্রকার শাকসবজি, ফলমূল, ডিমসহ কৃষি পণ্য, বাড়ির ফার্নিচার এবং রেলওয়ের আইনে পার্সেল হিসেবে বহনযোগ্য সকল সামগ্রী বহন করা হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে এসে ট্রেনটি আমনূরা বাইপাস, কাঁকনহাট, রাজশাহী, সরদহ, আড়ানি ও আব্দুলপুর বাইপাস স্টেশনে থামবে। এসব স্থানে আমসহ পার্সেল পণ্য ট্রেনে তোলা হবে। টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, কালিয়াকৈর, জয়দেবপুর, টঙ্গী, বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও এবং কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনটি থামবে। ফেরার পথে ট্রেনটি তেজগাঁও, টঙ্গী, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, চাটমোহর এবং রাজশাহী স্টেশনে থামবে। তবে যাত্রাপথে কোথাও সাধারণ যাত্রী এ ট্রেনে তোলা হবে না। ট্রেনটিতে রাজশাহী স্টেশন থেকে এক কেজি আম ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁও বা কমলাপুরে নিতে খরচ পড়বে ১ টাকা ১৮ পয়সা। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এক কেজি আমের ভাড়া লাগবে ১ টাকা ৩০ পয়সা। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী ট্রেন ছাড়ার আগে যে কেউ তাদের মালামাল বুকিং দিতে পারবেন। সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিম রেলের কর্মকর্তা ফুয়াদ হোসেন আনন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগকালে চাষীদের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী থেকে এবারই প্রথম এ ধরনের ট্রেন চালু করা হচ্ছে। লকডাউনে বেশিরভাগ ট্রেন বন্ধ থাকায় ট্রাক যেমন ফাঁকা থাকছে তেমনই অনেক ইঞ্জিনও পড়ে আছে। তাই এটা সম্ভব। কিন্তু সব ট্রেন যখন চালু হবে কিংবা আমের মৌসুম শেষ হলে এটি চালানো সম্ভব হবে না।
×