ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলামোটরে বাসচাপায় দুজন নিহত, চালক গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ৫ জুন ২০২০

বাংলামোটরে বাসচাপায় দুজন নিহত, চালক গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও খোদ ঢাকাতেই বেপরোয়া বাস কেড়ে নিল তিন জনের প্রাণ। যার মধ্যে দুজন বাংলামোটরে নিহত হন। অপরজন সাভারের আশুলিয়ায়। বাংলামোটরের ঘটনায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক মোটরসাইকেল আরোহী ও এক পথচারীকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও একজন। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার অবস্থা গুরুতর। বাসটিসহ চালককে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটার দিকে রাজধানী ঢাকার বাংলামোটর ফুটওভারব্রিজের নিচের খুুব কাছে জহুরা মার্কেটের সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বরাত দিয়ে জানান, শাহবাগ থেকে বাংলামোটর সিগন্যাল পার হয়ে যাত্রীবাহী বিহঙ্গ পরিবহনের ঢাকা-মেট্রো-ব-১৪-১৯৯০ নম্বরের বাসটি মিরপুরের দিকে যাচ্ছিল। ওই সময় মগবাজারের দিক থেকে একটি মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে আসছিল এবং মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেল আরোহী আহত হন। এ অবস্থায় বাস চালক বাসটি ব্রেক কষলেও কাজ হয়নি। বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাথের পাশে থাকা একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলের এক আরোহীর মৃত্যু হয়। এরপর বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাথে উঠে যায়। ফুটপাথে থাকা এক পথচারীও বাসে চাপা পড়েন। ঘটনাস্থলেই তারও মৃত্যু হয়। এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার ঠিক উল্টোপাশে পূর্বদিকে থাকা বাংলামোটর ট্রাফিক বক্স থেকে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত সেখানে গিয়ে বাসটিসহ চালক জাফর মোল্লাকে (৫৫) আটক করে। শাহবাগ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই ) মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলেই নিহতদের একজনের নাম মোঃ বেলায়েত হোসেন (৫২)। তার বাড়ি বরিশাল জেলার মুলাদি উপজেলার চরলক্ষীপুর গ্রামে। তিনি বাংলামোটরেই থাকতেন। ভ্যানে বসানো হলার মেশিনে সরিষা ভাঙাতেন। সেই তেল ফেরি করে বিক্রি করতেন। নিহত অপর মোটরসাইকেল আরোহী মাকসুদুর রহমান (৪২)। তিনি একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে মাকসুদুর রহমানের লাশ শনাক্ত করেন তার শ্যালক তোফাজ্জল হোসেন। তিনি জানান, মাকসুদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায়। তিনি রাজধানীর মালিবাগে থাকতেন। একটি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার পিতার নাম আবু আসাদ মিয়া। শাহবাগ মডেল থানার ওসি মোঃ আবুল হাসান জানান, দুর্ঘটনায় আহত রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মোঃ জাকির হোসেনকে (৪৫) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার অবস্থাও গুরুতর। জাকির হোসেন জানান, শান্তিনগর এলাকা থেকে তিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। বাংলামোটর এলাকায় বিহঙ্গ পরিবহনের বাসটি তাকে প্রথমে ধাক্কা দেয়। তিনি ছিটকে পড়ে যান। এর পর বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা আরেকটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে সাভারের আশুলিয়ার ঘোষবাগে যাত্রীবাহী বাস চাপায় জুয়েল (৩৫) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) টুম্পা জানান, ক্লাসিক পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের চাপায় জুয়েলের মৃত্যু হয়। জুয়েলের বাড়ি খুলনার দিঘুলিয়া উপজেলার মাঝিরঘাট গ্রামে। তার পিতার নাম বাদশা মিয়া। তিনি আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় মার্চেন্টডাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রসঙ্গত, মাত্র কয়েক মাস আগে একই জায়গায় যাত্রীবাহী বাস চাপায় বিআইডব্লিউটিএ-এর এক নারী কর্মকর্তা মারাত্মকভাবে আহত হন। করোনা ভাইরাসের মধ্যে দীর্ঘদিন দেশে অঘোষিত লকডাউন চলছিল। সীমিত পরিসরে শর্তসাপেক্ষে আবার সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল শুরুর দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল। যাত্রীদের ভাড়াসহ নানা কারণ নিয়ে দেনদরবারের পর শেষ পর্যন্ত গত ১ জুন থেকে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়।
×