ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণ তহবিলে অনুদান গ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রী

করোনা থেকে মানুষকে রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করছি

প্রকাশিত: ২২:৪১, ৫ জুন ২০২০

করোনা থেকে মানুষকে রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করছি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাস থেকে মানুষের জীবন সুরক্ষিত এবং অর্থনীতি সচল রাখতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেছেন, করোনা ভাইরাস থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। চেষ্টা করে যাচ্ছি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করা, অর্থনৈতিক কর্মকা- সচল করা, তাদের সামাজিক নিরাপত্তা দেয়া- সব দিক থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনা মোকাবেলা করে দেশ এগিয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান গ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে অনুদান গ্রহণ করেন তাঁর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। এসময় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের কিছু কিছু সেক্টর উন্মুক্ত করা প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু অর্থনীতি একেবারে স্থবির অবস্থায় রয়েছে, তাই আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখন উন্মুক্ত করছি। কারণ মানুষকে আমাদের তো বাঁচাতে হবে। এই কর্মকা-গুলো না করলে, আমরা কতটা সহযোগিতা করব। তারপরও আমি বলব, এই ক’মাস এদেশে প্রায় প্রতিস্তরের মানুষকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি, আমাদের দলের পক্ষ থেকে করেছি। অনেক বিত্তশালী তাঁরাও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এই আন্তরিকতাটুকু আছে বলেই এখনও তারা খেতে পারছে বা চলতে পারছে। এই সহানুভূতিটুকু মানুষ দেখাতে পারছে। তিনি বলেন, চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রত্যেক শ্রেণী-পেশার মানুষ সবার কাছে যেন আমরা কিছু না কিছু সহযোগিতা পৌঁছাতে পারি। যেন তারা কষ্ট না পায়। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চিকিৎসাসেবা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, চিকিৎসাসেবা আমরা ব্যাপকভাবে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি এবং আমরা দিয়ে যাচ্ছি। বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। করোনা ভাইরাস টেস্ট করা বা চিকিৎসা করা বেশ ব্যয়বহুল। তারপরও আমরা সেটা করে যাচ্ছি। এভাবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। অর্থনীতি সচল রাখতে নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকা- যাতে চলে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের শিল্প থেকে শুরু করে সর্বস্তরের সবাই যেন তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে তার জন্য বিশেষ প্রণোদনাও আমরা দিচ্ছি। জিডিপি’র প্রায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৩/৪ মাস ধরে আমাদের অর্থনীতি একেবারে স্থবির। তারপরও আমরা অন্তত মানুষের কথা চিন্তা করে, মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কাজ করে যাচ্ছি। এটা মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। সব সময় জনগণের কল্যাণেই আমরা কাজ করি। প্রায় এক কোটি তালিকাভুক্ত লোককে খাদ্য সহায়তা প্রদানে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনা পয়সায় খাদ্যের ব্যবস্থা যেমন করেছি, আবার একটু যাদের অবস্থা ভাল কিনতে চান তাঁদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে আমরা চাল সরবরাহ করছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে আমরা যখন নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করি তখন বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। আজকে আমি বলব সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করতে পেরেছি বলেই আমাদের অনেক কাজ সহজ হয়েছে। উদাহরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করতে পেরেছি বলেই আমাদের অনেক কাজ সহজ হয়েছে। যেমন মানুষকে সহযোগিতা দেয়া, তাদের কাছে নগদ টাকা পৌঁছানো, তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া বা ঘরে বসে চিকিৎসা পরামর্শ যাতে পেতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা, ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো, ক্রয়-বিক্রয়,আত্মীয়-স্বজন বা আপনজনের সঙ্গে কথা বলা, দেখাসাক্ষাত, চিকিৎসা সেবা, অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে আমরা করে যাচ্ছি। সরকারপ্রধান আরও বলেন, আমরা যদি এই ডিজিটাল বাংলাদেশ না করতাম বা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যদি উৎক্ষেপণ না করতাম এবং বাংলাদেশটা যদি একটা নেটওয়ার্কের মধ্যে না আসত তাহলে হয়ত কাজগুলো করা সম্ভব হতো না। সকলের সহযোগিতায় তাঁর সরকার ও দেশবাসী এই দুঃসময় কাটিতে উঠতে পারবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশ অবশ্যই এই অদৃশ্য শত্রুর (করোনা ভাইরাস) বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে পারব। দেশবাসীর উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়ে বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, করোনা ভাইরাসের হাত থেকে যেন আমরা মুক্তি পাই। আর যাঁরা অনুদান দিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। করোনায় যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাঁর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে আরও ২৪ সরকারী, বেসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং চার ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদান গ্রহণ করেন। তাঁর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন। যেসব সংস্থা এবং ব্যক্তিবর্গ অনুদান দিয়েছে- মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন কর্তৃপক্ষ, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এ্যাসোসিয়েশন, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, লংকা-বাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড, উত্তরা ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, জিএমএস টেক্সটাইল লিমিটেড, বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজ, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আলিবাবা এ্যান্ড জ্যাক মা ফাউন্ডেশন, ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিস, সৎসঙ্ঘ হেমায়েতপুর, পাবনা এবং পিপিএস পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোহাম্মাদ শাহাবুদ্দিন চুপ্পু, গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ রাফা ইসলাম, বারডেমের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সোনিয়া জেমিন প্রিত এবং জেড এইচ শিকদার মেডিক্যাল কলেজের প্রভাষক ডাঃ সাদিয়া আহমেদও অনুদান প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
×