ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুদিন আসবেই-

প্রকাশিত: ২০:৩২, ৫ জুন ২০২০

সুদিন আসবেই-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও দৃঢ়বিশ্বাসে এবং আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে দেশবাসীকে আশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেন এই বলে যে, দুর্যোগ কেটে যাবে। সুদিন আসবেই। প্রায় আড়াই মাস পরে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) ভার্চুয়াল সভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এর মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের ভার্চুয়াল সভাও হয়েছে আসন্ন জাতীয় বাজেট প্রণয়নের নিমিত্ত। এর সরলার্থ হলো, সরকার কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সারাদেশ কার্যত লকডাউনে রাখলেও নিয়মিত দাফতরিক কাজগুলো চালিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর, যাতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে, সচল ও গতিশীল থাকে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির চাকা। বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো মানবকল্যাণ এবং দারিদ্র্য নিরসন। করোনা মহামারীর কারণে আপাতত সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কিছু বাড়লেও এবং দারিদ্র্য হার নিরসনের গতি কিছুটা শ্লথ হলেও সরকার জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর ও সঙ্কল্পবদ্ধ। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সর্বস্তরের জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল ও জীবনযাপনের অনুরোধ জানিয়েছেন করোনা মোকাবেলায়। করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতি ও সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই সজাগ ও সচেতন থেকেছেন এবং তদনুযায়ী পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সময় সময়। এরই ধারাবাহিকতায় সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে প্রধানমন্ত্রী কিছু প্যাকেজও ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ছয় মাস পর্যন্ত প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য ও আর্থিক প্রণোদনা দুর্গতদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়া; দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি; টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি, ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ প্রণোদনা ইত্যাদি। প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে, এক্ষেত্রে আদৌ কোন দুর্নীতি-অনিয়ম সহ্য করা হবে না। বরং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হয়েছেও। দেশে কেউ অভুক্ত থাকবে না। খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে এবং যাবতীয় প্রণোদনা দেয়া হবে কৃষকদের। বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতি নিয়ে ইতোপূর্বে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছিলেন আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা। বিশ্ব মন্দার সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস, যা বর্তমানে চিহ্নিত কোভিড-১৯ নামে। চীনের উহানে উদ্ভূত এই মারাত্মক ভাইরাসটি এর মধ্যে আক্রমণ করেছে প্রায় সমগ্র বিশ্বকে, যা থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি বাংলাদেশও। চীন একটি অত্যন্ত উচ্চ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ, যার ওপর বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। তবে চীন বাংলাদেশকে বলেছে যে, তারা পদ্মা সেতু, পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্রসহ মেগা প্রকল্পগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন করবে। সে অবস্থায় সর্বশক্তি নিয়ে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে জাতীয় অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পুনরুদ্ধারে। এই সঙ্কটেও বাংলাদেশের যেটি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে তা হলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তরিতরকারি, শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস, দুধ, পোলট্রিতেও বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ তো দূরের কথা, খাদ্য সঙ্কটেরও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এখন দরকার নিয়মিত বাজার তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় প্রশাসন সেদিকে দৃষ্টি রাখছে প্রতিনিয়ত। প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সেই আত্মবিশ্বাসই প্রতিফলিত হয়েছে, যেটি সাহস ও শক্তি জোগাবে সাধারণ মানুষ এবং কৃষককে। সামনে সুদিন আসবেই। করোনা মহামারীর অমানিশা কেটে গিয়ে দেখা দেবে সূর্যোদয়।
×