ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশ আইনের কার্যকর প্রয়োগের আহ্বান টিআইবির

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ৪ জুন ২০২০

পরিবেশ আইনের কার্যকর প্রয়োগের আহ্বান টিআইবির

অনলাইন রিপোর্টার ॥ বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন তথা সার্বিকভাবে প্রাণ, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য-পরিবেশের সুরক্ষার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা, বিশেষ করে পরিবেশ আইনের কার্যকর প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস সামনে রেখে সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বৃহস্পতিবার (৪ জুন) প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এ আহ্বান জানায়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় বিদ্যমান আইনি কাঠামোর যথাযথ প্রয়োগে ঘাটতির কারণে জীববৈচিত্র্য যেমন লোপ পাচ্ছে, তেমনি পরিবেশ দূষণ আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। ‘পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ঘাটতি, বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দেশি-বিদেশি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীদের প্রভাব-নির্ভর সিদ্ধান্ত, দুর্বল তদারকি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য ব্যাপক ঝুঁকির কবলে পড়েছে। বন ও জলাশয় দখল বেড়েছে; প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ক্রামাগত চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি, পানি ও বায়ু দূষিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪ লাখ ১৬ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। যার মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১ হেক্টর বনভূমি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবং ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি জবরদখলের শিকার। ‘ক্রমবর্ধমান ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বনভূমি ধ্বংসের কারণে ইতোমধ্যে বন্যপ্রাণীর ৩৯টি প্রজাতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ আরো প্রায় ৩০টি প্রজাতির অস্তিত্ব মারাত্মক সংকটে রয়েছে। বনকেন্দ্রিক জীবনচক্র ও বাস্তুসংস্থানের জন্য যা অশনিসংকেত। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরামর্শ এবং প্রতিবাদ উপেক্ষা করে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের সন্নিকটে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অন্যতম নিয়ামক এ প্রাকৃতিক রক্ষাকবচকে স্থায়ীভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে। অথচ সুন্দরবন যেমন সমৃদ্ধ জীবজগতকে ধারণ করে প্রাণ ও প্রকৃতির রসদ যোগাচ্ছে, তেমনি সাম্প্রতিককালে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ফনীসহ সবশেষ আম্পানের তাণ্ডব থেকে উপকূলের অজস্র মানুষের জীবন ও জীবিকাকে সুরক্ষা দিয়েছে। আমাদের একটাই সুন্দরবন। এই সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে-উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা- বিশেষ করে সুন্দরবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলার কারণে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। সুন্দরবনসহ অন্য পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ও নির্মাণাধীনসহ সব শিল্প-কারখানা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষা প্রদানকারী বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে পরিবেশ আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
×