ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চালু রয়েছে বিনামূল্যে আম পরিবহনে কৃষকবন্ধু ডাক সেবা

ঢাকাগামী ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ চালু হচ্ছে আগামীকাল

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ৪ জুন ২০২০

ঢাকাগামী ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ চালু হচ্ছে আগামীকাল

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুমিষ্ট আম পরিবহনে এবার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে চাষী পর্যায়ে বিনামূল্যে আম পরিবহনে কৃষকবন্ধু ডাক সেবা চালু করা হয়েছে। আগামী শুক্রবার থেকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ঢাকায় পরিবহনের জন্য চালু হতে যাচ্ছে স্পেশাল ম্যাঙ্গো ট্রেন। খুব কম খরছে চাষী ও ব্যবসায়ীরা ট্রেনের মাধ্যমে ঢাকায় নিে পারবেন আম। এ নিয়ে আনন্দিত এখন উত্তরের আম উৎপাদনকারী জেলা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষী ও ব্যবসায়ীরা। সরকারের এ পদক্ষেপকে তারা যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করেছেন। চলমান করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে এবারই প্রথম রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রেনে আম যাবে ঢাকা। শুক্রবার (৫ জুন) রহনপুর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী হয়ে আম নিয়ে দুটি পার্সেল ট্রেন ঢাকার পথে চলাচল করবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিতে কেজিপ্রতি আমের ভাড়া লাগবে এক টাকা ৩০ পয়সা। আর রাজশাহী থেকে ভাড়া পড়বে কেজিপ্রতি মাত্র এক টাকা ১৭ পয়সা। এত কম খরচে আম পরিবহন আগে দেখেনি কেউ। তাই সরকারের এ পদক্ষেপে খুশি এ অঞ্চলের আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহীর আমবাহী বিশেষ পার্সেল ট্রেন ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ১ ও ২’ ট্রেন দুটি সপ্তাহের প্রতিদিন চলাচল করবে। আমের পাশাপাশি সব ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল, ডিমসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্যও এতে পরিবহন করা হবে। রাজধানী ঢাকায় পৌঁছানোর পর ব্যবসায়ীদের সুবিধামতো স্টেশনে ট্রেন থামানো হবে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) ফুয়াদ হোসেন আনন্দ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বধুবার জনকণ্ঠকে বলেন, এর আগে কখনও ট্রেনে এভাবে আম ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আম চাষীদের সুবিধার্থে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল-২’ ট্রেনটি সপ্তাহে প্রতিদিন চলাচল করবে। তিনি বলেন, ট্রেনটি প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিকেল ৪টায় এবং রাজশাহী থেকে বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে ছাড়বে এবং ঢাকায় পৌঁছবে রাত ১টায়। অন্যদিকে, ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল-১’ ট্রেনটি প্রতিদিন ঢাকা থেকে রাত ২টা ১৫ মিনিটে ছাড়বে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌঁছবে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে। এর আগে করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আম, লিচু ও অন্যান্য মৌসুমি ফল বিপণন এবং কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ বিষয়ে গত ১৬ মে ভিডিও কনফারেন্সে চাষী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। সেদিনই ট্রেনে আম পরিবহনের কথা ওঠে। এর পর রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী আম সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ নিয়ে গত ২০ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আম পরিবহনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রেন চলাচলের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে, আমের রাজধানী রাজশাহী থেকে বিনা ভাড়ায় আম পরিবহন কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই আম পরিবহন সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ‘জুম এক্সপ্রেস’র মাধ্যমে আম পরিবহনের এ বিশেষ সেবা উদ্বোধন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে ঢাকা থেকে আম পরিবহন সার্ভিসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন, ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আম চাষীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ডাক বিভাগের ট্রাকে বিনামূল্যে ঢাকায় আম পরিবহন করা হবে। ডাক বিভাগের ‘জুম এক্সপ্রেস’র মাধ্যমে আম পরিবহনের এ বিশেষ সেবা চালু হওয়ায় চাষীরা খুশি। তারা বলছেন, এমন সুবিধা-যুযোগ তারা আগে কখন ভাবেননি। এদিকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাগঞ্জের বাজারে আম উঠলেও কেনাবেচা তেমন জমেনি। গত ১৫ মে থেকে এ অঞ্চলে আম নামানোর সময় শুরু হলেও মূলত ৩০ মে থেকে শুরু হয়েছে আমের বাজার। আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় শুরুতেই আম পাড়েননি চাষীরা। তবে গত শুক্রবার থেকে রাজশাহী ও বিভিন্ন উপজেলার চাষীরা গাছ থেকে আম পাড়া শুরু করেছেন। আগামী ক’দিনে প্রত্যাশিত দাম পাওয়ারও আশা করছেন তারা। চাষীরা বলছেন রাজশাহীর আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়া শুরু হলেই দাম ভাল পাবেন তারা। এক সপ্তাহের মধ্যে রাজশাহীর আমের হাটবাজার জমে উঠবে বলেও আশা করছেন আম ব্যবসায়ী ও চাষীরা। এ অবস্থায় ভাল খবর দিয়েছ রেলওয়ে। আগামী ৫ জুন রহনপুর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী হয়ে আমের প্রথম চালান নিয়ে ঢাকার পথে রওনা দেবে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন। সম্প্রতি আঘাত হানা সুপার সাইক্লোন আমপান, এর পর কালবোশাখির তা-ব। একের পর এক ঝড়ে ঝরে পড়ছে আম। এতে চিন্তিত ছিলেন বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের আম বাগানের মালিকরা। তবে সব মিলিয়ে আম পরিবহনের খবরে এখন উদ্বেলিত তারা। বাগানের মালিকরা বলছেন, তারা এমনিতেই করোনা ভাইরাসের কারণে আম বাজারজাতকরণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এখন কৃষকবন্ধু ডাক সেবা ও স্পেশাল ম্যাঙ্গো ট্রেন চালুর খবরে তাদের দুশ্চিন্তা অনেকটা কেটে গেছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসন থেকে প্রথম দফায় ১৫ মে রাজশাহীতে দেশীয় জাতের গুটি আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০ মে থেকে গোপালভোগ আম পাড়া শুরুর কথা ছিল। ৬ জুন আ¤্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন, আশ্বীনা ১০ জুলাই থেকে পাড়া শুরু হবে বলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমপাড়া শুরু করার পর রাজশাহীর হাটবাজারগুলোর আড়ৎ ঢেলে সাজানো হয়েছে। উপজেলার পাশাপাশি রাজশাহী নগরীর আড়ৎদাররাও তাদের বন্ধ থাকা আড়ৎ খুলতে শুরু করেছেন। আড়ৎ খোলার পর বিভিন্ন জায়গায় আম পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। একই সঙ্গে আড়ৎদাররা কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গেও যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। দূর- দূরান্তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চলছে আলাপ-আলোচনা। বলা যায় বাইরে আম রফতানির জন্য চলছে জোর প্রস্তুতি। তবে এখন পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ আম দেখা না গেলেও দামের দিক থেকে ব্যবসায়ীরা হতাশ। রাজশাহীর বড় আমেরহাট বানেশ^রে ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে এলেও দাম পাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় হাট বানেশ্বরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশীয় জাতের আঁটি আম ৭ শ’ থেকে ৯ শ’ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। গোপালভোগ ১২ শ’ থেকে ১৫ শ’ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে হচ্ছে। এ জাতীয় প্রায় সব আমের দাম একই। ব্যবসায়ীরা বলছেন সামনে সপ্তাহের মধ্যে আম বাজারে উঠতে শুরু করবে। এদিকে দেশের বৃহত্তম চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আমবাজার ও গোমস্তাপুরে পরিপক্ব আম আনুষ্ঠানিকভাবে কেনাবেচার উদ্বোধন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ও গোমস্তাপুরের রহনপুর স্টেশন বাজার এলাকার আমবাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে আম কেনাবেচার উদ্বোধন করা হয়। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজারে আম ক্রয়-বিক্রির অনুমোদন ও ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গোপালভোগসহ গুটি আম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বছর আমের ব্যবসা শুরু হলো। স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাঃ সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল গাছ থেকে কয়েকটি আম পেড়ে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। করোনার প্রাদুর্ভাবে বহিরাগত আম ব্যবসায়ীদের থাকার কথা ভেবে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ৮টি আবাসিক হোটেলকে নির্ধারণ করেছে। শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন জানায়, বহিরাগত আম ব্যবসায়ীরা এলোমেলোভাবে অন্য কোন হোটেলে থাকতে পারবেন না। যদি ওই হোটেলগুলোতে সংকুলান না হয় তাহলে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে।
×