ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ২৩:০১, ৪ জুন ২০২০

কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব শহরে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে বুধবার জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। এছাড়া ফ্লয়েডে হত্যার ঘটনায় শুরু হওয়া প্রতিবাদ সীমান্ত পেরিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ইউরোপের বেশ কিছু শহরে বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী হত্যার প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছে চীন ও ইরান। বেজিং বলেছে, বর্ণবাদ যুক্তরাষ্ট্রে যে ‘জটিল ব্যাধি’ সেটাই দেখিয়েছে এই বিক্ষোভ। এদিকে মিনিয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজতে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান বিক্ষোভের প্রতি দেশটির বেশিরভাগ মানুষের সহানুভূতি আছে বলে এক জরিপে দেখা গেছে। বিক্ষোভ মোকাবেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিনীর অনাস্থার তথ্যও এতে উঠে এসেছে। খবর সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স ও তাসের। বিক্ষোভে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে শিকাগো, ডেট্রয়েট, ওমাহা, ডেভেনপোর্ট, ওকল্যান্ড, ল্যুইভিলের বাসিন্দা রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই আফ্রিকান আমেরিকান। ওকল্যান্ডে ফেডারেল প্রোটেকটিভ সার্ভিস অফিসার কৃষ্ণাঙ্গ ডেভ প্যাট্রিক আন্ডারউড (৫৩) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ সময় আরেকজন অফিসার গুরুতর আহত হন। ওমাহায় কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ জেমস স্কারলক (২২) নিহত হয়েছেন। তিনি ও তার দল একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিকে মারধর করছিলেন। সে সময় ওই ব্যক্তি স্কারলককে লক্ষ্য করে গুলি করলে তার মৃত্যু হয়। বিক্ষোভে সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক শ’ মানুষ আহত হলেও তাদের সঠিক সংখ্যা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংবাদমাধ্যম এপির তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকদিনের বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় চার হাজার চার শ’ মানুষকে আটক করা হয়। তাদের বেশিরভাগই লুট, কার্ফু ভঙ্গ ও সড়কে ব্যারিকেড দেয়ার অপরাধে আটক হয়েছেন। বিক্ষোভ দমনে ওয়াশিংটন, লস এঞ্জেলেস, নিউইয়র্কসহ ৪০-এর বেশি শহরে কার্ফু জারি করা হয়েছে। ২৫ মে মিনিয়াপোলিসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শোভিনের (৪৪) হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের (৪৬) মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মিনিয়াপোলিসসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহরে পুলিশী সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের এক কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরে রেখেছেন। এ সময় ফ্লয়েড বলেছেন, ‘প্লিজ, আমি শ্বাস নিতে পারছি না’, ‘আমাকে মারবেন না।’ ফ্লয়েডের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ২০ ডলারের একটি জালনোট ব্যবহার করেছিলেন। তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের গাড়িতে নেয়ার আগে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, হাতকড়া পরাতে বাধা দিচ্ছিলেন তিনি। পুলিশের সঙ্গে ফ্লয়েড কিভাবে সংঘর্ষে জড়ালেন তা ভিডিওতে দেখা যায়নি। ঘটনায় নিরস্ত্র ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু রাখা শোভিনসহ চারজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগে শোভিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মার্কিন জনসমর্থন বিক্ষোভের পক্ষে ॥ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও জরিপ সংস্থা ইপসোসের করা এক যৌথ জরিপের ফল মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার চালানো রয়টার্স ও ইপসোসের জরিপে অংশ নেয়া ৬৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনী জানিয়েছেন, তারা জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল। ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে দেশে দেশে বিক্ষোভ ॥ জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনের বাসিন্দা ফ্লয়েডকে গত সোমবার আটক করে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরের পুলিশ। আটকের পর ফ্লয়েডের ঘাড় হাঁটু দিয়ে সড়কে চেপে ধরলে তিনি মারা যান। তার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে পুরো যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানিয়ে ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে জড়ো হন শত শত বিক্ষোভকারী। তারা ‘যেখানে বিচার নেই, যেখানে শান্তি নেই’ বলে স্লোগান দেন। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ব্রিটেনের হাউস অব পার্লামেন্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় তারা ‘জর্জ ফ্লয়েড হত্যার বিচার চাই’, ‘আমাদের হত্যা বন্ধ করো’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। করোনাভাইরাসের কারণে আরোপিত লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন এবং পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ওই দূতাবাসের বাইরে থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
×