ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ॥ কাদের

প্রকাশিত: ২৩:০০, ৪ জুন ২০২০

বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার সংসদ ভবনের বাসা থেকে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে একথা বলেন মন্ত্রী। এ সময় তিনি চলমান করোনা সঙ্কট, মেট্রো রেলের অগ্রগতি বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে সচেতনতার প্রাচীর গড়ে তোলার জন্য আমি আবারও সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। না হলে জনস্বার্থে সরকার আবারও কড়াকড়ি আরোপ তথা কঠোর হতে বাধ্য হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে দলীয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো প্রতিপালন এবং মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। নেতাকর্মীরা নিজেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন এবং জনগণকে সচেতন করবেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের করোনা সংক্রমণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে’। করোনা মোকাবেলায় শেখ হাসিনা সরকারের সাহসী মানবিক এবং উদ্যমী প্রয়াস দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে কাদের বলেন, কিন্তু দুঃখজনক হলেও কিছু কিছু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে শৈথিল্য প্রদর্শন করছে। যা সংক্রমণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, মৃত্যুর হারও ক্রমেই বাড়ছে। এ অবহেলা নিজের জন্যই শুধু নয়, পরিবার সমাজ তথা অন্যদের জন্য ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। ঐক্যবদ্ধ সাহসী ও মানবিক প্রয়াস সঙ্কট উত্তরণের পথ সুগম করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলকে সরকারকে সহায়তা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু একটি দল সার্কাসের হাতির মতো সমালোচনার বৃত্তেই আবর্তিত হচ্ছে। সেই দলটি বিএনপি। তারা সঙ্কটকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। এটা তাদের কার্যক্রমে ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। মন্ত্রী বলেন, ক্রম অবনতিশীল এ পরিস্থিতিতে সরকার সংক্রমিত এলাকা এবং নানান দিক বিবেচনা নিয়ে এলাকাভিত্তিক জোনে বিভক্ত করার বিষয়টি ভাবছে। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে কাজ করছেন। কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। গণপরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে তিনি বলেন, অধিকাংশ গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। আবার বেশ কিছু অভিযোগ আমরা পাচ্ছি। আমি প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ করেছি। তিনি বলেন, গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইতোমধ্যে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মালিক-শ্রমিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিআরটিএ’কে নির্দেশনা দিচ্ছি। দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ৩১ মে থেকে অফিস খোলার পাশাপাশি চালু হয়েছে গণপরিবহন। সর্বোচ্চ সংক্রমণের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক করে দেয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা চলছে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কতটুকু স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে এ প্রশ্ন রয়েই গেছে। মেট্রো রেলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়েকালে সড়কমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের গতি আরও বাড়াতে চান। ওবায়দুল কাদের বলেন, ৬টি রুটে মেট্রোরেল সমন্বয়ে ৬৭ কিলোমিটার এবং ৬১ কিলোমিটার পাতালসহ ১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেল নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ করছে। এ লক্ষ্যে ২০২০, ২০৩০ সালের মধ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে জনসম্পৃক্ত এলাকায় কাজ না হলেও ডিপো এলাকার শহরের ওপর রেললাইন স্থাপনের কাজ অব্যাহত ছিল। সেজন্য আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি প্রথম শ্রেণীর মানসম্পন্ন হয়েছে। জাপানে আরও চারটি ট্রেন সেটের কাজ চলছে। চলমান পরিস্থিতির উন্নতি হলে ট্রেনগুলো দেশে আনা হবে। এই মাসে মেট্রো স্টেশন এবং স্টিল স্ট্রাকচারের কাজ চলমান রয়েছে গাজীপুরে। তিনি বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতির সময় কাজে লাগাতে মেট্রোরেল রুট ডিজাইনের কাজ চলমান রয়েছে জেনে আমার ভাল লাগছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের পরিধি বাড়াতে আমি প্রকল্প সংশ্লিদের অনুরোধ করছি। কর্মরত জনবল স্বাস্থ্যবিধি প্রতি পালনের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজের পুরোদমে সম্পৃক্ত করে কাজ এগিয়ে যেতে হবে। কাদের বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। এখন আমাদের সামনে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার যুক্ত হয়েছে নতুন চ্যালেঞ্জ। জনগণের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে না। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব স্বাস্থ্যবিধি হবে প্রতিপালন করে চলমান কাজে আপনারা ফিরে আসবেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু পরিবহনের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সরকারী নির্দেশনা অমান্যকারী এ সকল পরিবহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে মেট্টোরেল রুট-৬ এর নির্মাণ কাজ শতকরা পঁয়তাল্লিশ ভাগ শেষ হয়েছে। মন্ত্রী প্রকল্পের চলমান কাজ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে আরও গতিশীল করার নির্দেশ দেন। তিনি এ সময় প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন যথাসময়ে পরিশোধের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ইতোমধ্যে একসেট ট্রেনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে জাপানে। আরও চারটি সেটের নির্মাণ কাজ চলছে। ভিডিও কনফারেন্সে মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা সরকার সঙ্কটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে নিরলস। তিনি সকলকে সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ গৃহ এবং কর্মস্থলকে সচেতনতার দুর্গে রূপান্তরের আহ্বান জানান। ভিডিও কনফারেন্সের অন্য প্রান্তে ইস্কাটনের ডিএমটিসিএল কার্যালয়ে এ সময় অন্যদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিকসহ প্রকল্প পরিচালক এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
×